আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোনের ডাক্তার হওয়া দেখা হল না আহমেদ আল ফয়সালের........

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ ...........
৬ই নভেম্বর চট্টগ্রামগামী ইউনিক সার্ভিসের বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে ঢাকাগামী এসিডের কন্টেইনার বাহী খোলা ট্রাকের। এতে আহত হন বুয়েটের শেষ বর্ষের ছাত্র আহমেদ আল ফয়সাল। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সিটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তাকে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরিত করা হয়। আট দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ১৪ই নভেম্বর তিনি দুপুর দেড়টায় সিটি হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুবরন করেন। দুর্ঘটনার দিন দুপুর ১টার বাসে তিনি বাড়ি যাচ্ছিলেন।

একমাত্র ছোট বোনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ছিল পরদিন সকালে। বাবা মার একমাত্র ছেলে ফয়সাল চট্টগ্রামের বাসিন্দা। ২০০৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগে। ফয়সাল এর বাবা সরকারী প্রকৌশলী। বর্তমানে তিনি প্যারালাইসড অবস্থায় বাড়িতে রয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে যাত্রী ছিল মোট ৩৮ জন। কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এর কাছাকাছি স্থানে বিকাল ৪টায় ঘটে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি। বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচারিত হয় একজন মহিলা ও শিশুকে বাচাতে গিয়ে এ ঘটানা ঘটে যদিও এর সত্যতা এখনো প্রমানিত নয়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসারত যাত্রীদের মুখে শোনা যায় হঠাৎ ধাক্কায় তারা বাসসহ রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েন। ট্রাকটি করে মেসার্স নাসির কেমিক্যাল এর নামে ১০টন এসিড ৮৮ টি কন্টেইনারএ করে বহন করে ঢাকার ফতুল্লায় নিয়ে যাচ্ছিল।

অথচ কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতে নেওয়া হয়নি। এসিড পরিবহন একটি অত্যন্ত ঝুকিপুর্ন বলে এসব সাধারনত কাভার্ড ভ্যানে করে পরিবহন করা জরুরি। এসব কন্টেইনার এ ছিল সালফিউরিক এসিডের মত মারাতক এসিদ হলেও তাতে সামান্য তেরপলও দেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনার পরপরই এসিড কন্টেইনার বাসের উপর এসে পরে। যা যাত্রীদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

এতে সেখানেই বাস ড্রাইভার সহ ৬ জনের মৃত্যু ঘটে। বাস যাত্রীদের অনেকেই পরে বাস থেকে বেড়িয়ে এসে পাশব্বর্তী খাদে এসে পানি দিতে থাকে। এরপর বাসে আগুন ধরে যায়। স্থানীয় জনগনের সহায়তায় আহতদের ২০ কিমি দূরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই প্রায় একই সময়ে ৫ জনের মৃত্যু ঘটে।

আহতদের মধ্যে সংকাটপন্ন ১০ জনকে বিভিন্ন অ্যানবুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ঢাকা মেডিকেলে পৌছামাত্রি মারা যান আরও একজন যার শতকরা ৯৭ ভাক তক পুড়েছিল। রাত ১২ টায় ফয়সাল কে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বেডের অভাবে রাখা হয় বার্ন ইউনিটের চারতলার বারান্দায়। প্রথমিক ভাবে বলা হয় তার শতকরা ২০ ভাগ শরীর ঝলসে গেছে।

(সূত্রঃ মেডিকেল অভজারভেশন রিপোর্ট ঢাকা মেডিকেল) আত্র মামা তার সাথেই ঢাকায় আসেন। পরদিন তার চিকিৎসা শুরু হয়। দেড় দিন পর তাকে দোতলার বেডে স্থানান্তরিত করা হয়। পরদিন থেকে তার শরীরে কৃত্রিম ভাবে রক্ত দেয়া হতে থাকে। তার চোখ ও কানে এসিডের ক্রিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বলে কর্তব্য্রত ডাক্তার জানান।

তিনি আরও জানান তার শরীরে কৃত্রিম ভাবে তক গ্রাফটিং করাতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। অসুস্থ বাবা নাকে তখনো তার খবর জানানো হয়নি। শনিবার থেকেই তার সহপাঠীরা তার জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। হলে হলে তার জন্য সাহায্য চাওয়া শুরু হয়, দেওয়া হয় সব হলের মাসিক ফিস্টের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা। আক্যাফের সামনে বসানো হয় বুথ।

র‌্যাগের অনুষ্ঠান থাকা সত্তেও তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন। বুধবার ফয়সালের শরীরে গ্রাফটিং করা হয়,এতে ছিলেন ডাঃ সামন্ত লাল সেন এবং ডাঃ কিশোর কুমার দাস। সেনাবাহিনী প্রধান মইন ইউ আহমেদ দেখা করতে যান আহতদের সাথে। সরকারের পক্ষ থকে সব ধরনের সাহায্যের আশা দেন। বুধবারই তার অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তাকে লালমাটিয়ার সিটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয় কৃত্রিম শাস প্রশাসের সুবিধার্থে।

কেননা ঢাকা মেডিকেলে মাত্র দুটি আইসিইউ আছে বলে কর্তব্য্রত ডাক্তার জানান। সিটি হাসপাতালের বেড নং ৬ এ রাখা হয় তাকে। সেখানে তার চিকিৎসা পরিচালনা করেন ডাঃ শহিদুল বারী এবং ডাঃ চৌধুরী ইকবাল। সেখানে নির্ধারন করা হয় তার পোড়ার হার শতকরা ৬০ ভাগ অথচ যেখানে ডাকা মেডিকেলে বলা হয়েছিল মাত্র ২০ ভাগ। তারা জানান তার চিকিৎসা ব্যায় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এদিকে বুয়েটে তার জন্য সাহায্য গ্রহন অব্যাহত থকে। ছাত্র কল্যাণ পরিচালক মাগলুব আল নুর শনিবার সকাল থেকেই হাসপাতালে অবস্থান করতে থাকেন। তার আগের দিন সকালেই ঢাকায় পৌছান তার মা। আরো অবনতি হতে থকে সেদিন। সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দুপুর দেড়টায় তিনি শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন।

ফয়সালের লাশ বিকালেই নিয়ে আসা হয় বুয়েটে। মাগরিবের নামাযের পরে বুয়েট খেলার মাঠে তার প্রথন জানাযা হয়। হাজির হর হাজারো শোকার্ত সহপাঠী বন্ধু শিক্ষক সহ অনেকেই। সেদিনই নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লাই গ্রমের বাড়িতে। কোন ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া এরূপ এসিড পরিবহন যায়না বলে নিয়ম রয়েছে।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট পরিবহনের নকশাও থাকতে হয়। সরকার এর বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নিয়েছে বলে এখনো জানা যায়নি। ঢাকা মেডিকেল ও সিটি হাসপাতালে চিকিৎসারত প্রায় সবাই গত সাতদিনে মারা গিয়েছে। এসিড পরিবহনের এরুপ দৃষ্টান্ত বন্ধ হোক। আমরা তার বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করি।

উনার বোনটা চট্টগ্রাম মেডিকেলে চান্স পাইসে। অর কষ্টের কথা ভাবুন। ভাইটা দেখে যেতে পারলনা ওকে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।