হে মানব, আজি ওঠো জেগে বিবেকের তাড়নে
চ্যাম্পিয়ন হতে কে না চায় ? আর যদি পৃথিবীর সবকয়টি দেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়, তাহলে তো পরম পাওয়া । এর সাথে যদি যোগ করেন টানা পাচঁবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া , তাহলে তো কথাই নেই । বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিলের পঞ্চমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হতে সতেরোটি আসর খেলতে হয়েছিল, আর আমরা কিনা পর পর পাচঁবার চ্যাম্পিয়ন ! ! !
কী আশ্চর্য এই চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমরা কেউই খুশি হতে পারলাম না, বরং কেউ কেউ তো এই চ্যাম্পিয়ন খেতাব দানকারী প্রতিষ্ঠানটির দূরভিসন্ধি খুঁজতে উঠে পড়ে লাগল । চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটি গ্রহণ করতে কেউ আগ্রহ প্রদর্শন করল না , বরং ট্রফিটি অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারলে যেন সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচে । এবার মনে সন্দেহ জাগে আসলে কিসে চ্যাম্পিয়ন ?
আপনি যদি একজন বাংলাদেশী হয়ে থাকেন, তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কিসের ট্রফির কথা বলা হচ্ছে ।
আর যারা দেশ সম্পর্কে কোন খোঁজ-খবর রাখেন না, তাদের জন্য বলি - দুর্নীতির ট্রফি । বাংলাদেশ ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত পরপর পাঁচবার শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছিল । সে যে কতটা লজ্জাস্কর , কতটা গ্লানিময় অভিজ্ঞতা ছিল তা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী মাত্রই জানে ।
লক্ষ্যণীয় যে, আমি 'দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী মাত্রই' উল্লেখ করেছি, সব বাংলাদেশীকে নয়, কারণ যাদের দুর্নীতির কারণে দেশ এই কলঙ্কজনক খেতাব পেয়েছিল, তারা আর যাই হোক দেশপ্রেমিক নয় ।
আজ(১৮/১১/২০০৯) পত্রিকা দেখে জানতে পারলাম যে, টিআইবি-এর দুর্নীতিগ্রস্ত শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে এসেছে বাংলাদেশ।
তিন ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৩তম । টিআইবি-এর এবারের প্রতিবেদনে ১৮০টি দেশ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম। সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আবারও তালিকায় থেকে গেছে সোমালিয়া, আর সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত নিউজিল্যান্ড। শূন্য থেকে ১০ পর্যন্ত স্কেলে নিউজিল্যান্ডের প্রাপ্ত নম্বর ৯ দশমিক ৪।
বাংলাদেশ পেয়েছে ২ দশমিক ৪ এবং সোমালিয়া ১ দশমিক ১। (সূত্র : প্রথম আলো)।
২০০৮ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ২ দশমিক ১ পয়েন্ট পেয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে ছিল ১৪৭তম স্থানে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অগ্রগতি দশমিক ৩ পয়েন্ট। একই পয়েন্ট পেয়ে ১৩৯তম স্থানে বাংলাদেশের সঙ্গী পাকিস্তান, বেলারুশ ও ফিলিপাইন।
(সূত্র : প্রথম আলো)।
এটি অবশ্যই গ্লানিমোচনের পথে আমাদের একটি বড় সাফল্য । তাই বলে এই সাফল্যের আনন্দে গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না । মনে রাখতে হবে, আমরা এখনও বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের শীর্ষ তালিকার ১৩ তম অবস্থানে আছি ।
আমাদেরকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে এবং সেই পথ কুসুমাত্তীর্ণ নয় ।
আর এক্ষেত্রে সরকার, দুদক, বিচার-বিভাগ, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অর্থাৎ রাষ্ট্রযন্ত্রের পাশাপাশি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদেরকেও যার যার অবস্থানে থেকে যথার্থ ভূমিকা পালন করতে হবে ।
আমরা যদি নিজের বিবেককে জাগ্রত করতে পারি এবং নিজে সকল প্রকার অসদুপায় অবলম্বন থেকে দূরে থাকি ; একইভাবে নিজের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অধস্তন কর্মচারীদের মধ্যে যাদের এই ধরণের প্রবণতা আছে তাদেরকে ওই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারি, তাহলে তো আর কোন দুর্নীতি ই হওয়ার কথা না ।
প্রত্যেক মানুষই কারও না কারও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ।
আর রাষ্ট্রযন্ত্রের কাজ হল - প্রকৃত অপরাধীকে সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি প্রদান করা, যাতে করে নতুন করে কেউ আর এই পথে পা না বাড়ায় ।
একটি সুন্দর ও দুর্নীতিমুক্ত দেশের স্বপ্ন বুকে নিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি ।
সকলের বিবেক জাগ্রত হউক ।
** ব্লগে আমার পূর্ববর্তী পোস্টসমূহ**
১) আমাদের গন্তব্য কোথায় ?
২) জন্মদিন কী শুধুই একটি দিবস ? ? ?
৩) সাবাস বাংলাদেশ !
৪) ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা বা স্কলারশিপ ? ভাল করে যাচাই করে নিন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।