আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প - শ্রাবণ



১. তালব্য ‘শ’ বর্ণটাকে আমি খুব ভালবাসি। কতটা ভালবাসি তার একটা প্রমাণ দেয়। আমি যে খাটটায় ঘুমায় তার ঠিক চোখ বরাবর একটা বড় প্লাষ্টিকের বাঁধানিতে আমি লিখেছি ‘তালব্য ‘শ’, তোর জন্যেই আমার সর্বস্ব’। আমার খুব ঘনিষ্ঠ কবি বন্ধু হাজ্জাজ মাহফুজ এই একটা ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে অহেতুক বাড়াবাড়ি করে। তালব্য ‘শ’ বর্ণটাকে আমি যে ভালবাসি সেটা হাজ্জাজ নিজ খরচায় সবাইকে জানিয়ে দিতে পোস্টার বের করে।

আমার পুরো এলাকায় রাতের আঁধারে পোস্টার সেঁটে দেয়। ‘জন্মদিনে, তালব্য শ- প্রেমিক প্রবরকে হাজ্জাজের শুভেচ্ছা’ । ঘর থেকে বের হওয়ার পর প্রথমেই যে দোকানটায় আমি নিয়মিত বাকি খাই, রহিম চাচা চোখ দুটোকে হর্সডিম্ব বানিয়ে জিজ্ঞেস করে, শেষ পর্যন্ত তুমি ও ২ নম্বর মেয়েটার ফাঁদে পড়লা। ছিঃ ছিঃ , তোমার মত পোলারেও শায়লা খাইল? শোন বাবা, কাল থাইক্কা এই দোকানে তোমার বাকি বন্ধ। ২ নম্বর মাইয়াগো লগে যে পোলা সর্ম্পক রাখে তারে বাকি দিয়া আমি গুণাহ্গার বান্দা হইতে পারুম না।

আমি কিছুণ রহিম চাচার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। টুপি মাথায় দাঁড়িয়ালা রহিম চাচাকে ইচ্ছে হয়না ‘তালব্য শ’ মানে শায়লা না, অন্য কেউ, অন্য কিছূ বলতে। খালি ২ নম্বর (মানুষ মানুষকে নম্বর দিয়েছে ১ কিংবা ২ কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ১ করে পাঠিয়েছেন) এর সাথে সম্পর্ক রাখলে গুণাহগার হতে হবে এই কথাটার জন্যেই বলি, চাচা আপনি যে সুদ খান সেটা আমি জানি। আপনার ঘরে যে কাজের মেয়ে ছিল তাকে যে হাজার পাঁচেক টাকা হাতে দিয়ে ট্রেনে তুলে দিয়েছেন রাতের আঁধারে সেটাও আমি জানি। জানেন চাচা সুদ খাওন কিন্তু জেনা করার চাইতে ৭০ গুণ বেশি কঠিন গুণাহ।

আমি যদি শায়লার লগে জেনাও করি তয় আপনার চাইতে ৬৯ গুণ কম গুণাহ করছি- চাচা এখন আপনি বলেন, আমি ভাল না আপনি?- বলে হনহন করে হাঁটতে থাকি। আমি জানি এখন রহিম চাচার মুখটা কালো হয়ে আছে। জগতের এই এক নিয়ম, সত্য স্বীকার করার মত সৎসাহস কারো নেই। নচিকেতার গানটা খুব মনে পড়ে, ‘প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ, ঘুষ খাওয়া কভু নয়’-সম্ভবত সেজন্য এখানে অসৎ মানুষেরা ন্যাংটো থাকার পরও আমরা বলি, ‘রাজার পোশাক কী চমৎকার’! ২. খুব সহজ সরল মেয়ে অবন্তী। থাকে যখন দেখি আমাদের অফিসে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।

