মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
ডিসেম্বরঃ আমাদের অহংকারের মাস।
সভ্যতার ইতিহাস শুধুমাত্র মানুষের বিকাশ ও উন্নতির ইতিহাস নয়। সভ্যতার ইতিহাস জাতিগত হানাহানির ইতিহাস, রেষারেষির ইতিহাস, মানুষের বিপক্ষে মানুষের পাশবিক সত্ত্বার আক্রমণের ইতিহাস। অমানবিক ও অযৌক্তিক বর্বরতার নৃশংস অগণিত উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের নানা বাকে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির উপর পাক হানাদার বাহিনীর আকস্মিক আক্রমণ করে যা ইতিহাসের সকল বর্বরতার উদাহরণকে। জাতিগত আস্তিত্ব রক্ষার জন্য স্বাধীনতার জন্য বাঙালি সংঘবদ্ধভাবে রুখে দাড়ায় বর্বর পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে। পিশাচ পাকিস্থানিদের শোষণের বিরুদ্ধেই ছিল বাঙালির প্রতিরোধ আন্দোলন। বাঙালির দাবি তখন স্বাধীনতা ও মুক্তি। দীর্ঘ নয় মাস এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি ছিনিয়ে আনে বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতা।
তাই ডিসেম্বর মাস বাঙালির ইতিহাসের প্রধান গৌরবোজ্জল মাস।
সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের ফলে বর্তমান বাংলাদেশ হয়ে পড়ে পাকিস্তানের অংশ। পূর্ব ও পশ্চিম এই দুটি অংশ নিয়ে ছিল সমগ্র পাকিস্তান। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনাধীন। সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পুরো সময়টাই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী রক্ত খেকো হায়েনার মতো ক্ষত-বিক্ষত করে বাঙালিদের।
অর্থনৈতিক শোষণ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করে বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে রাখার সকল পায়তারাই তারা সম্পূর্ণ করেছিল। সকল দিক দিয়েই ভয়ংকর বৈষম্যের শিকার হয়েছিল বাঙালিরা। আঘাত আসে বাঙালির ভাষার উপর, শিক্ষার উপর, জীবিকার উপর, দাবির উপর। সামরিকতন্ত্র চাপিয়ে দেয়া হয় প্রতিটি বাঙালির জীবনের সর্বক্ষেত্রে। সহ্যের শেষ সীমায় পৌছে রুখে দাড়ায় বাঙালি।
ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম প্রতিষ্ঠা করে বাঙালির নিজস্ব রাস্ট্র। তাই ডিসেম্বর মাস সবসময়ই আমাদের কাছে একটি গৌরবোজ্জল মাস, স্বকীয় ঐতিহ্যে ভাস্বর। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীকে হারিয়ে দিতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানের পরিকল্পনা ছিল যেকোন মূল্যে ঢাকাকে নিজেদের অধিনত করে রাখার।
মুক্তিবাহিনীও জানতো চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য ঢাকা শহরকে শত্রুমুক্ত করতেই হবে। তাই ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গেরিলা বাহিনী জড়ো হয় ঢাকায়। উপর্যুপরি আকস্মিক গেরিলা আক্রমনে হটিয়ে দিতে থাকে পাক সামরিক ঘাটির ভিত্তি। গেরিলা বাহিনীর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে ভারতীয় স্থল ও বিমান বাহিনী।
দেড় সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই পাক বাহিনী বুঝে যায় তাদের পরাজয় এখন আর সময়ের অবকাশ মাত্র।
তাই যুদ্ধাপরাধী শক্তি স্বাধীন বাংলাদেশে টিকে থাকার জন্য সমস্ত দেশজুড়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা নিধন যজ্ঞে মেতে উঠে। কারণ তারা বেচে থাকলে এ বাংলার মাটিতে তারা বসবাস করতে পারবে না। এজন্য ১৪ ই ডিসেম্বর রাতে তারা ঘটায় ইতিহাসের অন্যতম বর্বর হত্যাকান্ড। রাতের আধারে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান শিক্সক, বুদ্ধিজীবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও মেধাবী তরুনদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে বিভন্ন বদ্ধভূমিতে। এই ঘটনার ধিক্কারে ফেটে পড়ে সারা দুনিয়ার বিবেকবান মানুষ।
এতকিছু করেও বাঙালির বিজয়কে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি পশ্চিম পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠী। দীর্ঘ সংগ্রাম, বহু রক্ত, বহু মা-বোনের সম্ভ্রম ও বহু বেদনার বিনিময়ে বাঙালি জাতি ১৬ ই ডিসেম্বর ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার আকাঙ্খিত লাল সূর্য।
সম্পাদনায়ঃ কল্লোল কর্মকার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।