আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদসংখ্যা নিয়ে শঙ্কা



ঈদসংখ্যা নিয়ে শঙ্কা মারুফ রায়হান সেপ্টেম্বরে ঈদ-পুজো প্রায় হাত ধরাধরি করে এসেছিল গতবারের মতো এবারও। বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা শহর, বেশ কিছুদিনের জন্য শীতনিদ্রায় চলে গিয়েছিল। ঈদের আগে এবারও ঢাকা থেকে ঈদসংখ্যা বেরুনোর হিড়িক পড়ে যায় যথারীতি। সাহিত্য যাদের কাছে সামান্য মর্যাদাও পায় না সেইসব কাগজও বাণিজ্যিক কারণে বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ ঢাউশ ঈদসংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। বার্ষিক এই সাহিত্য আয়োজন বৃহত্তর পাঠকের কাছে অবশ্য বিশেষ আকর্ষণের বিষয়।

বিশেষ করে প্রকাশিত উপন্যাসের দিকে নজর থাকে তাঁদের। ঈদসংখ্যার হৃৎপিণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে উপন্যাস। এই উপন্যাস সংগ্রহের ওপর জোর দেন সম্পাদকগণ; এক ধরনের অলিখিত প্রতিযোগিতা চলে তাঁদের ভেতর। এর ভেতর দিয়ে তাঁদের স্বভাব, দৃষ্টিভঙ্গি ও শক্তি সম্পর্কে কিছুটা ধারণাও মেলে। তবে একথা না বললেও চলে যে, বিচিত্র লেখার সম্ভার অলঙ্কার হিসেবে একটি ঈদসংখ্যার গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।

তাই বুদ্ধিমান সম্পাদক ঈদসংক্রান্ত ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক রচনার সমান্তরালে সাজান জীববৈচিত্র নিয়ে স্বাদু রচনা; বিজ্ঞান-নিবন্ধের পরেই স্থান দেন বিনোদন-বোমা সম্মন্ধে ফিচার; আকর্ষণীয় সচিত্র ভ্রমণবৃত্তান্তের সমানই মর্যাদা পায় মুক্তিযুদ্ধের আইটেম; দেশী ঐতিহ্যের অনুসন্ধানমূলক গদ্যের পাশাপাশি রাখেন রসনাবিলাসের রন্ধনপ্রণালী। আজকাল কবিতাও খুব যতœ করে ছাপছেন প্রথম সারির সব পত্রিকা। গল্পের সচিত্রকরণেও মনযোগ বাড়ছে। ঈদসংখ্যাগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হওয়া দরকার আমাদের সাহিত্যের স্বার্থেই। কাগজে/ টিভি-মিডিয়ায় ঈদসংখ্যাগুলো নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনার প্রয়োজন থাকলেও এ ব্যাপারে অধিকাংশই নীরবতা পালন করে থাকে।

ঈদসংখ্যায় প্রকাশিত বেশির ভাগ উপন্যাস ও জীবনী/ আত্মজীবনী কয়েক মাস পর ফেব্র“য়ারির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নতুন বই হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। অনেক প্রবন্ধও ঠাঁই পেয়ে যায় লেখকের পরবর্তী প্রবন্ধগ্রন্থে। তাই রচনার প্রসাদগুণ নিয়ে সমালোচক-বোদ্ধা পাঠক মহলে কথাবার্তা হলে এবং পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে সেসবের ছিঁটেফোঁটাও এলে নিঃসন্দেহে সংশ্লিষ্ট লেখক উপকৃত হতে পারেন। পক্ষান্তরে সাধারণ পাঠক ঈদসংখ্যা পড়ে কোনো কোনো লেখকের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন, ফলে ভবিষ্যতে তাঁর ক্রেতা-পাঠক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে; পরিবারের ভেতর ঈদসংখ্যার হাতবদল দেখে দেখে ঈদ অবকাশে পাঠ-অনিচ্ছুক বা অলস পাঠকের পাঠ-পিপাসা না বাড়লেও পাঠের প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে পারে। তাছাড়া আমাদের নিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা যেহেতু হাতে গোণা দু-একটি, উপন্যাস বা বড়ো বা আয়তনের দীর্ঘ লেখা প্রকাশের একমাত্র পরিসর হয়ে পড়েছে ৫০০-৬০০ পৃষ্ঠার এই ঈদসংখ্যা; এটাকে বার্ষিক সাহিত্যপত্র বললেও ভুল হবে না।