পিচ্চিটা এত ধকল সইবে কেমনে! অবন্তি কিছুদিনই জানিয়ে দেয় ‘ঝরুব ফড়বংহ’ঃ সধঃঃবৎ’ অবন্তী সময় অসময়ে আমার সাথে গল্প জুড়ে দেয়। আমি একটা উদ্ভট চিজ্ কলিগরা সবাই তা জানে। আমার ডেস্কের ধারে জমে থাকা সপ্তাহখানেকের কাগজগুলো অবন্তি পরম মমতায় গুঁছিয়ে দেয়। যেন প্রিয় স্বামীকে টাইয়ের নট বেঁধে দিচ্ছেন রাঙ্গা বৌ! আমার কম্পিউটারে কারণে অকারণে ঘুরে ফিরে। টুকটাক লেখালেখি করি জেনে খুব খুশি হয়।

অবন্তির জন্মদিনে আমি একটা বই উপহার দেই। বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় লিখি- ‘যে হাত ছুঁয়ে গেছে অগ্নিগোলক সে হাতে বাঁশি উঠবেনা আর, যে বুক অনুভব করেছে কষ্টের সুনামি সে বুকে ফুল ফুটবেনা আর। তবু সে বুক, সে হাত অপোয় থাকে ‘কার’?’ অবন্তী বই আর কবিতা পাওয়ার পর যেন আরও বেশি করে আমার সাথে মিশে। । যতণ অফিসে থাকি চুপিচুপি আমার দিকে তাকাবে।

যদি হঠাৎ ভুলে নেত্রের সাথে নেত্রের মিলন ঘটে, ওমনি ওর মুখটাই উড়ে আসে লজ্জার মেঘ। এই লজ্জামাখা মুখটা দেখলে জগতের সকল পুরুষের বুকে ভালবাসার সুনামি বইবে। কিন্তু আমার বুকে সামান্য বাতাসও বয় না। তালব্য “শ” এত শক্ত করে ধরে আছে যে বুক, সে বুকে চৈত্রের বাতাসে বড় জোর নরম আদর দিতে পারে, খুঁটি উড়ানোর জোর কই? ৩. তালব্য ‘শ’ লিখতে আর ভাল লাগছে না। আর কতকাল লুকিয়ে রাখবো? কবি হাজ্জাজ মাহফুজ ছাড়া আর কেউ জানে না তালব্য ‘শ’ মানে ‘‘শ্রাবণ’।

আমি জানতে দেইনি। তালব্য ‘শ’ মানেতো আসলে আমার শ্রাবণ। আমার-ই বলার জোর নেই সত্যি, তবু বৃষ্টির স্পর্শে স্পর্শে মনে করি শ্রাবণ আমার। শ্রাবণ আর আমার সম্পর্কটা ছিল অদ্ভুত! আমার সাথে শ্রাবণের এমন একটা সম্পর্ক ছিল, যে সম্পর্ক ভালোবাসায় গড়ালে লোকে নানান কথা বলত। তারপরও শ্রাবণের মাঝে আমি যে একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছি তা টের পাচ্ছিলাম।

কতবার চোখ বন্ধ করে এক টাকার কয়েন উপরে মেরে লটারি করেছি। আচ্ছা মনকে বেঁধে রাখার কারাগারটা কোথায়? কেউ কি জানে? ধীরে ধীরে শ্রাবণের চোখের নদীতে আমার তলিয়ে যাওয়াটা সুখকর ভেবে ঝাঁপ দিয়ে নয় হেঁটেই ডুবে গেলাম। মুখে যে আমি শ্রাবণকে কখনো বলতো পারবোনা ‘এই আকাশে সমস্ত নীল তোমাকে দিলাম, তোমাকে দিলাম আমার হৃদপিণ্ড, তুমি আমার সকাল সন্ধ্যা, তুমি আমার ভবিতব্য’। তাই কম্পিউটারে তৈরি করে নিলাম প্রশ্নমালা শ্রাবণকে দেখানোর জন্যে ঃ ক. তোমার না আসার দিনগুলোতে আমি প্রতীায় থাকি। অপোর কষ্ট সওয়া যায়, প্রতীার নয়।

