আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রসফয়ার সংক্রান্ত একটি কবিতা এবং কবির জবান



সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবার বলেছেন ক্রসফায়ারের অনুমোদন তার আমলে তিনি দিয়েছেন। বাবর আর একটু বললে বোধ হয় ভালো হোতো যে, ক্রসফায়ার মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের কথামত চলছে বিষেশত মাওবাদী নেতা কর্মিদের হত্যার জন্য ব্যবহ্রুত হবে। বাবর এখন এটা বলছে এই কারণে যে তার নিজের জীবনই ক্রফায়ারের ঝুকির মধ্যে রয়েছে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) এর পুরাধা ব্যক্তিত্ব মোফাখার চৌধুরী আইন শৃঙ্কলা রক্ষাকারী বাহীনির হাতে লাইন অব ফায়ারে নিহত হন। আমি তাঁকে চিনতাম না বা তাঁর পার্টির কেউ নই।

কিন্তু একজন মানুষ তার দর্শন চর্চার কারণে এভাবে মারা গেলো, বিষটি আমাকে ভিষণভাবে নাড়া দিয়েছিলো, সেখান থেকে এই কবিতার অবতারনা। কবিতাটি কলকাতার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদশের একাধিক ছোট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আজকের বাসতবতায় আমার মনে হলো কবিতাটি পাঠকের সমানে আবার নিয়ে আসি নিঃশব্দের অশ্বারোহী আপনি যেখানটায় দাঁড়িয়ে আছেন ঠিক, ঐ জায়গা থেকে পূর্বদিকে সোজা কালো পিচঢালা যে রাস্তাটি ডানের গলির ভেতর ঢুকে গেছে; যেমনটি যায় আমাদের স্বপ্ন অজানা কোন শোলে ইদুরের গর্তে; আপনাকে যেতে হবে ঐ রাস্তায় । ঐ রাস্তা ধরে ডানে একটা পার্লার রেখে বামের রাস্তায় যখন এসে পড়বেন নিশ্চয় মুখে অতিরিক্ত পাউডার দেওয়া স্থুলাকার এক রমণীর সাথে দেখা হবে- উনি মুক্তা বানু ।

অন্তত গত চার বছর ধরে শুধু এ এলাকার মানুষই নয়, গলির মোড়ে যে পাগলটা রোজ পল্টনের ময়দানে ঈশ্বরের বিচার করে গণআদালতে সেও ওকে মুক্তা বানু বলে জানে মুক্তা বানুকে পেছনে রেখে মিসমিল-াহ্ হোটেল ডানে রেখে রুপনগরের রুপহীন এক কঠিন মাটিতে আপনাকে দাঁড়াতে হবে । ওখানটায় ষাটোর্ধ্ব মাথায় কাঁচা-পাকা চুল নিয়ে কিছুদিন আগেও ছিলেন কম. চৌধুরী । কম. চৌধুরী যিনি কমসে কম ষাট বা তার অধিক শীত-গ্রীস্ম-বর্ষা-শরৎ হেমন্ত এবং অবশ্যই বসন্তে বেঁচে ছিলেন এবং রাষ্ট্রের এতো ভালোবাসা, গণতন্ত্র পায়ে দলে কিংবা বলতে পারেন উপো করে বেঁচে ছিলেন এবং একই সাথে আমাদের অনেক শান্তিপ্রিয় গণতন্ত্রীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন । সেই কম. চৌধুরীর বাসাতে ঢুকলে প্রথমে যা দেখা যাবে, তাকবিহীন ঘরভরা বই । মার্কস-লেনিন সাহেবের সব সংকলন।

