বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
দারায়বৌষই ইতিহাসে প্রথম যিনি দাসদের মজুরি মুদ্রায় প্রদান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এর আগে আমি প্রাচীন পারস্যের সম্রাট করু বা সাইরাস দ্য গ্রেটকে নিয়ে লিখেছিলাম। আজ আরেকজন পারশিক সম্রাটের কথা বলব।
তিনি দারায়বৌষ; ইংরেজিতেDarius । ভারতের পশ্চিম সীমান্ত থেকে শুরু করে গ্রিসের পূর্ব সীমান্ত এবং দক্ষিণে মিশর অবধি ছড়িয়ে ছিল তাঁর রাজ্য; খনন করিয়ে ছিলেন নীল নদের খাল, নির্মান করেছিলেন বিশাল এক রাজকীয় সড়ক।
দারায়বৌষ সময়কাল ছিল ৫৪৯ থেকে ৪৮৬ খ্রিস্টপূর্ব।
তিনি সাইরাসের (আকামানিদ) বংশের একজন হলেও ঠিক সাইরাসের পুত্র ছিলেন না। দারায়বৌষ আসলে ছিলেন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী; তিনি সাইরাসের এক ছেলেকে হত্যা করে পারস্যের ক্ষমতা দখল করেছিল।
খুলে বলি।
দারায়বৌষ এর বাবার নাম ছিল হাইসতাসপেস। হাইসতাসপেস প্রথমে ছিলেন সাইরাসের সময় পারশিক সেনাবাহিনীর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা। হাইসতাসপেস মনে হয় সাইরাসের প্রিয়ভাজন ছিলেন। সাইরাস তাকে পার্থিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন ।
হাইসতাসপেস স্বপ্ন দেখতেন- ছেলে একদিন পারস্যের সম্রাট হবে-বাবাকে শেষ জীবনে সুখেশান্তিতে রাখবেন। সাইরাস ছিলেন প্রজ্ঞাবান। তিনি দারায়বৌষ কে ঠিকই সন্দেহ করতেন। কাজেই সন্দেবশত, দারায়বৌষ কে মিশরে পাঠিয়ে দিলেন সম্রাট সাইরাস।
দারায়বৌষ বাধ্য হয়ে মিশরে গেলেন।
সাইরাসের এক ছেলে তখন মিশরের শাসক। নাম: ক্যামাইসেস। ক্যামবাইসেস -এর সেনাবাহিনীতে দারায়বৌষ-এর সামান্য চাকরি জুটল। সে বর্শা বহন করার দায়িত্ব পেল। ।
তবে দারায়বৌষ-এর ব্যাক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। সৈন্যবাহিনীতে সে দারুণ জনপ্রিয় ছিল। সৈন্যবাহিনীতে সে হয়ে উঠল মধ্যমনি। কাজেই ক্যামবাইসেসের মৃত্যুর পর সৈন্যরা দারায়বৌষকেই ক্যামবাইসেসের সৈন্যবাহিনীর দায়িত্ব নিতে চাপ দিল। দারায়বৌষ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।
সুযোগ এল।
সাইরাসের অন্য ছেলের নাম ছিল গাওমাতা। ক্যামবাইসেসের মৃত্যুর কথা শুনে গাওমাতা পারস্যের সিংহাসনের বসল। ১১ মার্চ ৫২২ খ্রিস্টপূর্ব। দারায়বৌষ সসৈন্য পারস্য অভিমূখে রওনা হল।
জুলাই মাসে পারস্য পৌঁছল দারায়বৌষ। তারপর পরিকল্পনা মোতাবেক এক সামরিক অভ্যূত্থান ঘটাল সে। তার অনুগত সৈন্যরা গাওমাতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে।
পরে এ ব্যাপারে দারায়বৌষ-এর বক্তব্য ছিল এরকম: সে নাকি নকল গাওমাতাকে গত্যা করেছে। কারণ ক্যামবাইসেসের মিশর যাওয়ার আগেই এই নকল গাওমাতা নাকি আসল গাওমাতাকে হত্যা করেছিল।
লোকটা আসলে নাকি মদ্র। আর মদ্ররা তো ঠিক পারশিক নয়। ইত্যাদি। ইত্যাদি।
পারস্যের বেহিসতুন নামে একটা জায়গায় সম্রাট দারায়বৌষ-এর আমলের শিলালিপি পাওয়া গিয়েছিল।
সেই শিলালিপিতে এসব তথ্য লেখা রয়েছে।
যাহোক। তারপর কি করলেন দারায়বৌষ?
সম্রাট সাইরাসের রাজধানী ছিল পাসারগাদে। তারই দক্ষিণে বিশাল এক প্রাসাদ নির্মানে হাত দিলেন দারায়বৌষ। পরবর্তীকালে গ্রিকরা যে প্রাসাদটির নাম দিয়েছিল পার্সিপোলিস।
পার্সিপোলিস মানে- পারশিকদের নগর। পার্সিপোলিস পৃথিবীর স্থপত্যের ইতিহাসে আজও এক প্রগাঢ় বিস্ময়!