যদি জান কেউ একজন প্রতীায় শিরদাঁড়া করে দাঁড়িয়ে আছে- তুমি কি তার হাত ধরবে শ্রাবণ? খ. নোনতা জলে দুঃখ ঝরে পড়তে দেখেছো? দেখোনি- আমার দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখ-কতটা অভিমানের জলে আমি ডুবে আছি? তুমি কি এই দুঃখসাগর পাড়ি দিতে বৈঠা হবে? আমি যে নৌকা হয়ে বসে আছি! গ. কাল ভোরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল, আমি একনাগাড়ে জানালা খুলে তাকিয়েছিলাম বৃষ্টির খেলা দেখার লোভে। বৃষ্টিতে ভেজার আমার খুব সখ। ইচ্ছে হয় কারও হাতের তালু ভরিয়ে দেয় শ্রাবণ কদমফুলে। কারও চুল ভেজা গন্ধ নিয়ে কাটিয়ে দেয় বৃষ্টিবিধুর সারাবেলা। শ্রাবণ, কদমফুল কি তুমি ভালবাসো? ঘ. আকাশের বুক চিঁরে কালিদাস মেঘবালিকাকে চিঠি লেখে।

আর আমি মেঘবালিকাকে নিয়ে স্বপ্নগাঁথা রচনা করি-‘তোমার নীল শাড়ি আর আমার সাদা পাঞ্জাবি, সী বিচের পাথরের গায়ে যদি একসাথে বসে থাকি লোকে ভাববে ঈভ আর আদম’! শ্রাবণ, তুই কি আমার শূন্যবুকে পূর্ণতার মেঘবালিকা হবি-নষ্ট কষ্ট ভালবাসায় ভরিয়ে দিবি? ঙ. ইচ্ছের নাওয়ে তুমি পা দেবে কি দেবে না তোমার মর্জি-তবু ভেবো তোমার হাত ধরে সারাদিনমান বসে থাকার প্রতীায়-তুমি কি আমার হাত ধরবে? প্রতীায় আমি। শ্রাবণ বাক্যগুলো পড়ে শুধু আমার দিকে একবার তাকিয়েছিল। তারপর মেয়েলি লজ্জায় রাঙিয়ে দিয়েছিল মুখ, একসাথে রিকশায় আসা অবধি কোন কথা হয়নি আমাদের-তবু দু’জনার বুকেই তখন বিশ্বজয়ী সুখ। ৪। অবন্তীকে একটা দুঃখী ছেলের গল্প বলি।

ছেলেটার গল্প শুনিয়ে ছেলেটার প্রতি গোপন ভালবাসা জাগিয়ে দেই। ভুলেও বলিনা ছেলেটা আসলে আমি। শ্রাবণ এর কথা একদিনও বলি না। শ্রাবণকে বুকের গোপন কুঠিরে বন্দী করে রাখি। মাঝে মধ্যে রাতপ্রহরে নিরিবিলি মেঘ আর চাঁদের লুকোচুরি খেলার দিনে টেনে টেনে বের করি।

কথা বলি...........শ্রাবণ চুপচাপ শুনতে থাকে আমার কথা। আমি থাকে ঘুম পাড়িয়ে দেই। শ্রাবণকে আমি বারবার বুঝাতে চেষ্টা করি আমি চলার পথ কেবল তার সীমানার মেলার জন্যে। আমার সুখের অলিগলিতে তার উপস্থিতি, আমার অনুভবের সমস্ত আধার শ্রাবণ । অথচ শ্রাবণ-আমাকে বলে, তোমাকে যে আমি ভালবাসি না তা তুমি বুঝতে পার? আমি তাকে পাল্টা জবাব দেই- - ‘আকাশ যে মেঘকে ভালবাসে না আকাশ কি তা বুঝতে পারে?’ শ্রাবণ রেগে যায়।

গলায় কিছুটা জোর দিয়ে বলে, - কি সব আজগুবি কথা! আকাশ কেন মেঘকে ভালবাসবে না? - যদি ভালবাসতো তবে মেঘ গলিয়ে বৃষ্টি করে মাটিতে ফেলতে পারতো না। ভালবাসলে বুকে ধরে রাখত অনন্তকাল। যেমন তোমাকে পুষে রেখেছি আমি এই বুকে কত সহস্র রাত! শ্রাবণ হাসে, একটু আগের রাগ গলে মোম হয়ে যায়। - তুমি না সত্যি পাগল। - ‘দূর, আমার পা গোল কোথায়।