মাও সেতুংয়ের যুদ্ধ বাঁধানো লাল বই ইতিহাস আর দর্শন কেমন ফুরফুরে ভাবে চেয়ে আছে ঘরের একমাত্র জলরঙ্গের চিত্রের দিকে । ছড়ানো ছিটানো মার্কস-লেলিন-মাও সেতুংয়ের মধ্যে সঞ্চয়িতার ক’টা পাতা এখনো খোলা । আপনি যদি খুব ভালো করে ল্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন ঘরের মধ্যে খেজুরপাতার একটা পাটি ব্যতীত বসবার কিংবা ঘুমাবার কোন ব্যবস্থা নেই । সাদা-পাকা চুল নিয়ে ষাট বা ততোধিক অবগাহনের কাল পেরিয়ে কম. চেধৈুরীর কি তবে সবুজ ফসলের মাঠে একটি ফিঙ্গের কালো পাখা হয়ে ধান পোকাদের গোপন ব্যথা বনে সটান কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলেন? ঠিক এই ঘরটায় তিনি পাতার পর পাতা কলমবন্দি করেছেন, তাঁর সেইসব অগণিত লেখনির মাঝে কোন প্রেমপত্র ছিলো কিনা এ বিষয় স্পষ্ট করে বলা কঠিন; কারণ রাষ্ট্র নামক সুন্দর পরিশীলিত এবং অবশ্যই গণতন্ত্রী এই প্রতিষ্টান তাঁর নিরীহ মানবিক দূত দিয়ে সেসব আলামত সুষ্ট ও সুবিচারের জন্য বহুযন্ত করে সংরণ করেছেন । কম. চৌধুরী কখনো ঝুম বর্ষায় ভিজতে চেয়েছিলেন বা কখনো ভিজেছেন কিনা আমাদের জানা নেই; তবে তাঁর ঘরের জল রঙ্গের চিত্রকর্মে যে কিশোরীর অবয়ব, তার চোখে বৃষ্টির পানি ছিল আর পেছনের আকাশটা নীল আপনাকে এ পর্যন্ত এসে থেমে যেতে হবে কেননা আপনি আর কিছুই দেখতে পাবেন না ।

এবার আপনার সামনে গণতান্ত্রীক মানবিক রাষ্ট্র প্রেসনোট ধরিয়ে দেবে ঃ ‘গতকাল রাতে চরমপন্থি নেতা মোফাখখারুল ইসলাম চৌধুরী তার গোপন অস্ত্র ভান্ডার পুলিশকে দেখিয়ে দিতে নিয়ে গেলে, ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিসের উপর গুলি বর্ষণ করে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায় এসময় চৌধুরী পলায়নকালে নসফায়ারে পড়ে নিহত হয়’ তবে গভীর রাতে উঁইডিবির পরে যেখানটায় দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রীক মানবিক রাষ্ট্রের দূতেরা তাঁকে বলেছিলো ঃ দৌড় দাও । আর কম. চৌধুরী তাঁর দরাজ কন্ঠে শেষ রাঁতের নিরাবতার বুকে হাতুড়ি মেরে বলেছিলো ঃ ‘বিক্রদ্দব দীর্ঘজীবী হোক’ তাঁর সেই চিৎকারে খোয়াবে সঙ্গমে প্রার্থনারত মানুষ ও অমানুষের কলিজায় আগুন ধরে গিয়েছিলো আর শান্তির মানবিক দূতেরা রবীন্দ্র সংগীতের মত কোমল অস্ত্রের ট্রিগার টিপতে কমপে দশ সেকেন্ড ভুলে গিয়েছিলো । যার চোখে খেলা করে ফসলের শীষ নারীর হৃদয় ভোগ্য নয় আর ফাট বাড়ির শেকল পরানো আকাশ থেকে মুক্ত হবে উত্তর-কৈশোর যুবক-যুবতী স্বপ্ন দেখবে একটি বর্ষণমুখর দুপুরের সে চোখ একজন চরমপন্থির, একজন মোফাখখার চৌধুরীরর কিংবা বলতে পারেন একজন খুনি মাতালের চোখ । ঋত্বিক নামের যে মানুষটিকে তিনি শেষ ফোনে বলেছিলেন ঃ তোমরা ভালো থেকো । কম. চৌধুরী কি জানতেন না, গণতন্ত্রের সোনার দেশে আমরা সবাই রাঙ্গা রাজপুত্র ।

আমাদের ভাতের কষ্ট নেই, ভোটদানের কষ্ট নেই এমনকি ভালোবাসার কষ্টও নেই; তিনি কী জানতেন না, আমরা সবাই ভয়াবহ ভালো আছি । আপনাকে এই ফাট বাড়ি থেকে নেমে সব ভুলে যেতে হবে কেননা খোয়াবে অথবা সঙ্গমে যদি কখনো কম. চৌধুরী আপনাকে ভর করে তবে কোন এক শীত কিংবা বসন্তের রাতে মানবিক শান্তির দূতেরা তাদের কোমল অস্ত্র আপনার বুকে ঠেসে ধরবে আর পরের দিন ছাপানো কাগজে বড় বড় অরে লেখা থাকবে ঃ নসফায়ারে চরমপন্থি নেতা নিহত । কে না জানে এই শান্তিপ্রিয় মানবিক গণতন্ত্রী রাষ্ট্রের বিরোধিতা মানেই সন্ত্রাসবাদ আর নসফায়ার!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.