কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
কালকা সারা রাত লেনিন ভাইয়ের সাথে গ্যাজাইছি, একটা সাইট বানামু দুস্তদের সাথে কন্ট্যাক্টের জন্য ভাবতেসি। ভাইয়ে ত চারটার দিকে তাও ঘুমাইছে কিন্তু আমার আর ঘুম আসল না। সাতটার দিকে মুখ ধুইতে যেয়ে আয়নার দিকে তাকায়া দেখি, দাঁত মুখ চোখ খিঁচিয়ে আছে। যাউক, যামু ত ভার্সিটিতেই, ফ্যাশন শোতে ত আর যামু না ! তাই ওই অবস্থাতেই ট্রাউজারটা চেঞ্জ কইরা জিন্স পইড়া দিলাম দৌড়।
ক্লাস ৯ টা। যাইতে লাগে ১ ঘণ্টা। আমি বাসে উঠলাম ৮ টা ১০ এ। ১০ মিনিট পরে বাস আসছে, আমার দোষ নাই। বিশাল লাইনের এক্কেরে শেষে আমি।
ত, ডিসকভারীতে উঠলাম। মানুষের ভীড়ে প্রচণ্ড গরম, দরজার গায়ে এক পা দিয়ে চাপাচাপি করে আরেক পা শূন্যে ঝুলিয়ে রওনা দিলাম। জামে জামে সময় কাটে। দুনিয়ার সব মানুষ বাংলাদেশে কেন আইসা বইসা আছে আমার মাথায় ঢুকে না। ঐ যাই হউক, মহাখালী ফ্লাইওভারে যাইতে তখনও তিন মিনিটের রাস্তা, সেইখানে জ্যাম পড়ল।
জ্যামের মধ্যে আমার উপর একজনের হাত, পাশে আরেকজনের হাত, পিছে আরেকজনের হাত, মোটামুটি খাঁচাবন্দী হয়ে আশেপাশে গাড়ির ভিতর ইতিউতি তাকানো শুরু করসি সৌন্দর্য্যের খোঁজে। সামনেই দেখি একটা গাড়ি, গাড়ির পিছে লেখা আইনজীবী। ব্যাপারটা বুঝলাম না, তুমি আইনজীবী হইলে সেটা পিছে লাগায়া রাখতে হবে কেনু? তুমি কী আইনের ডর দেখাও যে, তুমি ব্যারিস্টার, তুমি আমারে ফাসায়া দিবা??
আমি সারাজীবনে কখনই শো অফ করার মানসিকতাকে পছন্দ করি না। আইনজীবীর গাড়ি ত আর শ্লা আম্বুলেন্স না। যাউক, জ্যামটা শেষ হইল আর পাশে থেকে ধুম করে বাস ওভারটেক করতে চাইল।
যা হওয়ার তাই হইল, বাসের সাথে ধাক্কা। প্রাইভেট কার এক্কেবারে দরজার দিকে ট্যাম খায়া গ্যাছে। গাড়িটা ওদের ড্রাইভার ওভাবেই রেখে দিল। বাস আর সামনে যাইতে পারে না।
ওই গাড়ির ড্রাইভার ভাব নিয়ে বের হয়ে আসল।
এসে বাসের ড্রাইভারকে নিচে নামতে বলল। বাসের ড্রাইভারের কোনই দোষ নাই। ওই শ্লারই দোষ। যাউক, ড্রাইভার নামে নাই, কিন্তু হেল্পয়ার আগায়া গ্যাছে। হেল্পার একটু চ্যাঙড়া টাইপের।
ওরে ড্রাইভারটা ধরে দিল একটা থাপ্পড়। অতক্ষণে, সেই আইনজীবি নেমে গ্যাছে। পাকা চুল, শক্ত শরীর, মোটামুটি ভূড়ি। যাউক, গাড়ির ড্রাইভার হেল্পাররে মাইরা ঝাল তুলতেছে। আমি ত সামনে দাঁড়িয়ে হতভম্ব।
সব গাড়ি চলে যাচ্ছে, আমরা শুধু রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছি।
