আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃক্ষই পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখেঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

বৃক্ষই পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখেঃ বৃক্ষের গুণের শেষ নেই। এর শেকড়, ডালপালা, ফুল, ফলমূল এমনকি পাতাও মানুষের কাজে নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকেই অরণ্যের সৃষ্টি। নানা জাতীয় বন্য পশুপাখির আশ্রয়স্থল এই অরণ্য। বৃক্ষই সমস্ত প্রাণীকে অক্সিজেন সরবরাহ করে।

আমরা অজান্তেই অক্সিজেন গ্রহণ করছি এই গাছ-গাছালি থেকে। এর অভাবে প্রাণীকূলের অস্তিত্ব কল্পনাতীত। ফলজ বৃক্ষ থেকে ফল, ঔষধি বৃক্ষ থেকে ওষুধ এবং অন্যান্য বৃক্ষ থেকে আসবাবপত্র এবং ঘর-বাড়ি, জ্বালানি ইত্যাদির জন্য কাঠ ব্যবহৃত হয়ে আসছে আদিকাল থেকেই। গাছের পাতা মাটিতে পড়ে পচে সারের কাজ করছে। গ্রামে এমনকি শহরের বস্তিতেও গাছের ঝরাপাতা জ্বালানির কাজে ব্যবহার হচ্ছে।

এত যে উপকারী বৃক্ষ তার জন্য আমাদের চিন্তা-ভাবনা বা উদ্যোগ যথেষ্ট-এটা বলা যাবে না। দেশে গ্রামগঞ্জে যেসব বাগান দেখা যায় তা কিছুসংখ্যক সচেতন এবং নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তির প্রচেষ্টার ফল। প্রসঙ্গক্রমে ছেলেবেলায় পড়া একটি গল্প উল্লেখ করছি। একদা এক রাজা বহু ধন-রত্ন (মোহর) নিয়ে বের হলেন। উদ্দেশ্য, পথে যে ব্যক্তি তাকে কাজের দ্বারা সন্তুষ্ট করতে পারবেন তাকে তিনি মোহর দান করবেন।

যাওয়ার পথে অনেককেই দেখলেন, কথাও বল্লেন; কিন্তু কারও কাজে খুশি হতে পারলেন না। অবশেষে ফেরার পথে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখলেন দূর থেকে। লোকটি মাটিতে কী যেন লাগাচ্ছে। কাছে গেলেন এবং লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন-কী গাছ লাগাচ্ছেন? লোকটি বললেন, ফলের গাছ। রাজা বললেন, আপনি তো বৃদ্ধ।

আপনি কি এই গাছের ফল খেতে পারবেন? লোকটি বললেন, হুজুর এগুলো আমার জন্য নয়। এগুলো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। এটাই হলো নিঃস্বার্থ নিবেদিত মানুষের কাজ। রাজা খুবই আনন্দিত হলেন এবং উজিরকে সব মোহর ঐ বৃদ্ধকে দিতে বললেন। কয়েক দিন পুর্বে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম।

চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ, সিডিএ এভিন্যু, নাসিরাবাদ, খুলশীর রাস্তার দু'পাশে চোখে পড়লো নানা ধরনের গাছ। এর মধ্যে মেহগনি গাছের সংখ্যাই বেশি। আমার নিকট আত্মীয়ের বাড়ি খুলশী ওমেন্স কলেজের কাছেই। তাঁদের শাল- মেহগনি্র বিশাল বাগানটিও দেখলাম এবং খুবই প্রেরণা পেলাম নিজ গ্রামের বাগানটিকে আরও সুন্দরভাবে করার জন্য। আমাদের গ্রামে ইতিমধ্যে অনেকেই বাগান করেছেন।

আরও করতে হবে। সবচেয়ে যা বেশি প্রয়োজন তা হলো গাছের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মকানুন জানা। বৃক্ষরোপণ এবং পরিচর্যার মাধ্যমে গাছগাছালিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সামাজিকভাবে সবাইকে অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে। একটি গাছ কাটলে সাতটি গাছ লাগাতে হবে। ।

এই শ্লোগান মানুষকে শেখাতে হবে। নির্বিচারে বৃক্ষকর্তন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। গাছের পরিচর্যা ছাড়া রক্ষণ ও বর্ধন যে হয় না, তাও বোঝাতে হবে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং কৃষিবিদগণ এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। এই সামাজিক আন্দোলনকে গণমুখি করতে সংবাদপত্র এবং অন্যান্য মিডিয়ার ভূমিকা অপরিসীম।

প্রতি বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গাছের চারা রোপণ করে। কিন্তু সেটা সফলতা পায় না যথাযথ পরিচর্যার অভাবে। যেরূপ গাছগাছালি চট্টগ্রামে দেখেছি এরূপ হয়তো আরও অনেক জায়গায় আছে। আমার অভিমত-বাংলাদেশে কয়েক কোটি পরিবার যদি নিজ বাড়িতে বৃক্ষরোপণ করে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে বাগান সৃষ্টি করেন, তবে তা ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য সম্পদের উৎস হতে পারে এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত করে মানুষের জন্যও একটি নিরাপদ বাসভূমি সৃষ্টি করা যেতে পারে। তাই বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলন হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।

এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বৃক্ষই পরিবারের সম্পদের আধারস্বরূপ এবং মানুষের প্রাণবায়ু অক্সিজেনের উৎস, যার অভাবে জীবনধারণ অসম্ভব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।