আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ............
বরিশালের ভাগীরথী নদী নয়। ভাগীরথী একটি লাঞ্ছিতা নারীর সকরুন কাহিনী। ভাগীরথী বর্বরতার বিরুদ্ধে এক দৃপ্ত প্রতিশোধ।
ভাগীরথী পিরোজপুর মহাকুমার(বর্তমান জেলা) বাঘমার কদমতলি গ্রামের এক বিধবা রমনী। একমাত্র শিশুপুত্রের স্নেহময়ী জননী।
সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের কুলবধূ ছিল ভাগীরথী। আকালবৈধব্যের পর সে একমাত্র শিশুপুত্রকে নিয়ে মোটামুটি সুখেই ছিলো কিন্তু সে সুখ তার সইলো না।
বর্বর পাকিস্তানিরা তা সইতে দিলো না।
২৫ মার্চের অনেক পরে বরিশালের পিরোজপুর খানসেনাদের দখলে এল। দখলে আসার পর পিরোজপুর শহর ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে চললো পশুদের বর্বরতা।
এই বর্বরতার অসংখ্য শিকারের মধ্যে ভাগীরথী একজন। একদিন খানসেনারা গ্রাম বাঘমারা থেকে তুলে নিয়ে এলো ভাগীরথীকে।
তারপর চলল একটানা পাশবিক নির্যাতন। নারীর নারীত্ব হারালে আর কি থাকে? এ প্রশ্নের উত্তর সহজ-সরল অশিক্ষিতা গ্রাম্য রমনীর বুঝতে দেরি হলো না একটুও। তাই শ্রেয় মৃত্যু বেছে নিল সে।
কিন্তু এ মৃত্যু যেন অর্থহীন না হয় সে সিদ্ধান্তও নিল সে। ভাগীরথী ভাবলো যদি তার লুন্ঠিত
নারীত্বের বিনিময়ে একটা পাকসেনা পশুকেও খতম করতে পারে তবে অন্তন্ত একজন কুলবালা বা যুবতী রেহাই পাবে বর্বরদের হাত থেকে। তাতে যদি জীবন দিতে হয় তাও শ্রেয়।
ভাগীরথী ঠিক করলোপিরোজপুর মিলিটারি ছাউনিতে যাতায়াত করতে হবে। উজাড় করে দিতে হবে তার কলঙ্কিত নারীত্ব।
অভিনয়ে অভিনয়ে ভুলাতে হবে পশুদের। করলও তাই। সে রীতিমত ছাউনিতে যাতায়াত করতে লাগল। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করল ভাগীরথী। তারপর একদিন মুক্তিবাহিনীএ সন্ধান দিবে বলে পাকবাহিনীকে গ্রামের মধ্যে নিয়ে এল।
অপরদিকে
মুক্তিবাহিনী তৈরি রইল। এভাবে সেদিন ১৫ খানসেনা হত্যা হয়েছিলো মুক্তিবাহিনীর হাতে। অপর কয়জন সৈন্য পালিয়ে বাঁচল।
পশুরা বুঝতে পারলো ভাগীরথীর ষড়যন্ত্রের কথা। তাই তারা ঘোষণা করে দিল ভাগীরথীকে জীবিত অথবা মৃত ধরে দিতে পারলে এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে এবং ভাগীরথী ধরাও পড়ে গেল।
তারপর এক করুণ চিত্র। বর্বররা ভাগীরথীর পা বেঁধে দিল জীপ গাড়ির পিছনে। পিরোজপুর রাজপথে ঘুরানো হলো জীপ গাড়ি। ভাগীরথীর দেহ নদীর স্রোতে মিশে গেছে কিন্তু পিরোজপুরের ভাগীরথীর রক্তধারা কি বঙ্গোপসাগরের নোনা জলে মিশে এক হয়ে গেছে?
ভাগীরথী তোমার কোন ছবি নাইবা থাকুক, তুমি আজ থাকবে আমাদের মাঝে। তুমি বীরঙ্গনা।
তুমি আজ মুক্ত বাংলার মায়ের প্রতিচ্ছবি।
[মূলঃ দৈনিক বাংলাঃ ১৮ মার্চ,১৯৭২]
(সংগ্রহঃ মুক্তিযুদ্ধের ডায়েরি- বজলুর রহমান। সঙ্কলন ও সম্পাদনাঃ ড. মুনতাসির মামুন ও সোহরাব হসেন। জনকন্ঠ ঈদসংখ্যা-২০০৯ এ প্রকাশিত লেখার অংশবিশেষ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।