তাই ঈদসংখ্যাগুলো যাতে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক না হয়ে মূলধারার সাহিত্য ও নিরীক্ষাধর্মী সাহিত্যকে একসঙ্গে ধারণ করে মানসম্পন্ন একটি সাহিত্য আয়োজন হতে পারেÑ সেটা নিশ্চিত করার জন্য তথা সম্পাদকদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ঈদসংখ্যাগুলো নিয়ে সিরিয়াস ও ব্যাপক আলোচনা হওয়া জরুরি। ঈদোত্তর কালে অবশ্য দু’একটি কাগজ ‘ঈদসংখ্যা’ শব্দযুক্ত শিরোনামের গদ্য ছাপলেও তাতে তাদের গুণগান ছাড়া বিশেষ কিছু মেলে না। তবে অভিজ্ঞতায় দেখেছি ঈদসংখ্যার সম্পাদকদের এককভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয় টেলিভিশনে। দৈনিক যুগান্তর ও সাপ্তাহিক একাত্তর-এর পক্ষ থেকে আমিও গেছি বিভিন্ন চ্যানেলের আমন্ত্রণে ঈদসংখ্যা বেরুনোর পর, এমনকি ঈদসংখ্যা প্রথম আলো-র সম্পাদনা টিমে কাজের সুবাদেও আমার ডাক পড়েছে কোনো কোনো চ্যানেলে। সেসব ক্ষেত্রে একটা দায়বদ্ধতা থাকে নিজ নিজ ঈদসংখ্যার ‘মাহাত্ম্য’ তুলে ধরার।

অন্য কাগজের ঈদসংখ্যা বা সামগ্রিকভাবে দেশের ঈদসংখ্যাগুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ তেমন থাকে না। তবে একাধিকবার আমি চ্যানেল আই কর্তপক্ষের আগ্রহে তিন নামী ঈদসংখ্যার তিন সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানিয়ে টক শো করেছি। সামগ্রিকভাবে ঈদসংখ্যাগুলোর অর্জন ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনার সুযোগ কাজে লাগিয়েছি। বিশেষ করে একটি পয়েন্ট আমি বারবার তুলেছি, এবছরও তুললাম, সেটি হলো বাংলাদেশের ঈদসংখ্যায় ভারতীয় লেখকদের অংশগ্রহণ। এই আমদানি-নির্ভরতার, পরমুখাপেক্ষি মানসিকতার বিপক্ষে আমার অবস্থান খোলাখুলি বলেছি।

ব্যক্তিগতভাবে সুনীল-শীর্ষেন্দু আমার প্রিয় মানুষ ও প্রিয় লেখক হলেও (ঢাকায়/ কলকাতায় উভয়ের সান্নিধ্য আমার জীবনে আনন্দময় প্রাপ্তি) আমাদের দেশের ঈদসংখ্যায় এঁদের লেখা ছাপানোর ঘোর বিরোধী আমি। এর যুক্তিগুলো অল্পকথায় বলা যাক । ভারতীয় উপন্যাস কি জরুরি? ক্স দেশীয় প্রকাশনার বিকাশ ও প্রসারের স্বার্থেই আমরা অমর একুশে গ্রন্থমেলায় কেবল স্বদেশে প্রকাশিত বাংলাদেশের লেখকদের লেখা বা অনূদিত গ্রন্থই প্রদর্শন ও বিক্রির নিয়ম করেছি। একই কারণে দেশীয় পত্রপত্রিকার বার্ষিক সাহিত্য সংকলনটিতেও শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’ থাকাই বাঞ্ছনীয়। ক্স ভারতের ‘দেশ’ বা ‘সানন্দা’ পত্রিকার প্রধান বাজার হলো আমাদের এই বাংলাদেশ।

