ঘটনায় মূল দুই প্রতিপক্ষের একপক্ষ হইলো প্রথম আলো, আর অন্য পক্ষ হইলো যারা প্রথম আলোর কারণে কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্থ । অনেকেই এই বাক্যটায় শুধু এবং কেবল শুধু বসুন্ধরার নামই ভাবতেসেন । কিন্ত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের কথা ভাবতেসেননা কেন ? অন্য পত্রিকাগুলিরও যে এতে লাভ হইসে ? বাসায় প্র.আ. রাখা ছেড়ে দিয়ে কোন পত্রিকা রাখা শুরু করসেন আপনে ? প্রথমআলো কি পরিমান টাকার বিজ্ঞাপন পায় এইটা কেউ জানেন ? এই পত্রিকাটা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের কি পরিমান ফায়দা হবে কারো কোনো আন্দাজ আছে ?
প্রথম থেকেই ধর্মীয় মৌলবাদীদের চক্ষুশূল এই পত্রিকার কোনো একটা খুঁত বের করতে হবে এইটাই বড় কথা। পুরাটাই যার যার স্বার্থের খেল এইখানে, যারা ভাবতেসেন পবিত্র ধর্মরক্ষার জন্য এরা জেহাদে নামসে, তারা সামান্য মগজ ব্যবহার করেন । নবী (সঃ)-এর নাম কেন, স্বয়ং ওনার অবমাননা করলেও এদের কিস্যু যায় আসেনা।
যায় আসে শুধু যখন এদের স্বার্থের অবমাননা ঘটে । এই হাউকাউটা যারা তুলসে তাদের বেশীরভাগেরই ছিলো রাজনৈতিক অথবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য । যেই কার্টুন নিয়ে এত চিল্লা-ফাল্লা হচ্ছে একজন ধার্মিক মুসলিমকে ( যে এসব কিছুর ব্যপারে অজ্ঞ ছিল ) আমি আঙ্গুল দিয়ে দেখায় দেয়ার পরও সে বুঝতে পারেনাই যে ঠিক কোন কথাটায় অবমাননাটা হইসে। আর হুজুগে জাতও কান চিলে নিয়ে গেসে শুনেই দিসে দৌড় । কার্টুনটা হয়তো পড়েও দেখেনাই ।
তারপরও বলতেসে , "সত্যি যদি সে অবমাননার উদ্দেশ্যে এটা করে থাকে তাহলে ..... " ....আরে , এই কার্টুন কি আরিফ নিজে বানাইসে ? ওই ছোট্ট ছেলেটার এত বুদ্ধি আছে ? ধর্ম অবমাননার পেছনে কোনো মোটিভ আছে তার ? প্রচলিত একটা কৌতুক, ছোটবেলা থেকে শুনতেসি, সেবা প্রকাশনীর একটা জনপ্রিয় কৌতুকের বইতেও এইটা পড়সি । সব ফান ম্যাগাজিনেই এমন অনেক কার্টুন ছাপা হয় যেটা আসলে একটা প্রচলিত কৌতুক। পড়েননাই কোনদিন এমন কার্টুন ?
আবার কেউ কেউ বলতেসে "অপরাধ যেই করুক তাকেই......শিবির করলে তাকেও....." । এইটা কোনো অপরাধই না । শিবির একদা করসিলো কারণ তারা নিজেরাও খুব ভালো করে বোঝে যে এটা আসলে কোন অপরাধই না।
শুধু একটা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পাঁয়তারা। এই কৌতুকের সাথে নবীজীর কোনো সম্পর্কই নাই। এইটা ধর্ম সম্পর্কে অশিক্ষিত মানুষকে নিয়ে একটা রসিকতা মাত্র। " আমার বিড়ালের নাম মোঃ বিড়াল " এই কথায় নবীজীকে বিড়ালের সাথে তুলনা করা হইসে এটা যারা ভাবতে পারে, তাদের ভাষা বা ধর্ম কোন বিষয়ে কোন জ্ঞান নাই । এবং যারা এইটা জেনেও বারবার একই কথা বলতেসে, সত্যিকার অবমাননাটা আসলে তারাই করতেসে।
তাহলে আমি বলতে পারি, কেউ যদি নিজের নামের আগে মোঃ লাগায় সেও নবীজীকে অপমান করলো, সাধারণ মানুষ হয়ে সে নিজের সাথে নবীজীর তুলনা করতেসে ?
