আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার উল্টামুখে চলা---বিরতির পর

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.

আমার উল্টামুখে চলা---স্কুল অধ্যায় ছেলেমানুষিই বলা যায়, খালি প্রচলন-বহির্মূখী হওয়ার একটা অদম্য ইচ্ছে কাজ করতো। স্কুলে ব্যাকবেঞ্চার হলাম সখে। আম্মু বাসায় বলতেন ভালো স্টুডেন্টদের সাথে মিশবা, তাহলে তোমার রেজাল্টও ভালো হয়ে যাবে একদিন। কিন্তু আমি সব গাড্ডুওয়ালাগুলার সাথেই মিশতাম। পেছনের সীটে বসে লুকিয়ে সেবা প্রকাশনী পড়া...হুদাই রিস্ক নিতাম।

এমন না যে আমার ক্লাস করতে ভালো লাগতোনা। তবুও একটা অ্যাডভেঞ্চারের সখ থেকে এসব করতাম। আমি যাদের সাথে মিশতাম, তথাকথিত ব্যাকবেঞ্চার; দেখতাম তাদের মধ্যে কেমন যেন একটা প্রেমে-পড়ি,মরি-মরি টাইপ হাবভাব। তারা স্কুলে লাভ-লেটার নিয়ে আসতো, ছেলে-সংক্রান্ত গল্প করতো। আমি হা-করে শুনতাম।

উঁহু, আমার তো এদের মতো হওয়া চলবেনা! প্রেমে পড়া তো দুরের কথা, নিজেকে ছেলেদের কাছে অনাকর্ষণীয় করে তোলার প্রজেক্ট হাতে নিলাম। সুন্দরী হওয়া চলবেনা। ছেলেরা মাস্তানি করবে? নো-ওয়ে, আমিই হবো মাস্তান! সে কী আপ্রাণ চেষ্টা আমার মেয়েলী-না-হওয়ার! সাজগোজের বয়সটাতে এলোমেলো করে রাখতাম নিজেকে, কথাবার্তায় লাফাঙ্গা টাইপ খিস্তি...বব-কাট চুল করে টমবয় হওয়া এসব মনে পড়লে নিজের অজান্তেই হাসি পায়এখন... রিক্সায় তিনজন মেয়ে একসাথে দেখলে তখন ছেলেরা মন্তব্য ছুঁড়তো "এই পড়ে গেল!" আমি ও শুরু করলাম তাঈ। তিনজন ছেলেকে ভড়কে দেওয়া, ওরা কমেন্ট করার আগেই নিজেরা কমেন্ট করা... কফি ইন বলে এক ফাস্টফুড দোকানে বেশ আলো-আঁধারি পরিবেশে খেতে গেলাম বান্ধবী লোপার সাথে। আশেপাশের সীন দেখে সে লাল-নীল-বেগুনী।

বারবার বলে "চল্ চলে যাই"। আমারও অস্বস্তি হচ্ছিল খুব। কিন্তু গোঁ ধরে সেখানে খেয়েদেয়েই আসলাম। যতক্ষণ ছিলাম, ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে সিনেমাও দেখলাম একটা সময়ে সবাই মা-কে খুব মিথ্যে বলতো। বড়বোনদেরও দেখতাম নানান ছলচাতুরি, অজুহাত বানিয়ে এটা সেটা করছে, এখানে সেখানে যাচ্ছে।

কিন্তু আমার তো উল্টোস্রোতে চলার পণ! তাই একদিন ঠিক করলাম মা-কে মিথ্যে বলবোনা। যাহা করিবো, ঢাকঢোল পিটাইয়াই করিবো। যেখানেই যাই মাগরীবের আগে বাড়ি ফেরার একটা নিয়ম ছিল। আমার বন্ধুদের বাসাগুলো ছিল স্কুলের আশেপাশে, আমার বাসা থেকে দূরে। যখনই যেতাম আমার এই সান্ধ্য-আইনের ফলে আড্ডা জমে ওঠার সময়টাতেই উঠে চলে এসেছি।

অনেক মান-অভিমান সয়েছি বন্ধুদের কাছে। মিথ্যে বলে হয়তো বাসায় অথবা ওদেরকেও ম্যানেজ করা যেত। কিন্তু করিনি। যে ক'বার দেরী করেছি, ঘরে এসে ঝাড়িও খেয়েছি, যেটা আমার অগ্রজরা খায়নি, কারণ ওরা ম্যানেজ করে নিত। প্রেম হলো যেবার, আম্মুর কাছে লুকালে বিয়ের আগ পর্যন্ত একটু নির্ঝঞ্ঝাটে থাকা যেত।

কিন্তু বলেই দিলাম চারদিনের মাথায়। বিনিময়ে হাজারো লেকচার, নিষেধাজ্ঞা শুনতে হলো। প্রেমটা অনেকে লুকিয়ে চুরিয়ে করেছে এমনভাবে, যে বিয়ের সময় তাদের বাবা-মা বুক ফুলিয়ে সবাইকে বলতে পেরেছেন "এটা আসলে অ্যারেঞ্জড্ ম্যারেজ"। কিন্তু আমার বেলায় সে কপাল হলোনা বাবা-মার। কারণ সকলের মতো তো আমি নই! ঢাকঢোল পিটিয়েই করলাম যা করার।

যখন ওর সাথে দেখা করতে যেতাম, আম্মুকে বলেই যেতাম, ...দেখা করতে যাচ্ছি। আম্মুর চেহারা দেখে মনে হতো, উনিও মনে মনে চাইছেন আমি ওনাকে মিথ্যে বলি কিন্তু সেটা কী করে হয়? আমি কি টিপিক্যাল হতে পারি? (আবার টায়ার্ড হয়ে গেলাম লিখতে লিখতে...কেন যে লেখাগুলো এত বড় হয়ে যায়!) আমার উল্টামুখে চলা---কলেজে ভর্তি হলাম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।