অথচ তাদের বার্ষিক সাহিত্য সংগ্রহ পুজোসংখ্যায় তারা কি প্রতি বছর অন্তত একজন বাংলাদেশী লেখকের লেখা প্রকাশ করে থাকে? দু’দেশের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক বিনিময় হতে হবে সততা, সমতা ও শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। একতরফা ‘উদারতা’ ভাল নয়। আমাদের কোনো কোনো সম্পাদকের বাতিকই আছে ভারতীয় উপন্যাস ছাপানোর। তাঁরা হয়তো ভাবেন, ওদের লেখা না থাকলে পত্রিকার কাটতি কমে যাবে। এটা ভুল, কর্তৃপক্ষের হীনম্মণ্যতার পরিচয়ই তুলে ধরে।

ক্স আমার নিজ চোখে দেখা যে, ভারতের কোনো কোনো ঔপন্যাসিক ওখানকার দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির পুজোসংখ্যায় প্রকাশিত লেখাটিই পাঠিয়ে দিচ্ছেন আমাদের প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায়। দেশের বাজারে দুটোই পাওয়া যায়। ক্স আমাদের লেখকের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। উপন্যাস ছাপা হয় এক-একটি ঈদসংখ্যায় গোনাগুনতি হিসাবে ৮-১০টি, তার বেশি নয়। নতুন তো দূরে থাক, অনেক প্রতিষ্ঠিত কথাসাহিত্যিককে আমন্ত্রণই জানানো হয় না উপন্যাস লেখার জন্য।

ঈদসংখ্যার সম্পাদকরা একথাও ভুলে থাকেন যে দেশের বাইরে অনেক বাংলাদেশী লেখক আছেন। আমেরিকার বেশ ক’টি রাজ্য, ব্রিটেন, কানাডাসহ বেশ কটি দেশে আমাদের নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে অনেক মানসম্পন্ন লেখক আছেন। এঁদের সাহিত্যচর্চার জন্য স্থান করে দিতে হবে না? দেশপ্রেম, নিজ দেশের সাহিত্য প্রচারের ক্ষেত্রে অঙ্গীকার, আর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা স্বদেশী লেখকদের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকলে, এবং তরুণদের জন্য পথ রচনা করার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন হলে, আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে ভারতীয় লেখকদের জন্য হাপিত্যেশ করতেন না ঈদসংখ্যার কতিপয় সম্পাদক। টেলিভিশনে ঈদসংখ্যা নিয়ে টক শো দেশে ১১টি টিভি চ্যানেল রয়েছে, সম্প্রতি ছাড়পত্র পেল আরো ১০টি টিভি চ্যানেল। কিন্তু একমাত্র চ্যানেল আই ছাড়া ঈদসংখ্যা নিয়ে রেকর্ডেড বা সরাসরি টক শো আর কোনো টিভি চ্যানেল করে না।

চ্যানেলটির এমডি ফরিদুর রেজা সাগরের সাহিত্যপ্রীতির জন্যেই সম্ভবত এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে। অপর সাহিত্যপ্রেমিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের একনিষ্ঠ উদ্যোগের কথাও বলতে হবে। প্রায় প্রতি বছরই রমজানের শেষ সপ্তাহে তিনি চ্যানেল আইয়ে গ্রামীণ ফোন টেলিসময় নামের সরাসরি অনুষ্ঠানের বিষয় হিসেবে নির্বাচন করেন ‘সদ্যপ্রকাশিত ঈদসংখ্যা’। বেশ ক’বার আলোচক হিসেবে তাঁর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তিনি সিরিয়াস।

অন্তত এক সপ্তাহ আগে তিনি জানিয়ে দেন আমাকে কোন বিষয়/ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এবার তিনি নির্ধারণ করে দেন উপন্যাস। আমার ইচ্ছা ছিল উপন্যাস ছাড়াও প্রবন্ধ নিয়ে কথা বলার। তিনি নিজে থেকে বলেননি বলে আমার মনের ইচ্ছা মনেই থেকে যায়। যাই হোক এবার তাঁর অনুষ্ঠানে তিন আলোচকের বাকি দু’জন হলেন শিল্পকলা ও সাহিত্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’-এর সম্পাদক আবুল হাসনাত এবং বাংলা একাডেমির পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’-এর সহযোগী সম্পাদক ড. সরকার আমিন।