"ছোট মানুষ একটা ভূল করতেই পারে....একটা ভূল করে ফেলসে...মাফ চাইসে ক্ষমা করা উচিৎ....." ইত্যাদি যারা বলতেসেন, তারা আগে এইটা বোঝেন । যে কোনো ভূলই করেনাই সে কেন ক্ষমা চাইবে ? পাবলিক সেন্টিমেন্টে আঘাত লাগসে বলে যাদের ধারণা ... যেই জোক্সে এমন হয় সেটা এড়ায় গেলেই তো হয়.....তাদের বলতেসি, পাবলিক সেন্টিমেন্টে আঘাত লাগেনাই বরং জোর করে লাগানো হইসে । এই জোক যার সাথে নবীজীর কোনো সম্পর্ক নাই, তাতেই যদি পাবলিক সেন্টিমেন্টে আঘাত লাগতো , তাহলে এই জোক এতকাল ধরে প্রচলিত থাকতে পারতোনা। অনেক ধর্মপ্রাণ ব্লগারও এখানেই জানাইসেন যে এই জোককে তারা আঘাত লাগার মত কিছু বিবেচনা করেননা । তাহলে হঠাৎ কেউ কেউ এত আঘাত পাচ্ছে কেন ? গোয়েবলসের নীতিটা আবার মনে করায় দেই.....একটা মিথ্যা বারবার অসংখ্যবার বলতে থাকলে মানুষ সেটা বিশ্বাস করতে শুরু করে।
নির্বাচনের আগে আগে প্রথম আলোর উপর থেকে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস উঠে যায় তাহলে লাভটা কাদের কাদের হইতো, এবং কারা কারা তখন এজন্য আন্দোলনে নামসিলো এইটা এবার হিসাব করেন। দুয়ে দুয়ে চার কি তবুও মিলাইতে পারতেসেননা ?
"সম্পাদক কেন খেয়াল করলোনা আসল দোষ তো তাদের ".... আমি নিজে যদি সম্পাদক হইতাম আমিও এইটা ছাপার আগে ভাবতে পারতামনা এই কৌতুকে এত প্যাঁচ ধরা যাইতে পারে । প্রথম আলোর যদি এইটা বুঝার ক্ষমতা থাকতো তো তাদেরকে 'ক্যাটা ফালাইলেও' এই জিনিষ ছাপতোনা । প্রথম আলো সম্পাদকের কি মাথা খারাপ হইসে যে জেনেবুঝেও সে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারবে ? সে কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের কাছে নিজের ইমেজ নষ্ট করবে ? সে কি ভাবসে যে এই কৌতুকে মৌলবাদীগুলির ধর্মানুভূতি চাগায় উঠবে !! মানুষ যদি অপমানিত বোধ করতে চায় তাইলে তারে ঠেকায় কে ? আমি একটা হাসি দিলেও বলবে, তুই আমারে দেইখা ভেংচি দিলি ক্যা?
অপমানের কি কোন মানদন্ড আসে ? একটা জোক মনে পড়লো, এক সেলসম্যানের বক্তব্য, আমাকে কতজন দরজা থেকে বের করে দিসে, মুখের ওপর ঠাস করে দরজা লাগায় দিসে, কুকুর লেলায় দিসে, কিনতু কেউ আপনার মত অপমান করেনাই !!
ধর্মের সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত যুদ্ধ নাই। কারো ধর্ম কারো পবিত্রবিশ্বাসকে হার্ট করার বিপক্ষে আমি।
আর না আমি প্রথম আলোর পক্ষপাতিত্ব করতেসি । তারা ভালো না খারাপ, তাদের সাথে কি হওয়া উচিত....আমার কিস্যুই যায় আসেনা তাতে । এনিহাউ তারা এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসবে জানা কথা। তারাও তো আর নিরস্ত্র না । কিন্তু আরিফ নামের ওই নির্দোষ ছেলেটা এইসব রুই-কাতলাদের লড়াই সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থেকে নিরস্ত্র অসহায়ের মত সবার পাপের ভার একাই বহন করলো।
কারণ সে যে আমার আর আপনার মতই এই দেশের সাধারণ মানুষের একজন । যাদের কোনো টাকা নেই , কোনো ক্ষমতা নেই , আর তাই সত্যকে তুলে ধরার কোনো উপায় নেই । নির্বাচনের আগেমাত্র ব্যবহার করে পরে ব্যবহৃত টয়লেট পেপারের মত ছুড়ে ফেলে দেয়া সাধারণ জনগন। আমাদেরই একজনের জীবন নষ্ট হয়ে যায় ওই ক্ষমতাবানদের খেলায় , দেশের আইন আর সংবিধানকে যারা যথেচ্ছা ব্যবহার করে আমাদের চোখে ধূলা দিতে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য । আমাদের তর্ক আর কনফিউশন তবুও শেষ হয়না।
আমরা তবুও সন্দেহ প্রকাশ করতেই থাকি । চোখের সামনে সব প্রমাণ দেখেও বলি, কে জানে কোনটা সত্যি ! কোনদিন কি আমরা এক হতে পারবোনা ? না যদি পারেন , তো , কাল আপনিই হবেন দ্বিতীয় আরিফ !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।