আমার পা-তো লম্বা’- শ্রাবণ আরও জোরে হাসতে থাকে। সম্ভবত আমার কথায় খুব মজা পেয়েছে। শ্রাবণ হাসলে ভুবনটা একবার নেচে উঠে। পাখিরা গান থামিয়ে দেয়। বৃরা কান পেতে থাকে, চাঁদ জোছনা লজ্জায় লাল হয় - আর আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ায়-এই চরাচরে তিনি শ্রাবণ-কে পাঠিয়েছেন এমন পাগলপারা হাসি দিয়ে।

৫. ঠিক রাত দশটায় অবন্তী ফোন করে। আমি আবার ছেলেটার গল্প শুরু করি। অবন্তী জানতে চাই আরও। আমি বলি তারপর কি হলো শুনবে? অবন্তী মন দিয়ে শুনে আমার কথা। - তারপর ছেলেটা আষাঢ়ের ভর দুপুরে একা একা অনেকণ বৃষ্টিতে ভিজে।

চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে ভিজে ছেলেটার কেবল মনে হয়, এইসব মন খারাপ করা বিষয়গুলো আজ থেকে মুছে দেবে মন থেকে। একজন পতঙ্গ হয়ে খালি আগুনে ঝাঁপ দেবে অন্যজন দুরাতিক্রম দূরত্বে পুড়ে যাওয়া দেখবে এমন বিধানের ইতি হোক, আজ এুনিই। অবন্তী কি বুঝে জানি না। তারপর থেকে গত কয়েকদিন আর ছেলেটার গল্প শুনতে চাইনা।

হঠাৎ আজ আবার ফোন করে জানতে চাই ছেলেটা এখন কেমন আছে? আমি বলি, - খুব ভাল। ভোর হলে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যায়। বিকেলে অফিসে থেকে এসে নিজের ঘরে ঢুকে স্মৃতির ভেতর প্রবেশ করে। হাতড়িয়ে খুঁজে বেড়ায় সেই বিকেল, সেই সময়গুলো, সেই মুখখানি...। তারপর একসময় ছেলেটি ঘুমিয়ে পড়ে।

ঘুমের ঘোরে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠে সেই নাম ধরে, অতঃপর ঘুমহীন সারারাত কষ্টের জামা গায়ে দিয়ে বারান্ধায় বসে থাকে। চাঁদের লুকোচুরি খেলা দেখে, জোছনার আলোয় পৃথিবীর জ্বলসে যাওয়া দেখে, আর চোখের কোণে জড়িয়ে থাকা জল নামিয়ে ভাসিয়ে দেয় চিবুক। অবন্তী জানতে চাই, - ছেলেটা কি সত্যিই তার প্রিয়মানুষটিকে চেয়েছিল?’ - চেয়েছিল। হয়তো চাওয়ায় ভুল ছিল! - চাওয়ার মত চাইলে সব পাওয়া সম্ভব? - না, সম্ভব না। যদি সম্ভব হতো ছেলেটার ডানহাত মেয়েটার করতল ছুঁয়ে যেত, বিকেলগুলো বিষন্নতায় ভুগতো না, প্রতিটি সকাল হতো আলোকিত।

মুঠো মুঠো নরম আলোয় মেয়েটির মুখ রাঙ্গিয়ে যেত, আর ছেলেটা সেই রক্তিম মুখের কালো তিলে স্পর্শ করতো হাতের আঙ্গুল। যদি সম্ভব হতো মেয়েটার শাড়ির আঁচলে ছেলেটার মুখ সুখ খুঁজতো, কপোলের ঠিক মাঝখানটায় লাল টিপটায় গায়ে তর্জণীর মৃদু চাপ, পাশাপাশি বসা, হাসি হাসি মুখ, কই কিছুইতো হলো না। হয় না, আসলে কিছুই হয় না উত্তর মেরু উত্তরেই থাকে, দণি মেরু দেিণ। নিজের অজান্তেই ছেলেটা যে আমি তা বলে ফেলি। অবন্তী বুঝতে পারে।

