আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প ||| মেঘলা রোদে বৃষ্টি জল

আহসান জামান

সাপ্তাহিক ছুটির দিন; একটু দেরীতেই শুরু হয় সব - ঘুম থেকে উঠা, সকালের নাস্তা। তারপর শুরু হয় স্বাভাবিক কাজ। বাজার করা, কাপড় পরিষ্কার, ভাঁজ করা, এটা ওটা ধোঁয়ামোছা ইত্যাদি আর ইত্যাদি। কাজের কোনো শেষ নেই। কিন্তু আজ একটু ব্যতিক্রম ঘটে গেছে হঠাৎ, তাহেরের বেফাঁস মন্তব্যটাই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ালো।

পারুল সুযোগ বুঝেই চেপে ধরলো তাহেরকে। অবশ্য একটু আগেও বেশ ছিলো, পারুল পরেটা বানানোর সময় গুন গুন করে গান করছিলো। তাহের সুযোগ বুঝে সিডিটা বাড়িয়ে দিলো। মেয়েরা এক এক করে নেমে এলো। কাজ আর গানের মাঝে মাঝে বাজারের ফর্দ্দ তৈরী হচ্ছিলও বেশ - এটা কেনা ওটা শেষ, মেয়েদের স্কুল টিফিন মেনু।

তাহেরও মনোযোগে লিখছিলো। তাদের কথার ঝড়, মেয়েদের খেলা হাসাহাসি বেশ ভরে উঠেছিলো ঘরটা। তার রেশ কাটতে না কাটতেই বেঁধে গেলো এই গিট্টু। ইতিমধ্যেই নাস্তাও শেষ হয়েছে এসেছে। যাকে বলে চায়ের কাপে ঝড়।

পারুল যে কোন কথায় রাগে আর কোন কথায় হাসে তাহের সবসময় তা হিসাব করে উঠে পারে না। তাহেরের চা খাওয়া ডগে উঠলো। তাহেরও প্রচন্ড রেগে আছে, পারুল আজকাল রাগের কোনো বিষয়ই লাগে না। নেহাত অনেকদিনের সংসার নতুবা কি যে হত ... তাহের ভাবতে ভাবতে যেন বহুদূর যাচ্ছে; নিজকে সামলে নিয়ে বলে, ঠিক আছে অনেক হলো এবার থামা যাক। চলো বাজারে যাই।

পারুল থামে না। তাহের এবার বলেই ফেললো ঃ একদম চুপ! আর একবারও চেঁচাবে না। তোমার অনেক কথাই শুনেছি। ঃ হা; কি করবে শুনি। মারবে তো, বাঙ্গালী পুরুষেরতো ও একটাই গুন আছে, বৌ পিটানো।

তাহের একেবারে নিভে এলো। পারুল কী করে বলল এই কথা। তাহেরতো সেধরনের লোক না। বরং পারুলও ভালোভাবে জানে তাহের খুব অপছন্দ করে এইসবকিছুর। মেয়েরাও চলে গেছে তাদের ঘরে।

এযেনো নিত্য ব্যাপার। তাদের মাথা ব্যথা নেই। আর না থাকাই ভালো। তাহের গুছিয়ে নিলো নিজকে। ঃ চলো, বাজারে যাই।

পারুল আর কিছুতেই যাবে না। একেবারে বেকে বসলো। চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে অগত্যা মেয়েদের ডাকলো। কে কে যাবে বাজারে। মেয়েরাও যেতে চাইলো না।

ফলে তাহেরর একাই প্রস্তান। বাজারফর্দ্দ হাতে বের হয়ে পড়ল। সকালটাই তার কাছেই কেমন নিভে এলো। বাজার থেকে দু'একবার কল করেছে তাহের কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। তাহের খুব সতর্কভাবেই বাজার করছে আজ।

কোথাও যেন কোনো খুঁদ না থাকে। অবশ্য তাহের বাজার বেশ বুঝেশুনে করে - কার কি পছন্দ, কে কি খায়, পারুলের জন্য কি নিতে হবে সব দিকে খেয়াল থাকে তার। ঘন্টা দু'য়েক লাগে বাজারে। আজ আর বেশী দেরী না করে সে সরাসরি বাড়ীতে এলো। পারুল তখন রান্নার আয়োজন করছে।

ঘরে ঢুকেই শুনতে পেলো ওদিকে মেয়েদের দৌড়ঝাপ। তাহের এক এক করে বাজার ঘরে আনলো। ফ্রিজে সাজানো শুরু করল সে নিজেই। পারুলও হাত দিলো তাতে। তাহের মিটমিট করে হাসছে।

