এ কথা আমরা সবাই জানি সাধারণ ভাবে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। সে সাথে স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন কিছু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে - এ কথা বোধহয় আমাদের মধ্যে অনেকেই স্বীকার করবেন। এ ধরণের একটি সমস্যা হলো বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া বা বয়সের কারণে ত্বকের পরিবর্তন ঘটা। এ বিষয় আলোচনার শুরুতেই বলা দরকার, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের দেহে কতোগুলো পরিবর্তন আসে। সে পরিবর্তনের কোনো কোনোটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় আর কোনো কোনো পরিবর্তন চট করে বোঝা যায় না।
তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের দেহের যে সব অঙ্গের উপর সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে তার অন্যতম হলো ত্বক। ত্বকের উপর বয়সজনিত সব প্রভাবকে হয়ত প্রতিহত করা যাবে না, তবে বয়সজনিত কোনো কোনো প্রভাবকে একটু চেষ্টা করলে এবং সতর্ক হলে অবশ্যই বিলম্বিত করা যাবে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের চর্ম এবং যৌন রোগ বিভাগের প্রধান এসোসিয়েট প্রফেসর ড.শাহাবউদ্দিন আহমেদের সাথে। বয়স হলে ত্বকে কেনো পরিবর্তন দেখা দেয় তার কারণ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। একদল এ জন্য ডিপ্রোগামেটিক থিউরি একটি অনুসিদ্ধান্ত তুলে ধরেন অন্যদিকে অন্যেরা এস্টোকাস্টিক থিউরী নামের অপর এক অনুসিদ্ধান্ত তুলে ধরেন।
প্রথম দল মনে করেন, বয়স হলে ত্বকের পরিবর্তনের ব্যাপারটি পূর্ব নির্ধারিত, দেহের অন্যান্য অঙ্গে যে সব পরিবর্তন ঘটে, দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হতে থাকে। তার এবং পূর্ব নির্ধারিত জেনেটিক কারণে ত্বকে তার প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে এস্টোকাষ্টিক থিউরীর সমর্থকরা বলেন, পরিবেশ সূর্যালোক, জীবনযাত্রার সাথে জড়িত বিভিন্ন উপদানের প্রভাবে ত্বকে বয়স জনিত প্রভাব সৃষ্টি হয়।
ত্বকের এ ধরণের পরিবর্তনকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দু'ভাগে ভাগ করেছেন। একটা হলো নির্ভেজাল বয়সজনিত পরিবর্তন আর অন্যটি হলো সূর্যালোকজনিত ত্বকের পরিবর্তন।
তবে নির্ভেজাল বয়স জনিত পরিবর্তন প্রতিরোধ করা যাবে না। এ জাতীয় পরিবর্তন সবার বেলাই ঘটবে। এ জাতীয় পরিবর্তনের ফলে চুলের রং বদলে যায়, ঘন চুল পাতলা হতে থাকে। নখের রংয়ের পরিবর্তন ঘটে। একই সাথে দেহের ঘামের গ্লান্ড সহ আর যে সব গ্ল্যান্ড থাকে তার সবগুলোর সংখ্যা এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।
আমাদের চামড়ায় রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশেষ কোষরাজি বা সেল রয়েছে, রংয়ের জন্য বিশেষ কোষরাজি বা সেল রয়েছে, রয়েছে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিশেষ চর্বি বা ফ্যাট, আছে রক্তনালী সবগুলোর সংখ্যা কমে যায়। সূর্যালোকে যারা বেশি কাজ করেন বা থাকেন তাদের এ সব পরিবর্তন বেশি হয় কিন্তু যারা সূর্যালোক থেকে দূরে থাকেন তাদের এ জাতীয় পরিবর্তন কম হয়। ত্বকের এ জাতীয় পরিবর্তনের ফলে তার কর্ম দক্ষতা হ্রাস পেতে থাকে। ত্বকের মাধ্যমে দেহের অপ্রয়োজনীয় পর্দাথের নির্গমন বাধাগ্রস্ত হয়, চর্বি হ্রাস পাওয়ার ফলে ত্বকের আঘাত প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। এ ছাড়া এ কারণে কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে ভাল হতে সময় নেয়।
ত্বকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তাপ নিয়ন্ত্রণ সে ক্ষমতা হ্রাস পায় বলে অতি গরম বা শীতের কারণে বৃদ্ধরা বেশি প্রাণ হারায় বলে দেখা যায়। সূর্যের আলোয় বেশি থাকার ফলে ত্বকে যে সব ক্ষতি হয় তার মধ্যে দেহের যে সব স্থান সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে সে সব স্থান কালো কালো দাগ হয়। কখনো কখনো সাদা দাগ পড়তে দেখা দেয় বা ভিন্ন কোনো রং দেখা দিতে পারে। ত্বকটা বুড়িয়ে যায়। ত্বকের কোথাও কোথাও আঁচড়ের মতো দাগ দেখা দেয়।
ত্বকের নমনীয়তা হ্রাস পায়। ত্বক পাতলা হওয়ার ফলে রক্তনালীগুলো দৃষ্টিগোচর হতে থাকে। যা দেহের সৌন্দর্য হ্রাস করে। কোনো ক্ষেত্রে ব্রণও হয়। রোদে বেশি থাকলে ত্বকে ক্যান্সার সহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে।
সূর্যালোক জনিত যে পরিবর্তন তা রোধ করতে হলে অন্যাবশ্যক সূর্যালোকে যাওযা বন্ধ করতে হবে। আর সূর্যের আলোতে যাওয়ার জন্য আমরা সান স্ক্রিন ব্যবহার করি তাহলে এ আলোর ক্ষতিগুলো অনেকটা প্রতিহত করতে পারবো। একই সাথে বয়সজনিত পরিবর্তন প্রতিহত করা যাবে না। তবে ত্বকের এ জাতীয় পরিবর্তন সুষম খাদ্য, ভিটামিন গ্রহণ এবং ত্বকের যত্নের মাধ্যমে বেশ বিলম্বিত করা যেতে পারে। রেডিনয়েড এসিড জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
এ জাতীয় উপাদন ত্বককে কর্কশ হওয়া প্রতিরোধ করে। ত্বকের রং পরিবর্তন প্রতিহত করে। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার এবং কৃত্রিম ভিটামিস এ বা রেডিনয়েড এসিড গ্রহণ করলে আমরা উপকার পাবো। ল্যাকটিক এসিড এবং আলফা হাইড্র সিয়াসিকও ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । টক জাতীয় খাদ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান পাওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে আখের রস থেকে গ্লাইকোলিক এসিড নামে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাওয়া যেতে পারে। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই ব্যবহার করে দেহের জারণ ক্রিয়ার গতি হ্রাস করা যায়। যা ত্বক নয় দেহের অন্য সব অংশেও সু প্রভাব ফেলবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।