আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার নীরব কান্না (বর্তমান এবং ভবিষ্যত বাবা-মাদের জন্য আবশ্যক)

হলুদ পাঞ্জাবীর একটা অদ্ভুত ব্যাপার হল এই পাঞ্জাবী পরার পর নিজকে মহাপুরুষ মহাপুরুষ মনে হয়!!! ভালো কাজের নেশায় পেয়ে বসে। মানুষের আনন্দাশ্রু দেখতে তখন বড্ড ভালো লাগে, মানুষ হয়ে জন্মেছি অথচ মানুষের ঐ অশ্রু দেখবো না তাই কি হয়!!!!

রাতে দেখা সাদাকালো(গবেষকগণ তাই বলেন,স্বপ্ন নাকি রঙহীন হয়। ) স্বপ্নগুলো ভোরে সূর্যের মুখ দেখেনা। যাওবা দেখে তা দিনের বেলা অলিক বলেই মনে হয়! আমি অন্য অনেকের মতই স্বপ্ন মনে রাখতে পারিনা। শুধু রাতে দেখা রঙহীন স্বপ্নই নয় দিনের আলোয় জাগ্রত অবস্থায় দেখা বর্ণিল স্বপ্নগুলোও মনে রাখতে পারিনা।

রাতে ঘুমাতে যাবার ঠিক আগে ভাবনার আকাশে বহুরঙ্গা যে ঘুড়িগুলো উড়িয়ে দেই তা দিনের আলোয় ভাবতেও ভয় লাগে। তাযে বড্ড বেশী বেমানান। একসময় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমি ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। সেখানে আমি কতবার যে শোয়েব আকতারের বলকে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছি তা যে স্বপ্ন দেখান সে জানে। অথবা মনের কোন ফোল্ডার যেখানে শুধু স্বপ্নের ফাইলগুলো লোড করা থাকে সেখানে অতি অবহেলায় পড়ে আছে।

মাঝে মাঝে অন্য ফাইল সার্চ দিলে সেগুলোও বেরিয়ে আসে। আর সেসব স্বপ্নের কথা না হয় বাদই দিলাম। যেগুলো কথা আমার বাড়ির ৩০ বাই ৩০ ফুট লন জানে, সেখানকার ফুলগাছগুলো জানে, সেখানের মাটি যার উপর আমি আমার ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে একা একাই ব্যাটিং করেছি। কখনও আফ্রিদীর লেগ স্পিনে দূর্দান্ত সব সুইপ শর্ট খেলেছি, বিশ্বের সেরা সেরা বোলারদের বলে পুল করেছি। বিশ্বাস করুন একটুও বেমানান মনে হয়নি তখন।

সেদিন মনে হত ঠিক পারবো!!!! হাস্যকর!! হাস্যকর কিনা বলুন???? কিন্তু সেই আমি কিন্তু থেমে নেই। মা-বাবার চাপাচাপিতে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করেছি প্রায় আট বছর হতে চলল!! আট বছর অনেক সময়! গত আট বছরে আমি অনেক কিছু হতে চেষ্টা করেছি। আঁকাআকি করেছি বেশ কিছুদিন। গাছ, ফুল, পাখি, ল্যান্ডস্কেপ। কিন্তু কিছুদিন পরে বুঝতে পারলাম এটা আমার কাজ নয়।

তাই জয়নুল আবেদীন হওয়ার চেষ্টাটা বাদ দিলাম। এবার শুরু হয়ে গেল ডাক্তার বানানোর দৌড়াদৌড়ি!!!!!! বানানো বলছি কারন আমার ইচ্ছার চেয়ে আমার মা-বাবার ইচ্ছাটাই ছিল বেশী। তাই অনেকটা পথ তারাই আমার হয়ে দৌড়ে দিল। কিন্তু ফিনিশতো আমাকেই করতে হবে তাই না?? আর তাছাড়া শুধু দৌড়ে আর কতটুকু হয়!! তার জন্য আমার মাথার ভেতর গোবর আরও খানিকটা কম হওয়া দরকার ছিল!!! কিন্তু কি করা যাবে বলুন সৃষ্টকর্তা মনে হয় জৈব সার রাখার স্থান হিসেবে আমার মাথাটাকেই শ্রেষ্ঠ মনে করলেন। তাই ডাক্তার হওয়া থেকেও ক্ষ্যান্ত দিতে হল।

কিন্তু কিছুতো একটা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে। তা না হলে যে আমি রাডার ছাড়া জাহাজ কিংবা হাল ছাড়া নৌকো হয়ে যাবো!! এইম ঠিক করতে হবে। গোল ঠিক করতে হবে। কিন্তু যখন ঠিক করতে হবে তখন কি আর জানতাম এইম ঠিক করতে হবে “SMART” এই পদ্ধতিতে!! S- Specific, M- Measurable, A- Achievable, R- Realistic, T- Time Bounded. না জানতাম না(SMART- এটা অবশ্য মার্কেটিং এর ভাষা। )।

