থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগৎটাকে
গত ২ ডিসেম্বর ঘুরে এলাম নাটোর শহর। নাটোর আমার জীবনের প্রথম শহর দেখা সেই ১৯৭৯/৮০ সালে। পিতার সোনালী ব্যাংকে চাকুরীর সুবাদে নাটোর গমন; ১৯৮২ সালে ঢাকায় হেড অফিসে তার ট্রান্সফার হওয়ার মাধ্যমে নাটোরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মাঝে ২বার রাজশাহী যাওয়া নাটোরের উপর দিয়ে তা-ও আবার নাইট কোচে হওয়ার কারণে বাস থেকে নামাই হয়নি।
যা হোক আমার বন্ধুবর নাটোরের আহমেদপুর ডিগ্রী কলেজের ইংরেজীর প্রভাষক জনাব আবুল হোসেন এর আমন্ত্রণে এ সফর।
পাবনা হয়ে নাটোরের আহমেদপুরে যখন নামলাম তখন বিকাল ৫ টা। হাইওয়ের পার্শ্বে মসজিদে আছর এর নামাজ পড়ে বন্ধুর হোন্ডায় তার বাড়ীতে যথেষ্ট আপ্যায়িত হলাম। এরপর যখন আহমেদপুর থেকে নাটোর শহরের (দুরত্ব ১০ কিলোমিটার) উদ্যেশ্যে বের হলাম তখন মাগরিবের আযান দিচ্ছিল। শীতের সন্ধ্যা তদুপরি হোন্ডা যারা এ পরিস্থিতিতে ভ্রমণ করেন নাই তাদের বুঝতে কষ্ট হবে। রাস্তায় মাগরিব পরে সন্ধ্যা ৬.৪৫ এ নাটোর বগুড়া সংযোগ লিংক অতিক্রম করার সময় দেখলাম আমার প্রথম শিাপ্রতিষ্ঠান নাটোর জামহুরিয়া আলিয়া মাদরাসা।
বিল্ডিং এর কোন পরিবর্তন নাই। শুধু রাস্তার সাথে একটা বড় মসজিদ তৈরী হয়েছে। সামনে এগুলে রাস্তার উত্তরে একটা পুকুর ছিলো তা এখন ছোট্ট ডোবা। রাস্তার দুই ধারে দালান কোঠায় ভরপুর; যা ছিল ধুধু মাঠ। আরো সামনে রাস্তার দক্ষিণে ফায়ার ব্রিগেডের অফিসটি যথাস্থানে দাঁড়িয়ে আছে।
তারপরেই কানাইখালীর মাঠ। যে মাঠে এক্সিবিশিন হতো, সার্কাস পার্ট আসতো আর ৮১ এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার, ড. কামাল হোসেন সহ সবাই এসেছিলেন বলেই মনে পড়ে। আরো সামনে বাস স্ট্যান্ড রাস্তার উত্তর পার্শ্বের ছায়াবানী সিনেমা হলের দেয়াল এবং ছাদ আগের মতই আছে বলেই মনে হলো। সিনেমা হলের বিপরীতে যে রাস্তাটি দক্ষিণে গিয়েছে সেটাতেই ছিল আমার পদচারণা। হোন্ডার গতি আস্তে রাখতে বলে হারিয়ে গেলাম অতীতে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে টাউন মসজিদ, পশ্চিমে নীচা বাজার।
১৯৮১ সালে এবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেছিল নাটোর ও রাজশাহীর ফায়ার ব্রিগেড এসে সে আগুন নিভিয়ে ছিল। আরো দক্ষিণে নাটোর শহরকে বিভক্তকারী নদী, নামটা মনে পড়ছে না। নদীর ব্রিজের একটু আগে পশ্চিমের গলির শেষ মাথায় সোনালী ব্যাংক দাড়িয়ে আছে। আমার গন্তব্য নদীর দক্ষিণে, ব্রীজটি চওড়া হয়েছে দ্বিগুণ। ব্রীজের দক্ষিণে পশ্চিম পার্শ্বের হাসপাতাল নেই।
পূর্ব পার্শ্বের পোস্ট অফিসটি দাড়িয়ে আছে পোস্ট অফিসের সামনে দিয়ে পূর্বদিকে কান্দিরভিটা যেখানে পচু মিয়ার বাড়ীতে ভাড়া থাকতাম এলাকা দেখলাম। পোস্ট অফিস থেকে কান্দির ভিটা পর্যন্ত কয়েকটি বাড়ী আগের পজিশনেই দাড়িয়ে আছে , মূল রাস্তা থেকে কান্দিরভিটার গলির মধ্যে ঢুকতে রাস্তার উত্তরের বাড়ীটাই তার প্রমাণ। কান্দির ভিটার পচু মিয়ার বাড়ী থেকে পুকুরের ওপারে জেলখানা দেখা যায়। আবার ফিরে এলাম, এবার ঢুকলাম নাটোর পিটিআই এর রোডে। জেল খানাকে হাতের ডানে রেখে সামনে গেলে রাস্তার পশ্চিমে পানির ট্যাংক যা আমাদের সময়ে ছিল না।
আসলে তখন সাপ্লাই পানিই ছিলনা। আরো সামনে হাতের বামে পিটিআই ; এর বিল্ডিং এর দুই অংশের মাঝে ফাঁকা জায়গায় প্রথম ফুটবলে লাথি মেরেছিলাম। আরো সামনে হাতের ডানে ছিল মরাকাটা ঘর, সেখানে একটি মসজিদ হয়েছে খুবই সুন্দর। আরো সামনে বর্তমান হাইওয়ে। তখন এটি একটি কাচা রাস্তা ছিল।
আবার ফিরে আসলাম উত্তর দিকে জেল খানার পিছন দিয়ে সামনে এগুলে ডানে সদর থানা। থানার দক্ষিণে সুমন মেডিক্যাল স্টোর (সম্ভবত) সুমনদের বাড়ীতেও ভাড়া থাকতাম। ইচ্ছা করেই কাউকে কোন পরিচয় দেই নি। সুমনদের বাড়ীর পশ্চিমে মসজিদটি ভালই আছে তবে মিনারটি নেই। এলাম কাচারী মাঠের পশ্চিম দক্ষণি কোনায় ।
কাচারী মাঠের পূর্ব পার্শ্বে এস.ডি.ও এর বাংলো ছিল। এখন নেই। বিশাল পুকুরটি বিদ্যমান তবে ঘাটলাগুলো নেই। কাচারী মাঠের পশ্চিমে টেনিস কোর্ট আজো আছে। পিছনের কোর্ট নেই, সেটি এখন সদর আধুনিক হাসপাতাল।
কাচারী মাঠেই জনসভা বেশী হতো আমার যতটুকু মনে পড়ে খন্দকার মোশতাক, মেজর এম.এ জলিল, নূরে আলম জিকু সে সকল জনসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন। কাচারী মাঠের কোনায় চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ীর উদ্যেশ্যে বন্ধুবর আমাকে এগিয়ে দিলো বনপাড়া পর্যন্ত ; তখন রাত ৮.৩০ মিনিট। বিদায় নাটোর। আবার দেখা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।