আজ ১৫ নভেম্বর। গত ২০০৭ সালের এই দিন বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যায় "সিডর" নামে ঘূর্ণিঝড়। এটি শুধু বাংলাদেশকে অতিক্রম করেনি। নিয়েছে অনেক প্রাণ। তাই আজ আমি ঘূণিঝড় ও সিডর সম্পর্কে কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
ঘূর্ণিঝড় কি?
ঘূণিঝড় সৃষ্টি মূলত নিম্নচাপ থেকে। নিম্নচাপ বিশিষ্ট ঝড়কেই ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। ঘূর্ণিবতার কেন্দ্রে নিম্ন চাপ সৃষ্টি হলে চাপের সমতা বক্ষার জন্য চতুর্দিকে উচ্চচাপের শীতল বায়ু ঐ কেন্দ্রের দিকে প্রবল গতিতে ধাবিত হয় এবং কেন্দ্রে গিয়ে তা উর্দ্ধগামী হয়। এই কেন্দ্র মূখী উর্দ্ধগামী বায়ুকে ঘূর্ণিঝড় বলে।
ঘূণিঝড় সিডরঃ
"সিডর" হচ্ছে সিংহলি শব্দ।
এর অর্থ হল চোখ। এই ঘূর্ণিঝড়ের আকৃতি প্রায় চোখের আকৃতির মত। সিডর এর গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার/ ঘন্টা। এবং ঝড়টি প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়
বাংলাদেশে সিডরের আঘাতঃ
১৪ নভেম্বর ২০০৭। সারাদেশের আকাশ ছিল মেঘলা।
আবহাওয়াবীদরা প্রথমে ৫ নম্বর সংকেত দিতে থাকেন। এবং তা রাত অবধি ৮নং বিপদ সংকেত গিয়ে পৌছে। ১৫ নভেম্বর সকালে ঘোষনা করা হয় সিডর নামের ঘূর্ণিঝড় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত।
অবশেষে এটি বাংলাদেশের আঘাত হানে ১৫ নভেম্বর রাত ৯টায়।
সর্ব প্রথম এটি আঘাত হানে দূর্বলারচরে মূর্হূতেই লন্ডভন্ড হে যায় সব। পর্যায় ক্রমে এটি আঘাত হানে ররিশালের সকল উপকূলে। পিরোজপূর, পুটয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, লক্ষীপুর, ঝালকাঠি সহ বাংলাদেশের প্রায় ৩১টি জেলায়। এবং প্রচন্ড আঘাতে তুলার মত উড়তে থাকে সব কিছু।
এ যেন রোজকেয়মতের হাসরের ময়দানের মত। এটি সারা রাতের শেষের দিকে উপকূল অতিক্রম করে ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে।
১৬ নভেম্বরের সকালের দৃশ্য
১৬ নভেম্বর যারা বেঁচে ছিল তারা যেন তাদের চেনা এলাকাকে আর চিনতে পারছিল না। সকাল হতেই আর্তনাদের সেই বেদনাবিধুর সুর সকল এলাকা থেকে ভেঁসে আসতে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ে সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
আধা পাকা, কাচা এমনকি পাকা বাড়িও ঝড়েও কবলে পড়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। যে দৃশ্য আসলে নিজে না দেখলে বিশ্বাস করা হয় না।
নদী ডোবা, পুকুরে ভাঁসতে থাকে তাদের প্রিয়জনের লাশ।
আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে এলাকা।
সব কিছু হারিয়ে সবাই নিঃস্ব হয়ে পড়ে
সিডরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ :
সরকারি মতে সিডর কেড়ে নেয় ৩৩০০ হাজার লোক।
কিন্তু রেডক্রস এর মতে মৃত্যের সংখ্যা ২০ হাজারের উপরে। ব্ন্ধ হয়ে যায় সকল যোগাযোগের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট সহ সকল ধরনের ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে।
সিডর আঘাত হানে ১ হাজার ৮১১ টি ইউনিয়ন। প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ সিডরের কবলে পড়ে। ৩১টি জেলার ২১০টি উপজেলায় ২০ লক্ষ একর জমির ফসল নষ্ট হয়,
সাড়ে ১২ লক্ষ গবাদি পশু মারা যায়।
১০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি ডলার বা ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা পূরণ করা বাংলাদেশের জন্য ছিল আসলেই কষ্ট সাধ্য।
সিডরের আঘাতের আরো ছবি পেতে এখানে যান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।