কথা বলি মানুষের
বর্তমান ক্ষমতাসীনদের দাপটে সর্বত্র তটস্থ থাকছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। টেন্ডার দখলে তাদের জুড়ি নেই। কুমিল্লা শহরে বর্তমান টেন্ডার প্লেয়ারদের নিউজ এসেছে আজকের সমকালে। এই নিউজ যখন পাঠকের হাতে পৌছবে তখন তাদের মুখোশ উন্মেচন হবে। আর তাই কুমিল্লার কোন ষ্টলে পাওয়া যাচ্ছেনা সমকাল।
এমুহুর্তে এখানকার হট খবর এটি। খোজ নিয়ে জানা গেছে পত্রিকা কুমিল্লা শহরে প্রবেশের পথে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনায় কোন অদৃশ্য ইশারায় পত্রিকা গায়েব হয়ে গেছে।
সজল জাহিদ/মাসুক আলতাফ চৌধুরী, কুমিল্লা থেকে ফিরে-
জোট সরকারের জায়গায় মহাজোট, ছাত্রদলের স্থলে ছাত্রলীগ আর গলাকাটা বিল্লালের জায়গায় তুহিন। এছাড়া কুমিল্লা এলজিইডি অফিসের অবস্থা আগের মতোই আছে। টেন্ডারবাজ বিল্লালকে যেমন সবাই সমঝে চলত, তুহিনের ক্ষেত্রেও তাই।
ক্ষমতার পালাবদলে ব্যক্তির বদল ছাড়া আর কিছুই হয়নি। তুহিনের দাপট এতটাই যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে সমকালের কাছে স্বীকার করেছেন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের হুইপ মোঃ মুজিবুল হক।
তুহিনের এ দাপট যে ছাত্রলীগের পরিচয়ে সেই ছাত্রলীগও তাকে স্বীকার করছে না। কিন্তু তাতে কিছুই যায় আসে না। বিল্লালের নাম শুনে যেমন কর্মকর্তারা দ্রুততার সঙ্গে ওয়ার্ক ওর্ডার দিয়ে দিতেন, তুহিনের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক
সূত্র বলছে, টেন্ডারবাজিতে তুহিনের শক্তির মূল উৎস শহরের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
কুমিল্লা শহরের এলজিইডি ভবনে গিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতার পালাবদলে দখলেরও পালাবদল হয়েছে। সরকার বদলের পরপরই এলজিইডি ক্যাম্পাসেই বিলল্গাল বাহিনীর অন্যতম টিপুকে মারধরের মাধ্যমে যাত্রা করে তুহিন বাহিনী। এক ধোলাইয়েই আশপাশের অনেক সরকারি অফিসই তাদের দখলে চলে আসে। তাছাড়া জোট সরকারের সময়ে যেসব দখল হয়েছে সেগুলো ছাড়াতেও তুহিন বাহিনীই এখন কুমিলল্গার মহৌষধ।
বিএনপি ক্যাডার থেকে পৌর-কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়া বাদলকেও শায়েস্তা করেছে তুহিনরা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের বাগিচাগাঁও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশল অধিদফতরে প্রকাশ্য দিবালোকে তুহিন লাঞ্ছিত করে ঠিকাদার ও কুমিলল্গা দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহমানকে। নিজের লাঞ্ছিত হওয়ার কথা স্বীকার করে আবদুর রহমান সমকালকে বলেন, 'তুহিন তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এসে আমাকে মারধর করে। আমার পাঞ্জাবি পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলে তারা। তুহিনের ভয়েই এখন আর তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি করছেন না।
'
এলজিইডিতে দরপত্র জমা দিতে এসে নাস্তানাবুদ হয়ে কোনোরকমে ফিরতে পেরেছেন তিতাস উপজেলার ঠিকাদার আজম খান। দরপত্র জমা নির্বিঘ্ন করতে এলজিইডির উদ্যোগে পুলিশ সুপারের অফিসে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে খানিকটা সাহস করেই দরপত্র জমা দিতে এসেছিলেন তিনি। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। আজম খান বলেন, বিষয়টি দাউদকান্দির সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়াসহ অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের জানিয়েছি।
দেখা যাক তারা কী করেন। তাদের সঙ্গে আলোচনার কারণেই থানায় অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি।
তুহিন বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হওয়া ঠিকাদারদের তালিকা দীর্ঘ। জেলা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য আ হ ম মোস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) পরিচিত ঠিকাদার হাজতখোলার সোহাগও এলজিইডিতে এসে তুহিন বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পাননি। ফলে পুরনো-পরীক্ষিত ঠিকাদাররাও এখন আর এলজিইডির ওপথ মাড়াচ্ছেন না।
তবে তুহিন আবার কারও কারও জন্য হয়ে এসেছেন আশীর্বাদ। এলজিইডির সরকার সমর্থক ঠিকাদার, পদবিধারী নেতা ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে এক রকম লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তুহিন বাহিনী। দরপত্র ভাগবাটোয়ারা, বল্গক দেওয়া, কাজ চলাকালীনই বিল পাইয়ে দেওয়া, বরাদ্দ না থাকলেও বিলের ব্যবস্থা করা, ঠিকাদারের পক্ষে প্রকৌশল প্রতিবেদন প্রদান সবই করে দিচ্ছে তুহিন। ইংরেজিতে বলা যায় লজিস্টিক সাপোর্ট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলজিইডির এক সহকারী প্রকৌশলী বলেন, প্রতিদিন আমাদের আতঙ্কে দিন কাটে।