এ দু’জন বলেছেন যথাক্রমে স্মৃতিকথা/গদ্য এবং কবিতা/ছোটগল্প নিয়ে। দু’জনের আলোচনাই ছিল কান পেতে শুনবার মতো। যদিও উভয়েরই বেশ কয়েকটি পয়েন্ট সম্পর্কে আমি ভিন্নমত পোষণ করলেও একবার ছাড়া উপস্থাপকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমার মত তুলে ধরিনি। চ্যানেল আইয়ের ওই সরাসরি অনুষ্ঠানে দর্শক তথা পাঠকদের সুবিধার জন্যে নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে কিছু নাম উল্লেখ করেছিলাম। তার অর্থ এই নয় যে এগুলোই এবারকার ঈদসংখ্যাগুলোর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।

এছাড়া কোন কোন লেখক উপন্যাস লিখেছেন এবং কারা লিখতে পারেননি বা লেখেননি, তারও একটি তালিকা দিয়েছিলাম। এখানে একয়টি তালিকা তুলে দিচ্ছি। উপন্যাস লিখেছেন এমন ২১ লেখক সৈয়দ শামসুল হক, রাবেয়া খাতুন, আল মাহমুদ, আবদুশ শাকুর, কাজী আনোয়ার হোসেন, হাসনাত আবদুল হাই, রিজিয়া রহমান, হুমায়ুন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, মাহবুব তালুকদার, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আতা সরকার, মঞ্জু সরকার, বুলবুল চৌধুরী, আনোয়ারা সৈয়দ হক, ইমদাদুল হক মিলন, ফরিদুর রেজা সাগর, নাসরীন জাহান, আনিসুল হক, মশিউল আলম, রেজানূর রহমান। উপন্যাস লেখেননি এমন ৯ ঔপন্যাসিক ১. শওকত আলী ২. হাসান আজিজুল হক ৩. রাহাত খান ৪. আবদুল মান্নান সৈয়দ ৫. রশীদ হায়দার ৬. বিপ্রদাশ বড়–য়া ৭. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ৮. মঈনুল আহসান সাবের ৯. সুশান্ত মজুমদার এবারের ঈদসংখ্যায় ৫ প্রবীণ ও ৫ নতুন লেখকের উপন্যাস ১. সৈয়দ শামসুল হক : তিমির অবগুণ্ঠনে / অন্যদিন ২. হুমায়ূন আহমেদ : শুভ্র গেছে বনে / অন্যদিন ৩. হাসনাত আবদুল হাই : পানেছারবানুর নকশিকাঁথা / যুগান্তর ৪. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আজগুবি রাত/ প্রথম আলো ৫. রিজিয়া রহমান : কেয়াপাতায় নৌকা ভাসার দিন/ অনন্যা ক্স শাহীন আখতার : সখি রঙ্গমালা / প্রথম আলো ক্স হরিশংকর জলদাস : দহনকাল / জনকণ্ঠ ক্স নাসিমা আনিস : চন্দ্রভানুর পিনিস / সমকাল ক্স প্রশান্ত মৃধা : আপন সাকিন / যুগান্তর ক্স মোহিত কামাল : চেনা বন্ধু অচেনা পথ / জনকণ্ঠ এবারের ঈদসংখ্যার কিছু বৈশিষ্ট্য ক্স ছিল গোয়েন্দা কাহিনীর আধিক্য। প্রথম সারির সকল পত্রিকায় ছিল কমপক্ষে একটি করে গোয়েন্দাকাহিনী।

বলাবাহুল্যই যে গোয়েন্দা কাহিনীকে কখনোই মূলধারার সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। তাছাড়া এগুলো লেখাই হয় বিদেশি কাহিনী অবলম্বনে, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। এবার প্রথম আলো-র মতো পত্রিকায় দু’টি গোয়েন্দা উপন্যাস ছাপা হয়েছে। বাদবাকি ৫ ঔপন্যাসিকের ভেতর দু’জন আবার প্রথম আলো পরিবারের সদস্য। (ঈদসংখ্যা নিয়ে মজাদার সব বিজ্ঞাপন ছাপা হয়।

