আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুশায়া ঢাকা শীত :খেজুরের রস: পর্ব-১

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d

ঠিক মনে নেই, কত দিন খেজুরের রস খাইনি। জানিনা এই ব্যাস্ত ঢাকায় খেজুরের রস কিনতে পাওয়া যায় কিনা? পাওয়া না যাওয়ারই কথা। হয়ত ঢাকার আশেপাশে এলাকা থেকে আসলেও আসতে পারে। কিন্তু এই যান্ত্রিক নগরে রসের গ্লাসে চুমুক দিলে সেটা বিস্বাদ লাগারই কথা।

কারণ খোদ, গ্রামেই যেখানে পানি মেশানো রস বিক্রি করা হয় সেখানে এই শহরে তো সেই খাঁটি রসের কথা চিন্তাও করা যায় না। তবে কিছু কিছু চিত্র গ্রামেই মানায়। চাদর মুড়ি দিয়ে দুটি রসের কলসি বাঁশের আগায় বেঁধে রসওয়ালা দ্রুত পায়ে হেঁটে আসছে, এই দৃশ্যটা হয়ত অনেকেরই চেনা অন্তত যাদের গ্রামের সাথে যোগাযোগ আছে। আর সেই রসওয়ালাকে পথের মাঝে থামিয়ে চলে রস খাওয়ার আয়োজন। যারা শহরের থাকেন বা শহরে জন্ম তারা হয়ত গ্রামের কিছু সৌন্দর্য্যের সাথে পরিচিত হ্ওয়ার সুযোগ থাকে না।

কিন্তু এই খেজুরের গাছ থেকে কিভাবে রস সংগ্রহ করা হয় সেটাও হয়ত অনেকে জানেনা। গাছের উপরের দিকে অংশটি তুলনামূলক নরম থ‍াকে নীচের অংশের চেয়ে। সেই অংশটিকে দা দিয়ে চেঁছে ফেলা হয়। আরো নরম অংশ যখন বের হয়ে আসে তখন সেখানে বাঁশের পাতলা একটা কঞ্চি পুঁতে দেয়া হয়। আর একটা কলসি ঐ কঞ্চির নীচে বেঁধে দেয়া হয়।

সারারাত রস চুঁইয়ে চুঁইয়ে পাতিলের মধ্যে জমা হয়। আর একেবারে ভোরবেলা সেটা পান করার জন্য নামানো হয়। কিছু অঘটনঃ ১) এই রসকে ঘিরে কিছু অঘটনও ঘটে। যেমন: রাতের আঁধারেই রস চুরি হয়ে যায়। কলসি থেকে রস ঢেলে দুষ্ট ছেলেরা সেটাতে পানি দিয়ে রাখে।

এটা অবশ্য গ্রামে করা হয় সাধারণত মজা করে। কোন চুরির লক্ষ্য নিয়ে এটা হয় না। ২) অনেক সময় রসের হাড়িতে সাপও মুখ দেয়। সেক্ষেত্রে সেই রস মানুষের জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারণ হয়। এইজন্য রসের হাড়ির মুখ পাতলা কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়‍া দেয় গাছিরা।

৩) আর কিছু রস একেবারে ভোরবেলায় পাখি খেয়ে ফেলে। খেঁজুরের গুড়ঃ এই রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরী করা হয়। দুই রকমের গুড়ের মধ্যে এই খেজুরের গুড় একরকম। একটা বড় কড়াইতে অনেকক্ষণ ধরে জ্বাল দিতে দিতে একসময় এই রস একেবারে ঘন হয়ে যায়। ‍তারপর সেটা একটা মাটির ছাঁচে ঢেলে বিভিন্ন সাইজের গুড় তৈরী করা হয়।

বিশেষ অপব্যাবহারঃ তবে এই রসের সুমিষ্ট স্বাদ খুব অল্প সময়ের জন্য। একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই খেজুরের রসের স্বাদ বিস্বাদ হতে থাকে। গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রায় ৮/১০ ঘন্টা পর এটা নষ্ট হয়ে যায়। তবে সেটা তখন ফেলে দেয়া বস্তুতে পরিনত হয় না। ওটা ব্যাবহার করা হয় নেশার বস্তু হিসেবে।

যাকে গ্রামের ভাষায় বলে “তাড়ি”। এটা অধিক মাত্রায় পান করলে মাথাটা একটু ঘোরে এবং একটা নেশা তৈরী হয়। এক্ষেত্রেও এই খেজুরের রসের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এই আগত শীতে আমরা যদি পারি ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবো আমাদের মূলে, মানে গ্রামে, কারণ কিছু সৌন্দর্য্য অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।