বর্তমানে ত্রিমাত্রিক অ্যানিম্যাশনের যুগে দ্বিমাত্রিক অ্যানিম্যাশন চলচ্চিত্রের কথা অনেকেই ভুলতে বসেছে। কিন্তু এই দ্বিমাত্রিক অ্যানিম্যাশন চলচ্চিত্রেই সোনার ফসল ফলিয়ে চলেছে একটি দেশের চলচ্চিত্র শিল্প - দেশটির নাম জাপান। আর এই দ্বিমাত্রিক অ্যানিম্যাশনে জাপানের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম হলো হায়ায়ো মিয়াযাকি। ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫টি অ্যানিম্যাশন ধারাবাহিক ও ১০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য লচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও তিনি আরও অনেকগুলো স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন, অসংখ্য অ্যানিম্যাশন চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি লিখেছেন, নকশা একেছেন।
দুইবার অস্কারের জন্য মনোনীত হয়ে অস্কার পেয়েছেন একবার, এছাড়াও দেশি বিদেশি অসংখ্য পুরস্কারতো রয়েছেই।
কে এই হায়ায়ো মিয়াযাকি? কেন তিনি এত বিখ্যাত? হায়ায়ো মিয়াযাকির জন্ম ১৯৪১ সালের ৫ই জানুয়ারী, টোকিওতে। তার বাবা ছিলেন উড়োজাহাজ কোম্পানীর পরিচালক আর মা ছিলেন একজন বইপোকা। ১৯৫৫ সালে প্রথম রঙিন জাপানি অ্যানিম্যাশন 'জাদু-সর্প' (হাকুজাদেন) দেখার পরেই তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন অ্যানিম্যাশনের ব্যাপারে, শিখতে শুরু করেন ছবি আকা। তার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ১৯৭১ সালে ইসাও তাকাহাতা-র সাথে নির্মিত অ্যানিম্যাশন ধারাবাহিক 'লুপিন তৃতীয়'। তিনি প্রথম ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন ১৯৮৪ সালে তার দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিম্যাশন চলচ্চিত্র 'হাওয়াই উপত্যকার নসিকা'-র মাধ্যমে।
এই পরিবেশবাদী চলচ্চিত্রটি বেশ কিছু পুরস্কার অর্জন করে। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে 'আমার বন্ধু তোতোরো' চলচ্চিত্রটি হায়ায়ো মিয়াযাকিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলে। 'তোতোরো' চরিত্রটি পরিণত হয় জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রে। কিন্তু কিংবদন্তী হওয়ার জন্য হায়ায়ো মিয়াযাকিকে অপেক্ষা করতে হয় 'রাজকন্যা মনোনোকে'- এর মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি সমগ্র দুনিয়ার চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মধ্যে হইচই ফেলে দেয়।
পরিবেশবাদী এই চলচ্চিত্রে মিয়াযাকি তুলে ধরেছেন পুরোনো যুগের সাথে নতুনের সংঘর্ষ, পুজিবাদের সাথে সামন্তবাদের সংঘর্ষ, নিম্নশ্রেনীর মানুষের জীবন ও শান্তির বানী। আমার মতে এটা হায়ায়ো মিয়াযাকির শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। টাইটানিকের আগ পর্যন্ত 'রাজকন্যা মনোনোকে' জাপানের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ছিলো। হায়ায়ো মিয়াযাকির পরবর্তী চলচ্চিত্র 'আত্মার মুক্তি' জয় করে অস্কার পুরস্কার ২০০১ সালে। এর পরবর্তী সিনেমা 'হাউলের চলমান দুর্গ'-ও ২০০৪ সালে অস্কার পুরস্কারের মনোনয়ন পায়।
এই প্রত্যেকটি চলচ্চিত্রই জাপান ও বিদেশে ব্যাপক বাণিজ্যিক সফলতা পায়। ২০০৮ সালে মিয়াযাকির 'পনিও' চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে - ইতোমধ্যেই এটা জিতে নিয়েছে অনেকগুলো পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক বক্স অফিসে অর্জন করেছিলো ৯নং স্থান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।