প্রথম আলো-য় ইতিহাসনির্ভর বা ইতিহাসাশ্রয়ী একটি খণ্ড উপন্যাসের বিজ্ঞাপন ছাপতে গিয়ে বলা হয় এটি ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’। প্রকাশের আগেই একটি রচনা কিভাবে ইতিহাস সৃষ্টি করে তা আমাদের বোধগম্য নয়। ) ক্স বেশ ক’টি ঈদসংখ্যায় কিশোর উপন্যাসের অন্তর্ভুক্তিও একটি লক্ষণীয় বিষয়। এক মলাটের ভেতর শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয় শ্রেণীর পাঠকের মননের খাদ্য পরিবেশন যে সঠিক নয়Ñ এটা কে বলে দেবে বিজ্ঞ সম্পাদকদের? ক্স ৬ থেকে ৮ পৃষ্ঠার মধ্যে ‘উপন্যাস’ লেখার প্রবণতা এবারও লক্ষ্য করা গেল। আল মাহমুদ সমকালে, ইমদাদুল হক মিলন যুগান্তরে, রফিকুন নবী, হাশেম খান ‘সাপ্তাহিক’ পত্রিকায় এমন মাপের ‘উপন্যাস’ লিখেছেন।

ক্স ঈদসংখ্যায় পাঠকনন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের লেখা পাওয়ার জন্য কাগজঅলারা নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। একটি দৈনিকের সাহিত্য ম্যাগাজিন আকস্মিকভাবে রমজানের শুরুতেই তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ছাপে। যদিও ওই পত্রিকা ঈদসংখ্যার জন্য এই লেখকের উপন্যাস পেতে ব্যর্থ হয়; তবু উপন্যাস নামে কয়েক পৃষ্ঠা যা ছাপানো হয় তা লেখকের স্মৃতিকথা মাত্র। স্মৃতি প্রতারণা না করলে বলি, ওই স্মৃতিকথার দু-একটি ঘটনা আমরা আগেও পেয়েছি অন্য কাগজে। আরেকটি দৈনিকের ঈদসংখ্যায় ভারতীয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি ‘জন্মদিনের উপহার’ ছাপা হয়।

এটি হুমায়ূন আহমেদের ১ পাতার লেখা। পত্রিকার লীড উপন্যাসটি আবার অভিন্ন ভারতীয় লেখকের! ক্স ভারতীয় উপন্যাস লেখকদের ২০-২৫ ভাগ অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে বেশ ক’টি পত্রিকায়। ক্স ঘোষণা দিয়ে নবীনদের উপন্যাস আহবান করেছিল দৈনিক সমকাল এবারই প্রথম। দু’বছর আগে দৈনিক যুগান্তরে এই উদ্যোগটির সূচনা ও সমাপ্তি। যুগান্তর সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আমার ওই প্রস্তাব অনুমোদন করেন এক সপ্তাহের মধ্যে।

আইডিয়াটি অবশ্য তারও এক বছর আগের। (এক নামী ঈদসংখ্যার সম্পাদক এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন এক সাক্ষাৎকারে, কিন্তু নিজের পত্রিকায় এর প্রয়োগ ঘটাননি!) বিডিনিউজের মালিকের ‘সাপ্তাহিক একাত্তর’ পত্রিকায় বিশেষ পরিকল্পনাটি তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল। সেখানে আমি ছিলাম ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। যুগান্তর সাহিত্য সাময়িকীতে রঙিন বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল কয়েক সপ্তাহ ধরে। স্বদেশ ও বিদেশ মিলিয়ে আমরা পেয়েছিলাম ৬০জন বাংলাদেশী তরুণ লেখকের উপন্যাস।