পারুল মুখ অন্যদিকে সরিয়েই বলল কোনো লাভ নেই। তাহের জোরে হেসে উঠলো। বাবার কন্ঠস্বর শুনে মেয়েরা ছুটে এলো। এব্যাগ খুলে ওব্যাগ খুলে এটা ওটা টেনে বের করলো। পারুলের কাজের মনোযোগ বেড়ে গেছে।

গলায় আবারও গানের গুন গুন, তাহেরের জিভে চায়ের লোভ জেগে উঠছে কিন্তু বলতেও বলল না আর। একটু পরে পারুলই চট করে বলল চা করে দেই। তাহের হেসেই বলল, ঠিক আছে। তাহের হাতমুখ ধুয়ে এলো। পারুল চা হাতে নিয়ে এলো।

চা মুখে দিয়ে বাজারের গল্প, এটার ওটার দাম নিয়ে আলোচনা; এমনিতে সংসারের নানা গল্প। পারুলের মুখে তখন কথার খৈ। তাহেরের কাছে বেশ লাগছে দিনটা। দুপুরের খাওয়াও শেষ। বিকেলে মেয়েদর নিয়ে পার্কে যায় খেলতে সবাই।

ঘরে ফিরে গোছলে গেলো তারা। মেয়েদের চুল বেঁধে দিলো মা। সন্ধ্যার চা শেষ করল তাহের। মেয়েরা স্কুলের পড়া নিয়ে ব্যস্ত, পারুল তাদের সাথে লেগে আছে। তাহের কিছু কাগজপত্র নিয়ে কী যেন হিসাব-নিকেশে বসে গেছে, বেশ মনোযোগী সে।

পড়া শেষে পারুল রান্নাঘরে রাতের খাওয়া গরম করতে গেলো, তাহেরও টেবিলে এটা ওটা আনছে। গল্পগুজবসহ ডিনার শেষ হল। মেয়েরা আর বেশীক্ষণ জাগতে পারে না, বিছানায় চলে যায়। আজ রাতেও তারা ব্রাশ করে বেডে গেলো। তাহের তার কাজের ব্যাগ গুছিয়ে নিল।

টিভিতে খবর দেখছে তাহের। পারুল তাড়াহুড়ো রান্নাঘর পরিষ্কার করে সেও তাহেরের পাশে এসে বসল। ঃ তোমার কাল সকালে একটা মিটিং আছে, মনে আছে তো। ঃ হুম, ডকুমেন্ট শেষ। ঃ চল, শুয়ে পড়ে।

ঃ হ্যা, তাই চল; বড্ড ক্লান্ত লাগছে আজ। আজতো আর কম দখল গেলো না আমার উপর। পারুল হেসে হেসে বলল ঠিক আছে বাবা সরি বলছি। তাহেরের মনটা ভালো হয়ে গেলো। তাহের একটা ভালো লাগা নিয়ে তাকিয়ে থাকে পারুলের দিগে।

ওদিকে মেয়েদের কথাবার্তা বদ্ধ, মানে ঘুমিয়ে পড়েছে। পারুল বসে হাই তুলছে। তাহের বলল চল বেডে যাই, কাল সকালে উঠতে হবে। মাঝরাতে হঠাৎ তাহেরের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘরের মৃদ আলোয় পারুলকে খুব ভালো লাগছে।

পারুল তার বুকের কাছে মাথা গুঁজে শুয়ে আছে। সে অপলকে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। সারাদিন ছোটাছুটি করে কাজ করে তারা; সংসার কী কম কষ্টের - এটা সেটা করতে করতে কম দখল যায় না তাদের। পারুল কখনও রাগ, কখনও বকাবকি মিশে থাকে সারাদিনের কাজকামের মধ্যে। তবু রাতে এই কী সাচ্ছন্দ্যে ঘুমাচ্ছে যেনো কী পরম বিশ্বাস আর বন্ধুত্বের আলো ছড়িয়ে আছে সারা বিছানায়।

বাইরে তখন বৃষ্টি হচ্ছে, তাহের বিছানা ছেড়ে জানালায় দাঁড়ালো; তার চোখে বৃষ্টির অঝোর জলরাশি ভাবায়। সে ভাবতে থাকে এই জীবন যেনো মেঘলা রোদে বৃষ্টি জল - এই হাসি-কান্নায় যেনো জড়িয়ে আছে এই দু'টি প্রাণ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.