রুপা
ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া ভাতিজা এসে বলল, ফুফি আমাকে একটা গল্প লিখে দাও। স্কুলের বার্ষিক ম্যাগাজিনে ছাপাতে দেব। আমি গল্প লিখব কী! আমি কি সেলিনা হোসেন যে ফরমায়েসি লেখা লিখবো? নাকি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন? ফুফি এরা কারা? যা ভাগ, মুর্খের সাথে আমি কথা বলি না। ক্লিয়ার আউট। তাও নাছোড়বান্দা।
ঘ্যাঁনর ঘ্যাঁনর। লিখে দাও লিখে দাও। আর সময় নেই। অত তারিখের পড় আর লেখা নিবেনা। ইত্যাদি।
সাত দিন বসে দিলাম গল্প লিখে। ক্রিকেট ও পরীর গল্প। এইযে গল্প, খুশিতো? হু খুশি।
ক্রিকেট আর পরীর গল্প
দুপুরে খেতে বসেছি। বাবা জানতে চাইলো, মাস অন্তঃ পরীক্ষার রেজাল্ট কী? সাথে সাথে আমি বিষম খেলাম।
পানির মগটা আম্মু এগিয়ে দিল। ঢকঢক করে শেষ করলাম পুরো মগ। মগটা রাখতে গেছি অমনি বাবার হুংকার, রেজাল্ট বললে না? হাত ফসকে মগটা পড়ে গেল প্লেটে। প্লেট উল্টে পড়ল বাবার কোলে। সাথে সাথে বাবা আমার গালে কষে এক থাপ্পর বসাল! থাপ্পর খেয়ে আমি চেয়ার উল্টে পড়ে গেলাম আলতা বুয়ার ঘর মোছা ময়লা পানির বালতিতে।
আম্মু দৌড়ে এল, কর কী! কর কী! বলে। বাবা আর এক থাপ্পর দিতে নিয়েও হাত ফিরিয়ে নিল। মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক, এ যাত্রায় রেজাল্ট বলার ভয়াবহ পরিনতি থেকে রেহাই পাওয়া গেল।
বিকেলে ক্রিকেট খেলতে গেছি।
হাতে ব্যাট আর বল। সবাই এলো। দু’দলে ভাগ হতে গিয়ে দেখলাম আমি বিজোড়। বড় ভাইয়ারা ব্যাট-বল কেড়ে নিয়ে খেলা শুরু করে দিল। আমাকে বলল, ভাইয়া তুমি আম্পায়ার।
তুমি দ্বিতীয় ইনিংস -এ ব্যাট করবা। রাগে কষ্টে আমি নিজের চুল নিজে টাললাম। মন চাইলো মাথার সব চুল ছিঁড়ে টাক বানিয়ে ফেলি। সন্ধ্যা হয়ে এল। আমি অনেক তদবীর শেষে ব্যাট করতে যাব ঠিক তখন লাগল দু’দলে তুমুল ঝগড়া।
ঝগড়া থামার আগেই আজান দিয়ে দিল। আমার আর খেলা হল না! কপালের পিন্ডি চটকাতে চটকাতে বাসার পথে হাঁটা ধরলাম।
বাসায় ফেরার পথে মনে হল আমি একা না হয়ে আমার একটা ভাইয়া থাকলে দারুন হত। আমি বল করতাম; ভাইয়াটা ব্যাট করতো। ভাইয়াটা বল করতো আমি ব্যাট করতাম।
নিত্য নিত্য আম্পায়ার হওয়ার যন্ত্রনা আর ভাল্লাগে না। প্রায়ই একটা ছোট্ট ভাইয়া কল্পনা করতাম, স্বপ্ন দেখতাম। একদিন অনেক সাহস করে আম্মুকে বলেই ফেললাম, আমার একটা ভাইয়া চাই। আম্মু তার স্বভাবমত হেসে উড়িয়ে দিল। যা ভাগ, পড়তে বস।
আমার মন এতো খারাপ হল।
অনেক দিন পর হঠাৎ আমাদের বাসায় নানু বেড়াতে এলো। আমি খুব খুশি। ক’দিন পড়ের ঘটনা। আমাদের বাসার সামনে পোঁ পোঁ শব্দ করে একটা এম্বুলেন্স এলো।
আম্মু উঠল এম্বুলেন্সে। আমরা গাড়িতে। আমি নানুকে বললাম, নানু আমরা কোথায় যাচ্ছি? তোমার জন্য ভাইয়া আনতে হাসপাতালে যাচ্ছি। ভাইয়া ভাইয়া করে নাকি পাগল হয়েছ? আমি আনন্দে একটা চিৎকার দিলাম। সত্যি!!!? আমার মাথায় আবার ক্রিকেট ঘুরতে লাগল।
আম্মুকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল রাত ১০ টায়। এখন রাত ১১ টা কোন খবর নেই। আত্মীয়-স্বজন, নানু, বাবা সবাই মুর্তির মত দাড়িয়ে আছে। রাত ১১ টা ২৫ এ নার্স এসে সবাইকে কী যেন বলল আর সবার হাড়ি-মুখ আরও কালো হয়ে গেল। নানু, ভাইয়াটাকে নিয়ে আসছে না কেন? আমি দেখবো।
নানু বলল, এইতো আসবে নানু ভাই। ঋতু আপু ভেংচি কেটে বলল ভাইয়া না তোমার একটা আপু হয়েছে। নানুকে বললাম, নানু ঋতু আপু কী বলছে? নানু বলল, হ্যাঁ নানু ভাই তোমার পরীর মত সুন্দর একটা আপু হয়েছে।
হাসপাতাল ভেঙ্গে আমার মাথায় পড়ল না আমি ভেঙ্গে হাসপাতালের মাথায় পড়লাম মনে নেই। প্রচন্ড কান্না পেল আমার।
আমার ক্রিকেট খেলা হবে না? আবার আম্পায়ার হও। আবার ঝগড়া কর। আমি কেঁদে হাসপাতাল মাথায় তুললাম। কখন কেবিনে ঘুমিয়ে গেলাম। জানি না।
দা দা (আসলে ট্যাঁ ট্যাঁ) চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গ গেল। আমি আপুটার কাছে গেলাম। অমনি সে কান্না থামিয়ে দিল। পিটপিট করে তাকাল আমার দিকে । আমি আবার একটু বাইরে গেলাম।
আবার কান্না- দা দা। আমি ভেতরে আসতেই টাওয়েলে জড়িয়ে নানু আপুটাকে আমার কোলে দিল। আবার কান্না থামিয়ে পিটপিট চোখে আমাকে দেখতে লাগল। আমার মনে হল এটা আসলেইতো একটা পরী।
আমার মাথা থেকে ক্রিকেট ভূত নেমে গেল।
পরীটাতো এখনই আমার সাথে খেলছে। আমি সব কষ্ট ভুলে গেলাম আমার ছোট্ট পরী আপুটাকে পেয়ে।
******************************************************************
গল্প পেয়েতো ভাতিজা খুব খুশি। আনন্দে লাফালাফি। গল্প নিয়েও গেল স্কুলে।
স্কুল থেকে ফিরে বলল। এই নাও তোমার গল্প। আমার গল্প লাগবে না। আমি অবাক হয়ে বললাম কেন? বলল, এরচেয়ে অনেক ভাল গল্প আমি নিজে লিখতে পারি। তাই নাকি? হু।
আয় কাছে আয়। কেন? তোর বাবার মত কষে তোর গালে একটা চড় দেই। ইইইই ভেংচি কেটে দিল ভোঁ দৌড়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।