পিছন থেকে কে যেন আমাকে ধাক্কা দিল, ওই আপনারা নামেন না ক্যান? আর কিছু বলা লাগে নাই, লাফ দিয়া নাইমাই সেই ড্রাইভার থেকে হেল্পারকে আলাদা করলাম। অতক্ষণে অন্যান্য লোকজন নেমে পড়েছে। তারা ড্রাইভাররে এক দুই ঘা দিল। এতক্ষণে সেই আইনজীবী এগিয়ে আসল।
আমার হাত থেকে হেল্পারকে কলার ধরে টেনে নিল। আর ধুমায়া ওরে মাইর। এই বয়সী আর এমন একটা লোককে পাবলিক কিছু বলতে পারতেছেনা, সবাই চিল্লাইতেছে যে, ওর দোষ কী? দোষ ত আপনাদের।
ওইদিকে আমার দেরী হয়ে গেছে। আর মানুষেরও ত অফিস আছে।
যা হওয়ার তাই হল, এক মধ্যবয়েসী লোক এগিয়ে আসল। কোন কথা নাই, সোজা আইসা সেই আইনজীবীরে চটকানা। আর কাউরে কিছু বলতে হয় নাই, ওই শ্লা আইনজীবীর ঘাড়ে লাফ দিয়া পড়লাম। এক ধাক্কা দিয়া ওর থেকে হেল্পাররে ছুটায়া আনলাম। আরেক ধাক্কা দিয়া ওরে ওর গাড়ির সাথে পিঠ লাগায়া দিলাম।
সব লোক মিল্যা ওরে ধরছে, গালি গালাজ দিতাছে। যাউক, আমি সরে আসার পর, পিছন থেকে দেখি ব্যাগে টান পড়তাছে। তাকায়া দেখি কাহিনী।
কাহিনী হল, আইনজীবীর মেয়ে গাড়ির ভিতর থেকে আমার ব্যাগ ধরে টানতেছে । এসিতে জন্ম নেয়া মাইয়া, মডেলদের মত ড্রেস আপ আর চেহারা।
হোয়াট আর ইয়ু ডুইং? আরে, মেয়ে মানুষ, না পারি ঝারি দিতে না পারি ব্যাগ ধরে উলটা টান মারতে(নারীবাদীরা আবার চেইতেন না যে, মেয়ে হইলে কী দুর্বল ভেবে মাইর দেয়া যাবে না নাকি !! মানে দুর্বল ভাবি নাই কিন্তু রিসপেক্ট করসি। যাই কই, শ্লার নারীবাদীরা আমার উলটা যায়,তাই পরিষ্কার কইরা নিলাম!!)। কী আর কমু !! পরে ওরে কইলাম, তুমি হয় আমার ব্যাগ নিয়া নাও, নইলে ব্যাগ ছাড়। এমনে টানলে ত হইব না ! পরে ছাইড়া দিল।
আইনজীবী আমারে কয়, আ’ম ব্যারিস্টার।
ইউ নো, আ’ম এলিট ? বাড়াবাড়ি করবা না। ধূর শ্লা, তোরে টাইম দেয়ার টাইম নাই আমার, আমি কইলাম, উই আর পাবলিক। নাউ হোয়াট? আর পাবলিক চ্যাইতা পুরা ফায়ার। পিছন থেইকা এক দুবলা পাতলা ভদ্রলোক আইসা সোজা আইনজীবীরে ধাক্কা, কয়, তোদের এলিটদের খাইছি।
আর কী কমু, এইবার জাতি চ্যাইতা গেছে।
মিলিটারী পুলিশ আগায়া আসতেছে। আইনজীবী বুইঝা গ্যাছে যে, মিলিটারী পুলিশ কাছে আসলেই লোকজন শেষবারের মত মিলিত ধোলাই দিবে, তাই তাড়াতাড়ি গাড়ীতে উইঠা গ্যাছে গা।
ক্লাসে যাইয়া দেখি, ৭ মিনিট বাকি। স্যার আমারে কয়, এলিটদের মত চললে ত হবে না। ক্লাস করতে আসছ নাকি ফ্যাশন শো?
ধূর শ্লা, ক্লাসে প্রেজেন্টও পাইলাম না, আর কোন ক্লাসও ছিল না।
১০ মিনিটের জন্য ভার্সিটি আইলাম তাইলে। আসার সময় রাস্তার গাড়ির ভিতরে ইতিউতি সৌন্দর্য দেইখা মন ঠান্ডা করলাম। ধূর শ্লা, ফেরত আইসা ব্লগাইতে বসলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।