আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।
ফয়সাল মাহমুদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের একজন ছাত্র। খুব সাধারণ এবং একটু গম্ভীর প্রকৃতির।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম নববর্ষ উদযাপন কালেই ওর সাথে প্রথম চোখাচোখি হয়েছিলো মৌমিতার।
প্রথমটায় ও চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু দ্বিতীয়বার দর্শনে চোখ সরাতে গিয়ে ফয়সালকে একটু ভাবতে হয়েছিলো। মৌমিতা, ঠিক একবাক্যে রুপসী বলা যায়না ওকে। দশজনের মধ্যে দশমাও নয় সে। তবে এক মায়াবতী নারী।
এজন্যই বোধহয় প্রথমবার নয়, দ্বিতীয়বার চোখ সরাতে ব্যার্থ হয়েছিলো ফয়সাল মাহমুদ।
ফয়সাল আমার বন্ধুমানুষ। এরপরেরবার যখন ওকে দেখেছিলাম, দেখেছিলাম মৌমিতার সঙ্গেই। ফয়সাল মৌমিতার পাশাপাশি হেটেছিলো। এক ভীষন ভালোলাগায় ভরে গিয়েছিলো ফয়সালের মন।
মনে মনে ভেবেছিলো--- এটাই বুঝি প্রেম।
এর বেশ কিছুদিন পরের কথা। পাশাপাশি বসে ছিলো ওরা দু’জন। ক্যাম্পাসের লেকের পাড়ে কোন একটা বেঞ্চিতে বসে ছিলো ওরা। দু’জনের চোখ দু’জনের চোখে।
বেশ কিছুক্ষন নীরব দু’জনেই। যেন হৃদয়ের সকল অমৃতকথা প্রকাশিত হবার পথ খুজে নিচ্ছে নীরবতার ভাষাতেই। একটু পর মৌমিতার হাত দুখানি নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিয়েছিলো ফয়সাল। প্রিয়ার প্রথম স্পর্শ অবাক করে দিয়েছিলো ফয়সালকে। সমগ্র অঙ্গে এক বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গিয়েছিলো।
ফয়সাল ভেবছিলো--- এটাই বুঝি প্রেম।
তারপর থেকে যতটা জেনেছিলাম তার পুরোটাই ফয়সাল আর মৌমিতার ভালোবাসার গল্প। ওরা দু’জন দু’জনকে ভালোবেসেছিলো, গভীরভাবে। ফয়সালের সমস্তটা জুড়ে ছিলো মৌমিতা। আর মৌমিতা তার হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছিলো ফয়সাল মাহমুদের জন্য।
মাঝে মাঝে অপেক্ষার পালা ও ওদের ভালোবাসায় স্থান করে নিয়েছিলো। ক্যাম্পাসে এসেই মৌমিতার খোজ করতো ফয়সাল। আবার মৌমিতাও ফয়সালের জন্য। কোনদিন হয়তো পিছন থেকে এসে মৌমিতার চোখ আটকে ধরতো ফয়সাল। বিস্ময়ে পিলে চমকে যাওয়া মৌমিতা কপট অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিত।
পরক্ষনেই ওকে ঘিরে ফেলতো অনুরাগের আবেশ। এভাবেই ওদের দিনগুলো চলছিলো— ভালোবাসা আর খুনসুটির মধ্য দিয়ে।
কোন এক সকালে শহীদ মীনারের পরে বসে ফয়সালের অপেক্ষা করছিলো মৌমিতা। ভার্সিটির বাসে করেই আসবে ফয়সাল- এমন ধারণা ছিলো মৌমিতার। কিন্তু ফয়সাল আসেনি।
তারপর আরোও কিছুক্ষন অপেক্ষা করেছিলো মৌমিতা। ভেবেছিলো, হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে ও। কিন্তু তখনো আসেনি ফয়সাল। অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলো। এক সময় অনন্যোপায় হয়ে ফয়সালকে ফোন দিয়েছিলো।
... ... ..
সেদিন এক অজানা উদাসীনতা ভর করেছিলো ফয়সালের উপর। campus –এ যাওয়ার এতটুকু আগ্রহ দেখায়নি ও। ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিলো এক অজানা কারণে। একারনেই, হাজারো চেষ্টা করেও ফয়সালের সাথে কোনরকম যোগাযোগ করতে পারেনি মৌমিতা। পরেরদিন ক্যাম্পাস-এ এসেছিলো ফয়সাল।
মৌমিতার সাথে দেখাও করেছিলো একেবারে প্রথমে। মৌমিতা ওকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদেছিলো কিছুক্ষণ। এক অপরিজ্ঞাত ভালোবাসায় ভরে গিয়েছিলো ফয়সালের মন। ভেবেছিলো, এটাই বুঝি প্রেমের প্রকৃত দ্যোতনা।
এর বেশকিছুদিন পরে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিলো ফয়সালের।
ওর মুখ থেকেই শুনছিলাম মৌমিতার কথা। এক গভীর নিস্তব্দ রাতে এই অপরুপা তরূণী তার নিজের সমস্তটাই তুলে দিয়েছিলো ফয়সালের হাতে। শক্ত-সামর্থ্য যুবা পুরুষ ফয়সাল মৌমিতার শরীরের প্রতিটা ভাজে তার ছাঁপ একে দিয়েছিলো। মৌমিতার দেহজ সৌন্দর্য্য উম্মোচন করার প্রতিটি মুহুর্তে শরীরে মধ্যে এক পুলক অনুভব করেছিলো ফয়সাল। মৌমিতার নগ্ন বক্ষে বক্ষ মিশিয়ে ভালোবাসার সবটুকু স্বাদ আস্বাদন করেছিলো ও।
প্রমিলা তনুর ত্রিমাত্রিক গঠন বিন্যাস ফয়সালের সমগ্র শরীরে পরমোচ্ছাসের জোয়ার বইয়ে দিয়েছিলো। সেদিনও ফয়সাল অনুভব করেছিলো—এটাই বুঝি প্রেম।
বহতা নদীর মতই বয়ে চলে সময়। অনেকদিন পর ফয়সালকে দেখেছিলাম ক্যাফেটেরিয়ায় বসে চা খেতে। হাতে ওর একটা সিগারেট ছিলো।
এখন নাকি ওটাই তার নিত্য সঙ্গী। ওর পাশে বসেছিলাম কিছুক্ষণ। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মৌমিতার কথা জিজ্ঞেস করার ইচ্ছাটা নিভে গেলো। অল্প কিছুক্ষণ নিরবতার পরে ফয়সাল নিজেই বলেছিলো মৌমিতার কথা। ও এখন আর ফয়সালের নেই।
সবকিছু নাকি শূন্য মনে হয় তার। হঠাৎ কাধে হাত রেখে ও বললো—এটাই প্রেম রে।
কি জানি, ফয়সালের চোখের কোনা একটু চিকচিক করে উঠেছিলো হয়তো। আর কোন কথা বলতে পারেনি ও।
ভাবছিলাম... ‘ফয়সালের কোন অনুভূতিটা প্রেম?’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।