তাইতো স্কুলের ম্যাগাজিনে যখন আমার কবিতাটি স্যারদের নজর কেড়েছিল সেদিন থেকে কল্পনায় অনেক ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়েছি!!!!!! আরে কবি হয়েছি!!! ইন্টারভিউ না দিলে কি চলে!!!!! কিন্তু আমার এক একেকটা লেখা যখন পত্রিকা অফিসের ডাস্টবিন ভারী করে চলেছে তখন সেই স্বপ্নইবা কতদিন দেখবো বলুন!!! কিন্তু কি করব বলুন এইম ঠিক করতে হবে। এইমহীন মানুষ যে হাল ছাড়া নৌকো!! এবার মা-বাবার খেয়াল করলেন আমি টেকনিকাল বিষয়ে খুব ভালো!!! আমি সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকি। অন্য কারও কম্পিউটারে কোন প্রবলেম হলে আমার ডাক পড়ে। তো তারা আবার দৌঁড়ঝাপ শুরূ করে দিলেন আমাকে IT পড়তে হবে!! তবে এবার যেহেতু একটু বুঝতে শিখেছি তাই এবার একটু জোর খাটাতে চেষ্টা করলাম!! IT আমি পড়বো তবে সেটা অবশ্যি দেশের বাইরে!!! কেন আমি নিজেই দেশের বাইরে বলেছিলাম ঠিক জানিনা। তবে পরিবারের অন্যসবাই বলে, ছোট সময়ে আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করতো বড় হয়ে আমি কি হবো আমি নাকি বলতাম, “বড় হয়ে আমি লন্ডনে একটা বাড়ি বানাবো!!” যাইহোক ঘুরতে ঘুরতে এবার আমি বিদেশের মাটিতে পা দিলাম Software Development এই বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য!!! কিন্তু সেটাও বদলে গেল।

সেখান থেকে Business Marketing। এখন এটা নিয়েই আপাতত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি অস্ট্রেলিয়ায়!!! এর মাঝে এক বিরাট উৎপাত শুরু হয়েছিল এখানের এক ছোট ভাই আমাকে ক্রিকেট খেলার আমন্ত্রন জানিয়ে বসে। আমি ক্রিকেটের ব্যাপারে না করতে পারিনা। তাই একদিন গিয়ে খেলে এলাম এখানের একটা দলে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখুন সেই দলের কোচ আমাকে তার দলের হয়ে লীগ(অবশ্যই তৃতীয় শ্রেনীর কোন লীগ) খেলতে অফার করল।

নির্মম পরিহাস বলছি এই কারনে সেটা আমার পক্ষে এখন আর সম্ভব নয়। এখন ক্রিকেট খেলতে হলে আমাকে বাড়ি থেকে টাকা এনে সেমিস্টার ফি দিতে হবে। পার্টটাইম জব করে যা উপার্জন করি তা দিয়ে থাকা খাওয়া হয়ে যায়। সেখান থেকে সেভ করে নিজেই পড়াশোনার খরচটা দিচ্ছি। মাঝে মাঝে টান পরলে দেশ থেকে টাকা আনছি।

কিন্তু সবটা দেশ থেকে এনে পড়া আমার পক্ষে সম্ভব না। কেন সম্ভব নয় তা বোধ করি আপনাদের বলে বোঝাতে হবেনা। তাই আর সেদিকে পা বাড়াইনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ক্রিকেটটা খুব একটা খারাপ খেলতাম না। আসলে আমি জানি আমার কিছু হওয়া হবে না!!! যেটা হয়তো হতে পারতাম সেটা হওয়া হয়ে উঠেনি।

। কিন্তু সেটা আমার বাবা-মাকে কে বোঝাবে বলুন। তাদের যে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার চাই। অন্য কিছু হলে চলবেনা!!! আমার এই লেখারটার একটা উদ্দেশ্য ছিল। এখন যারা বাবা-মা কিংবা ভবিষ্যতে যারা বাবা-মা হবেন তাদেরকে বলছি আপনি আগে দেখুন আপনার ছেলে কিংবা মেয়ের সামর্থ্য কতটুকু।

দেখুন তারা নিজেরা কি হতে চায়। নইলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখবেন জীবনের এইম খুঁজতে খুজতে তারা একটা এইমহীন জীবন কাটিয়ে দেবে। এবং তাদের লেখাও এরকম কোন ব্লগে খুঁজে পাবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।