দারায়বৌষ তারপর পার্থিয়া থেকে বৃদ্ধ বাবাকে, মানে, হাইসতাসপেসকে নিয়ে সেই প্রাসাদে তুললেন। বাবা ছেলেকে বললেন, পারস্যের সম্রাট হয়েছ। এখন তো ইজ্জত বাড়াতে হয়। ইজ্জত বাড়াতে হলে রাজকীয় ঘরে বিয়ে করতে হয় বাছা।
মানে? তুমি কি বলছ বাবা? দারায়বৌষ তো অবাক।
হাইসতাসপেস তখন বললেন, আরে এখন বিয়ে কর। সম্রাটের দুই মেয়ের এখনও বিয়ে হয়নি। রাজকীয় পরিবারে বিয়ে না করলে ইজ্জত বাড়ে?
ও আচ্ছা।
সাইরাসের দুই মেয়ে ছিল।
তাদের নাম- আটোসা আর আরতিসতোন। তাদের বিয়ে করলেন দারায়বৌষ। অভ্যূত্থানে নিহত সাইরাস-পুত্র গাওমাতারও এক মেয়ে ছিল। নাম পারমিস। পারমিসকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেছিলেন সম্রাট দারায়বৌষ।
বাপের খুনির সঙ্গে বিছানায় যেতে কেমন লেগেছিল পারসিসের?
যা হোক। ব্যাবিলনে তখন দারায়বৌষ-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছিল। গাওমাতাপন্থিরা একজোট হচ্ছিল ওখানে। অত্যন্ত নির্মম উপায়ে দারায়বৌষ দমন করলেন সে বিদ্রোহ।
সাম্রাজ্য এখন শান্ত।
কাজেই, দারায়বৌষ এবার সাম্রাজ্যে বির্নিমানে মন দিলেন। সম্রাট দারায়বৌষ ভালো করেই জানতেন যে- যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে ব্যবসা বানিজ্যের অন্যতম প্রধান শর্ত। এই লক্ষ্যে সারদিস থেকে ইলম অবধি বিশাল এক রাজকীয় সড়ক নির্মান করেছিলেন। (সারদিস থেকে ইলম মানে বর্তমানকালের তুরস্ক থেকে দক্ষিণ ইরান। ) গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস সে রাজকীয় পথের বর্ননা লিখে রেখেছেন আমাদের জন্য।
ভারি নিরাপদ ছিল নাকি সে রাজকীয় পথ। পথে অশ্বারোহী পারশিক সৈন্যরা পাহারা দিত। পথের দুপাশে ছায়াময় গাছের সারি। পথে চলেছে বাজিন্য ক্যারাভান। কয়েক মাইল পরপর মনোরম সরাইখানা।
সরাইখানায় নাকি থাকাখাওয়ার সুবন্দোবস্ত ছিল। কাজই, সম্রাট দারায়বৌষ-এর আমলে ওই অঞ্চলের ব্যবসাবানিজ্যের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছিল।
আগেই বলেছি আমি- ভারতের পশ্চিম সীমান্ত থেকে শুরু করে গ্রিসের পূর্ব সীমান্ত এবং দক্ষিণে মিশর অবধি ছড়িয়ে ছিল সম্রাট দারায়বৌষ-এর রাজ্য। মিশরের
নীল নদের খাল খনন করেছিলেন সম্রাট দারায়বৌষ। আজ যেটা সুয়েজ খাল-সেটি খননের উদ্বোধন সম্রাট দারায়বৌষই করেছিলেন।
একটি শিলালিপিতে সে কথার উল্লেখ রয়েছে:King Darius says: I am a Persian; setting out from Persia I [1] conquered Egypt. I ordered to dig this canal from the river that is called Nile [2] and flows in Egypt, to the sea that begins in Persia. Therefore, when this canal had been dug as I had ordered, ships went from Egypt through this canal to Persia, as I had intended.
দারায়বৌষই ইতিহাসে প্রথম দাসদের দিনের মজুরি মুদ্রায় প্রদান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর অন্যতম কারণ। সম্রাট দারায়বৌষ ছিলেন জরথুশত্র ধর্মের অনুসারী। জরথুশত্রর অন্যতম নির্দেশ ছিল গরিবদুঃখীদের প্রতি সদয় আচরণ ও তাদের যথাসম্ভব প্রতিপালন। সম্ভবত কথাটা সম্রাট দারায়বৌষ জীবনভর মনে রেখেছিলেন:দাসদের মজুরি মুদ্রায় প্রদান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গরিবের হাতে টাকা এসেছিল। মুদ্রার সঞ্চলন হয়েছিল। অর্থনীতির বিকাশ হয়েছিল। প্রাচীন পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার কথা মনে রাখলে এ অবশ্যই এক অনন্য নজীর। কাজেই অনুমান করা যায় যে -সম্রাট দারায়বৌষ ছিলেন সুশাসক।
অধিকন্তু, কর আদায়ে অনন্য নজীর স্থাপন করেছিলেন সম্রাট দারায়বৌষ। কর কত হবে-তা নাকি প্রজারাই ঠিক করতে পারত তাঁর আমলে।
প্রাচীন পারস্যে এই অতি প্রতাপশালী সম্রাটের মৃত্যু; ৪৮৬ খ্রিস্টপূর্ব।
উৎস:
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।