- ছেলেটা এখন কি করবে? -বেঁচে থাকবে। জীবন্মৃত। নিশাচর হয়ে। একটাই জীবন ও এমনিতেই কেটে যাবে। খয়েবী ডানার চিল শূন্য আকাশে যদিও উড়ে শীতের প্রারম্ভে, যদিও বসন্তে দোল খায় পলাশ, শিমূল, যদিও হেমন্তে নামবে কৃষাণীর আনন্দ জোয়ার, যদিও শরতে ছেয়ে যাবে কাশবন, বৃষ্টির কান্নায় যদিও বর্ষা যাবে, গ্রীষ্মের গরমে যদিও মুর্ছা যাবে কৃষকের কালো ছাগল, তবুও ছেলেটা এইসব প্রকৃতির খেলা পাশ কাটিয়ে তেলাপোকা হয়ে বেঁচে থাকবে।

-মানুষ কি কেবল বেঁচে থাকার জন্য বাঁচে? -জানি না, এর উত্তর আমার জানা নেই। - দুঃখী ছেলেটা আসলে তুমি না? যে ছেলের গল্প বলে বলে আমাকে বুঝিয়েছো আমি সেই দুঃখী ছেলেটাকে চিনি। এবং চিনতে চিনতে ছেলেটা আমার বুকেও আস্তে আস্তে ঘর তুলে ফেলেছে। আমি সে ঘরের চারপাশ সারাদিন পাহারা দেয়। শুনো তোমার পিচ্চিটা তোমাকে ভালবাসে।

জগতের কোন কিছুইতো স্থায়ী নয়। ফাঁকা স্থানে কেউ না কেউ এসে পূর্ণ করে দেয়। যে কখনও কার ও ছিল না তার জন্য প্রতীার নীপবৃ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কী লাভ- অবন্তী ফোনে আমাকে বলল। - জীবনে লাভের অংকে না হয় ছেলেটা শূণ্য পেল। শূন্যের তো মূল্য আছে।

যদিও আমরা শূন্যকে মূল্যহীন মনে করি। শূন্য ছাড়া বাকি অংকগুলো কেমন একলা। আর ছেলেটাতো একলা নয়। ছেলেটার আগে শ্রাবণ পরেও শ্রাবণ। মাঝনদীতে ডুবে যাওয়া মানুষের কাছে এক টুকরো কাঠ যেমন বেঁচে থাকার অবলম্বন ছেলেটার কাছে শ্রাবণও তেমন।

- যে নিজে ভাল থাকার জন্য দূরে সরে গেছে ইচ্ছে করে তার জন্যে কেন এত ব্যাকুলতা? - ব্যাকুলতা তো শ্রাবণ কে পাওয়ার লোভে নয়, এই ব্যাকুলতা শ্রাবণ-কে বোঝানো ব্যর্থতার জন্য, মেপে মেপে হিসেব কষে যে ভালবাসা হয় না , ভাগ্যদেবীর হাতে যে ভবিষৎ ছেড়ে দেওয়া যায় না এই সব বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি আমি। তাই এখন উন্মুখ থাকি যদি কখনও শ্রাবণের দেখা পাই, যদি ওর হাত ধরে বাচ্চার মত কাঁদতে পারি, যদি ওকে লুকিয়ে ফেলতে পারি লোকচুর অন্তরালে, বুকে! - আজ রাত এবং কালকের দিনটা তুমি ভাববে কখনও শ্রাবণের জায়গাটাও কাউকে দেওয়া যাবে কিনা। যদি সম্ভব হয় আগামীকাল তুমি ফোন করবে। নিঃসংকোচে তুমি জানিয়ে দেবে আদৌ আমি শ্রাবণ এর জায়গার উপয্ক্তু কিনা? উপসংহার ঃ এখন খুব হালকা লাগছে। একটা রাতকে মনে হয়েছে কয়েকটি বছর।