নির্বাহী প্রকৌশলীও আতঙ্কে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা থেকে জানা যায়, তুহিনরা এলজিইডি চত্বরে আসে ৮/১০টি হোন্ডায় চড়ে। কম বেশি প্রতিদিনই মহড়া দেয় তারা। দরপত্র ক্রয় থেকে জমাদান পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে তাদের সংখ্যা আবার অনেক বেড়ে যায়। ওই দিন উৎসবের মেজাজেই সারা দিন এলজিইডি অফিস পাহারা দেয় তুহিন বাহিনী।
কে কখন আসে, কখন যায়_ সবই নজরে রাখা হয়। সূত্র জানিয়েছে, দাপট দেখাতেই এলজিডিইর অফিসিয়ালদের গাড়ির জায়গাজুড়ে তারা মোটরসাইকেল রাখে। এই নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বাধা দিয়েও বিপাকে পড়েন।
সূত্র বলছে, তুহিন মূলত সদরের এমপি আ ক ম বাহউদ্দিন বাহারের সহযোগী এবং ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের ছোট ভাই। এই বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন_ ছোটরার রুবেল, খোকা, রাজন, তালপুকুর পাড়ের মুন্না, রতন, ঝাউতলার বাদল, সংরাইশের সোহেল, ঠাকুরপাড়ার টাইগার টিপুসহ আরও অনেকে।
তুহিনের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইলে তিনি বলেন, গলাকাটা বিল্লালের সঙ্গে আমার তুলনা করা ঠিক হবে না। বিল্লাল কী করেছে কুমিল্লার সবাই তা জানে। আমাকেও সবাই চেনে। তবে মাঝে মধ্যে হয়তোবা সদরের কেউ কাজ কিনলেও আমরা অনুরোধ করি যে কাজটা আমাদের দিয়ে দেন।
তাছাড়া আমি নিজেও একজন ঠিকাদার। কারও লাঠিয়াল হয়ে কাজ করার সময় কোথায়?
এমন বদনাম ছড়ানোর পেছনে হুইপ মুজিবুল হক এবং কুমিল্লার আরও কয়েকজন এমপির হাত রয়েছে বলে দাবি করে তুহিন। কিছুদিন আগে হুইপের লোকরা তার নামে মামলা দিয়েছে উল্লেখ করে তুহিন বলে, আগেরবার দল যখন ক্ষমতায় এলো তখনই এক দিনে আমার নামে ১৩টা মামলা করিয়েছিলেন মুজিবুল হক। আমি জানি, উনি আমাকে ছাড়বেন না। সে কারণে কৌশলে নানাভাবে আমার নামে অপ্রচার চালাচ্ছেন।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। মৌখিক অভিযোগ আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে কুমিলল্গার পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানান, এলজিইডির তরফ থেকে আমাদের অফিসে দরপত্র জমাদানের চিঠি দেওয়া হলেও টেন্ডারবাক্স কিংবা কোনো প্রতিনিধিও পাঠানো হয়নি। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীকে আমি জানিয়েছি।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে শেষ পর্যন্ত সে কাজ না করা ঠিক হয়নি। তবে তুহিন বাহিনী সম্পর্কে তার বক্তব্য, 'কারও বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। '
তুহিনের প্রসঙ্গ তুলতেই জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিকদার স্পষ্ট ভাষায় বলেন, সে ছাত্রলীগের কেউ নয়। সে একজন ব্যক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে লালিত-পালিত। টেন্ডারবাজি সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার গঠনের পরপরই নেত্রীর নির্দেশে আমরা ছাত্রলীগের সকল কর্মীকে কঠোর ভাষায় হুশিয়ার করেছি।
টেন্ডারবাজি যেই করুক তার বিরুদ্ধে কমিটি ব্যবস্থা নেবে।
জাতীয় সংসদের হুইপ ও চৌদ্দগ্রামের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মুজিবুল হক তুহিনের নাম উচ্চারণ না করেই বলেন, আপনারা যা জানেন তা সত্য। তাছাড়া সে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা এখনই কিছু করতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলেছেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি 'না' বোধক উত্তর দেন।
জেলা আওয়ামী লীগ খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে স্থানীয় সাংসদ আ ক ম বাহউদ্দিন বাহার সমকালকে টেলিফোনে বলেন, শুধু তুহিন কেন, আমি যেহেতু সদরের এমপি আমার প্রশ্রয় ছাড়া তো এখানে কারও কিছু করার কথা নয়। তাছাড়া আমাদের কর্মীরা কি ভাত খাবে না? তিনি বলেন, তুহিন কাজ নিচ্ছে, কাজ করছে। তবে কয়টা কাজ সে পেয়েছে এটা খোঁজ নিয়ে তারপর যদি দরকার হয় তার বিরুদ্ধে কিছু লেখেন। তিনি বলেন, গত নয় মাসে একশ' কোটি টাকার কাজ হলেও আমি বা আমার লোকরা তো ১০ কোটি টাকার কাজও নেইনি।
তাহলে কেন আমাদের বিরুদ্ধে এত কথা হচ্ছে? এর পেছনে অনেক বড় রাজনীতি আছে।
নিউজ লিংক http://www.shamokal.com/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।