সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!
আমি ভারতীয় ঐতিহ্যের অনুরাগী। অবধারিতভাবে তাই পৌরাণিক কাহিনীগুলো আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি জানি এগুলোতে বিকৃতি আছে, বাড়াবাড়ি আছে, পরিমার্জন আছে, অসত্য আছে। এতদসত্ত্বেও এগুলো আমাকে প্রতিনিয়ত প্রভাবান্বিত করে। কারণ আমার বিশ্বাস এগুলোর মাঝে কিছুটা হলেও সত্যতা আছে যার মাধ্যমে আমি আমার শিকড়ের সন্ধান পেতে পারি, অস্তিত্বের ধারণা পেতে পারি, পূর্বজদের শরীরের ঘ্রাণ নিতে পারি।
আজকাল ভারতীয় হিন্দি চ্যানেলগুলো পৌরাণিক কাহিনীতে ভরপুর। প্রাচীন ভারতের জীবনাচারণের চেয়ে এগুলোতে ধর্মীয় কীর্তিকলাপগুলোই বেশি প্রাধান্য পায়। শিব, বিষ্ণু, দূর্গার মহিমাই এগুলোর বক্তব্য। আমি যে জীবনাচারণ দেখতে চাই তা এগুলোতে পাইনা। তবে যেহেতু বিকল্প কোন পথ নেই তাই এগুলোকেই অবলম্বন হিসেবে বেছে নিতে হয়।
গতকালকে স্টার প্লাসে এমনই একটি পৌরাণিক কাহিনীভিত্তিক ছবি দেখছিলাম। ঠিক পৌরাণিক কাহিনী বললে ভুল হবে। পৌরাণিক একটি চরিত্রকে বর্তমানের শিশুদের উপযোগী করে এর ঘটনাবিন্যাস করা হয়েছে। ছবিটার নাম হচ্ছে, ''মাই ফ্রেন্ড গণেশা''। গণেশ হিন্দুদের ত্রি-ঈশ্বরের অন্যতম ভগবান শিব আর দেবী দূর্গার পুত্র।
শিব কৈলাস পর্বতে থাকেন। ক্ষমতা, যোগ্যতা আর প্রভাব বিবেচনায় একমাত্র ভগবান বিষ্ণু ছাড়া কেউ তাঁর ধারেকাছেও নেই। কার্তিক গণেশের ভাই। ভোজনবিলাসী হিসেবে গণেশের খুব সুনাম আছে। লাড্ডু তার প্রিয় খাবার খাবার।
মুষিক তাঁর বাহন। বাবার মতো সেও অত্যন্ত ক্ষমতাধর। যেকোন পূজার শুরুতে গণেশের পূজা করতে হয়। তাঁকে যাবতীয় অনাকাংখিত বাঁধা (Obstacles) দূর করার দেবতা হিসেবে গণ্য করা হয়। মহারাষ্ট বা গুজরাটে সেই সর্বাপেক্ষা পূজ্য দেবতা।
যাহোক, ছবিটার সার কাহিনী হচ্ছে দৈবক্রমে একটি ছোট বাচ্চার সাথে শিবপুত্র গণেশের দেখা হয়। তারপরে বন্ধুত্ব এবং দুজনের বন্ধুত্বকে কেন্দ্র করে মজার মজার ঘটনা। তবে আমার কাছে মজার লেগেছে ভিন্ন একটি ঘটনা। আমার পোস্টের আলোচ্য বিষয়ও ওটা।
ইংরেজির অতি প্রভাবের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে লোকাল ভাষার সাথে ইংরেজির মিশ্রণের ফলে ইতোমধ্যেই নতুন একটি ভাষার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলা ও ইংরেজি মিশ্রণের ফলে সৃষ্ট ভাষাটিকে যদি আপনি বাংলিশ বলেন তবে হিন্দী আর ইংরেজি মিশ্রণের ফলে সৃষ্ট ভাষাটিকে আপনি হিংলিশ বলতে পারেন। তবে এদেশে বাংলিশের প্রভাব বা রেওয়াজটা যতোটানা লোকপ্রিয়তা পেয়েছে তার চেয়ে হিংলিশ ভারতে অনেক বেশি লোকপ্রিয়তা পেয়েছে। বলা যায়, ভারতের অন্যতম চর্চিত এবং জনপ্রিয় ভাষা এটা। আলোচিত ছবির সেই ছোট্ট শিশুটিও হিংলিশ ভাষায় অভ্যস্ত। কিন্তু যে বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি মজা বা আনন্দ দিয়েছে তাহলো ভগবান গণেশ ইংরেজি বুঝেননা।
তাই অভ্যাসের বশে ছোট্ট শিশুটি কোন ইংরেজি শব্দ বলে ফেললে ভগবানের না বুঝার কারণে তাঁকে তা হিন্দীতে অনুবাদ করে দিতে হচ্ছে। বিষয়টা কতো হাস্যকর!! প্রতাপশালী ভগবান যিনি সমস্ত পৃথিবীকে রক্ষা করবেন, যিনি মানুষকে মুক্তি দিবেন, যিনি সমস্ত মানুষের ভরণপোষণ করবেন তিনি ইংরেজি বুঝেন না। তাহলে পৃথিবীজুড়ে যে কোটি কোটি ইংরেজি ভাষার লোক আছেন তাঁরা কোন ভাষায় ভগবানের কাছে প্রার্থনা করবেন? তাঁরা কিভাবে মুক্তির পথ খুঁজবেন?
আসলে ভগবানেরতো হিন্দীও বুঝার কথা নয়। ভারতের পুরাণ, মহাকাব্য, বেদ, উপনিষদ, স্মৃতি সমস্ত কিছু সংস্কৃত ভাষায় লেখা। ভগবানের বর্ণনা দেয়া হয়েছে সংস্কৃত ভাষায়।
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তার রূপ দর্শন করিয়েছেন সংস্কৃত ভাষায়। অর্থাৎ ভগবানের ভাষা সংস্কৃত। কালের প্রবাহে ভগবানের সংস্কৃত ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রথা অনুযায়ী ভাষার সাথে ভগবান নামক জাতটারও বিলুপ্ত হওয়ার কথা। কারণ বেশিরভাগ জাতিই তার ভাষার মাধ্যমে পরিচিত।
এখন বিলুপ্ত ভগবান এবং ভগবানের বিলুপ্ত ভাষাকে যদি ক্ষমতাধর হিন্দীভাষীরা নিজের মতো করে নেয়, নিজের মতো রূপ দেয় তখন ভগবানের কিইবা করার আছে। হায়! ভগবান তুমি কতো অসহায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।