একটি গোটা টিম রাতদিন পড়েছিল উপন্যাসগুলো। যেটি ছাপা হয় সেটি ছিল লেখকের প্রথম উপন্যাস। আমার মনে একটু সংশয় ছিল যে সম্পাদক হয়তো আমাদের টিমের চূড়ান্ত নির্বাচনটি নাকচ করে দেবেন। ৫ জনের মনোনীত প্যানেলের অন্য কেউ হয়তো পেয়ে যাবেন শীর্ষ আসন। যাহোক, তা হয়নি।

হরিশংকর জলদাসের ‘জলপুত্র’ সর্বসম্মতিক্রমে প্রথম হয়ে যুগান্তর ঈদসংখ্যায় (২০০৭) প্রকাশিত হয়। অন্য চারটি নির্বাচিত উপন্যাসের লেখকের নাম আমরা ঈদসংখ্যায় ছাপিয়ে দিই। কিন্তু সমকালে একটু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করলাম। যাঁর উপন্যাস ছাপা হয়েছে তাঁকে উপন্যাসের জন্য আগেও একটি পত্রিকা পুরস্কৃত করেছে। তাছাড়া সমকাল বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপন্যাস প্রাপ্তির বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেয়নি।

অন্য কোনো নবীন ঔপন্যাসিকের নামও প্রকাশ করেনি। উল্লেখ্য, বর্তমানে সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। দেশের দৈনিক সংবাদপত্র জগতে ম্যাগাজিন আকারে ৫-৬শ’ পৃষ্ঠার ঈদসংখ্যা ক্রোড়পত্রের প্রবর্তক তিনিই। এর আগে কেবল সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক পত্রিকাই বর্ধিত কলেবরে ঈদসংখ্যা প্রকাশ করতো। ক্স বিচিত্র বিষয় নিয়ে এবার উপন্যাস বেরিয়েছে ঈদসংখ্যায়।

প্রবাসের পটভূমি এবং প্রবাসযাত্রা নিয়ে উপন্যাস ছিল গত বছরের মতোই। উপন্যাসের বিষয় হিসেবে এসেছে প্রেম, প্রয়াত রাজনীতিকের জীবন, অনলাইন সামাজিক নেটওয়ার্ক ‘ফেইসবুক’ সংক্রান্ত জটিলতা, বহুল আলোচিত ওয়ান ইলেভেন, পিলখানা ট্রাজেডি, নব্বুইয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন এবং আরো অনেক কিছু। আমাদের লেখকরা সত্যিই শতফুল ফুটিয়েছেন। ক্স সায়েন্স ফিকশনের সংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। প্রাবন্ধিক-গবেষক ড. ফজলুল আলমের সায়েন্স ফিকশনের নেপথ্যে বহমান ছিল সমকালীন সমাজবাস্তবতা।

উপসংহার কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো সম্পাদককে আহত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। দেশীয় সাহিত্য ও বিবিধ লেখাচর্চার পথ সুগমের স্বার্থেই আমরা গঠনমূলক সমালোচনা করে যাবো। এই পোড়ার দেশে একেকজন সৃষ্টিশীল লেখক তৈরি হওয়া বিরাট ব্যাপার। কত শ্রমে কত বেদনায় কত রক্তপাতে জন্ম নেন একজন সাহিত্যিক; কত উপেক্ষা আর কতই না পরিহাস তাঁর জোটে গোটা জীবনভর। সাহিত্য এমনই একটি ক্ষেত্র যেখানে সার্বক্ষণিকভাবে আত্মনিয়োগের সুযোগ নেই, জীবিকার জন্য লেখককে কোনো না কোনো অলেখকসুলভ কাজে নিযুক্ত থাকতেই হয়।

তাই লেখকও যেন পুড়ে পুড়ে খাঁটি সোনা হন সেটাই চাওয়া। লেখকদের ভালোবাসলে বেশিবেশি তাঁদের সমালোচনা করে যেতে হবে। আমরা চাই সাহিত্যের আলো পৌঁছে যাক সমাজের সকল ‘অন্ধ’ কক্ষে। আমরা চাই ঈদসংখ্যা নিয়ে আমাদের সকলের সকল শঙ্কা ঘুচে যাক। http://www.banglamati.net.bd/


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।