আমি মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে ভালবাসি ।
সমাজ-সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন যে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এর যে অপব্যবহার হচ্ছে না সমাজে তাও জোর দিয়ে বলা যাবে না। একসময় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শুধু কথাবার্তা আদান-প্রদান করা যেত; কিন্তু সভ্যতা আর প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে মোবাইলের প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা।
মোবাইলে এখন ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ম্যাসেজ আদান-প্রদানসহ ছবি ডাউনলোড, প্রেরণ, গ্রহণ ইত্যাদি সুবিধা তো রয়েছেই। শিশু-কিশোর বা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জানার আগ্রহই বেশি। যেমন আগ্রহ দেখা গেছে কম্পিউটারের ক্ষেত্রে। অনেক শিশু-কিশোর কম্পিউটারে ই-মেইলের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি উপভোগ করে থাকে, কিন্তু অনেক সময় তা অভিভাবকের দৃষ্টিতে পড়ে যায়।
এখন আর এ ধরনের শাসনের কবলে পড়তে হয় না এদের। কারণ এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেশ আগেই এসে গেছে মোবাইলে। যে কারণে এদের অনেকেই বর্তমানে মোবাইল ফোনের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহী। বর্তমানে তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যেই বাজারে কিনতে পাওয়া যায় চীনের তৈরি এ ধরনের নানা ব্রান্ডের মোবাইল ফোন সেট।
অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধার কারণেই মোবাইল ফোন শুধু বড়দের হাতে নয় পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে শিশু-কিশোর প্রজন্মের হাতেও।
তারা এর মাধ্যমে কথা আদান-প্রদানের চেয়ে পর্নোছবি দেখতে ও আদান-প্রদান করতে বেশি আগ্রহী বলে নানা সূত্রে জানা গেছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে থ্রি-জিপি প্রযুক্তির মোবাইল সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এরা শ্রেণীকক্ষে, বাসায় এমনকি রাস্তাঘাটে পর্যন্ত এর মাধ্যমে পর্নোছবি উপভোগ করে থাকে, যা অনেকের কাছেই যথেষ্ট বিব্রতকর বলেই মনে হচ্ছে। এ নিয়ে অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মনোমালিন্য বা ঝগড়া-ঝাটি পর্যন্ত দেখা দেয়। মা দোষে বাবাকে, আবার বাবা দোষে মাকে।
এভাবে পর্নোগ্রাফি দেখতে দেখতে যে কত ছেলেমেয়ে বখে যায় তার হিসাব নেই। অথচ কোমলমতি এসব ছেলেমেয়েকে নিয়ে অভিভাবকদের কতই না আশা-ভরসা। ছেলেমেদের পড়ালেখা শেখাতে কত অর্থই না ব্যয় হয়। এসব অর্থ যদি সব পানিতে যায় তবে বাবা-মায়ের আর দুঃখ-কষ্টের সীমা থাকে না।
শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরাই নয় বরং সব ধরনের কমবেশি উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোনে পর্নোগ্রাফি উপভোগ করে বলে জানা যায়।
এসবের মোহে পড়ে অনেকে লেখাপড়া ছাড়াও দৈনন্দিন কাজে ক্রমশ নিরুৎসাহী হয়ে পড়ে যা পরিবার তথা সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা। পর্নোছবি চলে যায় একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে। অনেকে রাত জেগে পর্যন্ত এসব উপভোগ করে। জানা গেছে, মোবাইল ফোনেরই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সামান্য অর্থের বিনিময়ে হলেও এসব পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোবাইল ফোন পর্নোগ্রাফির ক্ষেত্রে নানা ধরনের আইন ও বিধি-নিষেধ থাকলেও আমাদের দেশে তা তেমনভাবে না থাকার কারণে সার্বিক অবস্থা ক্রমেই আরো খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে, যা রীতিমতো ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অনেক সময় এসব বিষয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানাতে বাধ্য হন, যাতে করে শিক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি না পায়। একটু উচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা আরো উদ্বেগজনক। অনেকে নিজেই কিংবা ঘনিষ্ঠ বা অন্য বান্ধবী বা সহপাঠীর ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে। জানা গেছে, রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসবের প্রবণতা অনেক বেশি। এজন্য এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়ের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তাও অনেক বেশি।
তারা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না কি করলে এসবের সমাধান মিলবে। এখানে ধনীর সন্তানদের আনাগোনা বেশি। তাহলে কি বলতে হবে বেশি অর্থই অনর্থের মূল কারণ? আসলে না। অর্থ এক বিষয় আর নিজেদের বোধশক্তি আরেক বিষয়। অনেক ধনী লোক আছেন যারা সব কিছুর নানা দিক ভেবে-চিন্তে কাজ করেন।
তাদের তো আর এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় না।
আপত্তিকর এ ধরনের ছবি বাজারে বিক্রি হয়। ভিডিও ব্যবসার সাথে জড়িতদের কাছে অনেক সময় এসবের সিডি পাওয়া যায়। আইন-শৃক্মখলা বাহিনীর লোকজন অনেক সময় ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে এসব উদ্ধার করেন। এসবের সঙ্গে জড়িতদের কমবেশি আটকও করা হয়।
কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে তারা ঠিকই বের হয়ে পুনরায় একই ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে পড়ে। প্রচলিত আইন যদি আরো শক্তিশালী হতো এবং এসবের যথাযথ প্রয়োগ হতো তবে প্রকৃত হোতারা ঠিকই এমন অসামাজিক কাজে আর নিয়োজিত হতে চাইত না।
যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী বা ছেলেমেয়ে এসব ছবি বা পর্নোগ্রাফির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদের বেশিরভাগই এখন অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছে বলে জানা গেছে। এ ধরনের ক্রেজ কখনোই মানুষকে ভাল থাকতে দিতে পারে না। অনেক সময় শ্রেণীকক্ষে মোবাইল সেটের মাধ্যমে এসব দেখাদেখির প্রতিযোগিতা চলে।
তাতে সমস্যায় পড়ে সাধারণ অন্যান্য ছাত্রছাত্রী। অনেক সময় তারা এসবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানাভাবে নাজেহাল হয়। এমনকি শিক্ষকরা পর্যন্ত এসব রোধ করতে পারছেন না। বেশিরভাগ সময় মান-ইজ্জতের কথা চিন্তা করে মুখ বুজে সব সহ্য করেন তারা। আসলে মুখ বুজে এসব সহ্য করা মানে তাদেরকে অসামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ করা।
এজন্য সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চুপ করে থাকার কারণে দেশে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ ক্রমে বেড়েই চলেছে। অনেক সময় পারিবারিক অশান্তি, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণেও অনেকে এ ধরনের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। নানা সমস্যার কারণে অনেকেই স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা করতে পারে না। এজন্য সন্তানদের সব ধরনের খোঁজ-খবর নিতে হবে অভিভাবকদের।
অভিভাবকদের এমন আচরণ করা উচিত নয়, যাতে পরিবার তথা সন্তানের ওপর কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এটা ঠিক যে, যেসব পরিবারের লোকজন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা সাধারণত খারাপ পথে পা বাড়ায় না। সামাজিক কাঠামোকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। এজন্য সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।