অবন্তীকে জানিয়ে দিয়েছি আমার সিদ্ধান্ত। চট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতা আমার কখনও ছিল না। আজও নেই। নির্ঘুম রাত পাড়ি দিয়ে সিদ্ধান্তটা নিতে কবি বন্ধু হাজ্জাজ মাহফুজের বাসায় চলে যায় ভোর ছ’টায়। হাজ্জাজ এত ভোরে আমাকে দেখে চু চড়কগাছ।

দরজাটা খুলে দিয়ে আবার শুয়ে পড়ল বিছানায়। আমি জানি ব্যাটা অন্তত ঘণ্টা দু’য়েক ঘুমোবে। এর মাঝে যদি আমি বলিও আমার খুব বিপদ। এখন তুই না বাঁচালে মৃত্যু ছাড়া কিছু করার থাকবে না। তবু হাজ্জাজ কাঁথাটা মাথার দিতে দিতে বলবে, তাহলে তুই মর আমি ঘণ্টা দুয়েক পরে উঠে তোদের বাসায় ফোন করে জানাবো তুই আর বেঁচে নেই।

কবিরা বোধহয় একটু এমনই হই। শালা নির্ঘাত গতকাল রাতে চুটিয়ে ঘণ্টাখানেক কোন মেয়ে ভক্তের সাথে প্রেমের সংলাপ আওড়িছে তারপর ফুরৎ ফুরৎ করে সিগারেট্ টেনে টেনে কবিতা লিখেছে। আমি হাজ্জাজকে ডিসর্টাব না করে ওর পড়ার টেবিলে এসে বসলাম। ব্যাটা চোখ বন্ধ করে চিৎকার করছে, ডায়েরী উল্টো কবিতা পড়েনে, কালই মাত্র মহাকবি (হাজ্জাজ নিজেকে তাই মনে করে) হাজ্জাজ মাহফুজের হৃদয় থেকে প্রসব করেছে। এখনও নাম দেওয়া হয়নি।

পারলে একটা নাম দিয়ে দিস। আমি কবিতার খাতাটা উল্টোপাল্টে দেখছি-টেবিলে স্তুপাকৃত সিগারেটের ছাই। কবিতাটা পড়লাম। হাজ্জাজের কবিতা মানে চোখের সম্মুখে লাস্যময়ী নারীর প্রতিমা, নারীটাকে হাজ্জাজ দেবী করতে চাই। অথচ নারী ফিরে ফিরে চাই ফেলে আসা অতীত - কবিতাটা এমন, ‘ঢের ভাল আছি রৌদ্র প্রখর দিনে বৃষ্টির সাথে শরীর ভেজানো নাই বা হলো আগুন হাওয়ায় মন ভিজেছে তোমার সনে তবে রৌদ্রছায়ায় হাতে হাত রেখে চলো’।

ঠিক ঘণ্টাদুয়েক পর কবিকে জানায় আমার সমস্যার কথা। কবি কিছূণ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, তোর চোখে এখনও শ্রাবণের ছায়া। তোর বুকে এখনও শ্রাবণের পদধ্বনি, তোর রক্তে এখনও খেলা করে শ্রাবণের স্মৃতি। তুই কি তোর চোখ, বুক, রক্ত বের করে ফেলতে পারবি? আমি যা বোঝার বুঝে যায়। খুব শান্তি লাগে বুকে।

শ্রাবণতো টবে রাখা ফুলগাছ নয় যাকে সকাল বেলা দেখে মন জুড়িয়ে যাবে। আবার শেষ বিকেলে ম্রিয়মাণ আলোয় ঝিমিয়ে পড়া দেখে বিরক্তিতে ভরে যাবে হৃদয়। শ্রাবণ আমার দেবী, যে দেবীকে আমি প্রতিদিন পূঁজোর অর্ঘ দেই। টবসহ ফুলগাছ ছুঁড়ে ফেলা যাবে দেবী কে ছুঁড়ে ফেলা সম্ভব?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.