মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
শিক্ষামন্ত্রীকে খোলা পত্র।
এদেশে এখনো পর্যন্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়নি। সেই ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলের কেরানী তৈরী করার শিক্ষাব্যবস্থা বহাল রয়েছে। যে শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে ভোগবাদী-সুবিধাবাদী হিসেবে তৈরি করে।
যার প্রমাণ হলো বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ানশিপের গৌরভ অর্জন করে দেখিয়েছে। শিক্ষা এখন আলু-পটলের মত পণ্য। বিদ্যা ও বিদ্ব্যান টাকায় বিক্রি হয়। শিক্ষা তার, টাকা আছে যার। টাকা নেই, শিক্ষা পাওয়া যাবে না।
বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, একটা সুষম সার্বজনীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। হলে তো, ভালো-ই। এ জাতি ও ছাত্রসমাজ একটা শিক্ষানীতি পাবে। কিন্তু প্রস্তাবিত শিক্ষানিতি (খসড়া) দেখে এবং পড়ে মনে হলোথএই শিক্ষানীতিকে মন্দের ভাল বলেও আখ্যায়িত করা যাচ্ছে না। শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি থজাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ প্রণয়ন করেছে।
তবে বিষয়টি চূড়ান্ত নয়, শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, প্রয়োজনীয় সংশোধন করার সুযোগ আছে। চূড়ান্ত করার আগে শিক্ষক, অভিভাবক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। স্বাধীনতার ৩৮ বছরে ৬টি শিক্ষা কমিশন বা কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু কোনো উদ্য[?]গই বাস্তবায়ন হয়নি।
ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মূল দাবি ছিল একমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক ও সার্বজনীন শিক্ষানীতি।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের দশ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল সার্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি প্রণয়নের দাবি।
এই দাবিকে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ত[?]কালীন দুই নেত্রী। এই একমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে দুই নেত্রীর অঙ্গীকার ছিলেন। তারা বলেছিলেন ক্ষমতায় গেলে এ দাবি বাস্তবায়ন করবেন। এ দাবির প্রতি সে সময় আন্দোলনরত ৮ দল, ৭ দল ও ৫ দলের সমর্থন ছিল।
কিন্তু আজ নানা দোহাই দিয়ে একমুখী শিক্ষার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ছাড়া এ মুহূর্তে একমুখী শিক্ষা চালু সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে দ্বিমত করছি না। তবে লক্ষ্য স্থির হতে হবে। এই নীতিগত অবস্থান ছাড়া কখনও কি একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন সম্ভব? তবে খসড়া প্রতিবেদনে বিভিন্নমুখী শিক্ষা পদ্ধতির শিক্ষার সমন্বয়ের প্রচেষ্টা আছে।
মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্য[?]গ আছে।
সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসার শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়ের উদ্য[?]গ থাকলেও ও-লেভেল এবং এ-লেভেলের শিক্ষাকে বাইরে রাখা হয়েছে। এটি বিস্ময়কর ব্যপার। আরো বলা হয়েছে, ‘সরকারি অনুমোদনসাপেক্ষে এই শিক্ষা পরিচালিত হবে এবং ও-লেভেলকে দশম এবং এ-লেভেলকে দ্বাদশ শ্রেণীর সমকক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হবে’। অনুমোদন দেওয়া হবে, কিন্তু পাঠ্যক্রমে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না।
এ যুক্তি কতখানি গ্রহণযোগ্য? এসব ছেলেমেয়ে দেশের আলো-বাতাসে বেড়ে উঠবে কিন্তু স্বদেশের ইতিহাস-ভূগোল জানবে না, তা কী করে হয়? এ ক্ষেত্রে অগত্যা ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’ বাধ্যতামূলক করা উচিত।
প্রাথমিক পর্যায়ে আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা নিবন্ধনের কথা বলা হলেও মাধ্যমিক ও উচশিক্ষার ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসা নিবন্ধন বা তা সরকারি কারিকুলামের আওতায় আনার ব্যাপারে কিছুই উলে-খ নেই শিক্ষানীতিতে।
বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতি কমিটির সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, এটি বর্তমান প্রতিবেদনের একটি দুর্বলতার দিক। প্রশ্ন হচ্ছে- এই দুর্বলতা দূর করতে বাধা কোথায়?
কমিটি সূচনাতে মানবতার বিকাশ, ধর্মনিরপেক্ষতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি বিশেষণের ব্যবহার করলেও প্রচলিত সাধারণ শিক্ষার ত্রুটিগুলো দূরীকরণে যৌক্তিক উদ্য[?]গ নিতে পারেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রে পুরনো ধ্যান-ধারণাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছেন।
বলা হয়েছে যে, মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডায় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক সব ধর্মের শিশুদের ধর্মীয় জ্ঞান, অক্ষর জ্ঞানসহ আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদানের কর্মসূচি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে গণ্য করা হবে। ' কুদরাত-এ-খুদা কমিশন প্রতিবেদনে শিশুর মানসিক বিকাশের প্রয়োজনে শিশু ভবন ও শিশু উদ্যান স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান শিক্ষানীতি নিয়ে ৫ সেপেম্বর সমকালের গোলটেবিল বৈঠকে দেওয়া কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকার মন্তব্য উলে-খ্যথ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর জন্য আলাদা আলাদা ধর্মশিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষা একটি সমন্বিত বিষয় হতে পারে। যেখানে শিক্ষার্থীরা একই সঙ্গে সব ধর্মের মর্মবাণী জানতে পারবে। এ মত গ্রহণ করা হলে তা হবে পরমতসহিষু ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার কার্যকর উদ্য[?]গ।
আমার মনে হচ্ছে কমিটি ধর্মশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষাকে এক করে ফেলেছেন। এজন্য একবার ইতিহাসে চোখ বোলান দরকার।
অন্যথায় অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক, সার্বজনীন ও একই ধারার শিক্ষানীতি জন্য তুমূল আন্দোলন চলবে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীকে ৬২’র শহীদের রক্ত শপথ নিয়ে অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক, সার্বজনীন ও একই ধারার শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।