আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম-১

চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!

দমনমূলক একটি বহিষ্কারাদেশ: গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীত বিষয়বস্তু, অবকাঠামো, অর্থায়ন ও প্রশাসনসহ পুরো ব্যবস্থা দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। বলা যায় লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সবকিছু। এসব কিছু ঘটছে সাম্রাজ্যবাদ, দেশীয় আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের প্রয়োজনে। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃঢ়তর করা হচ্ছে সামন্তীয় বৈশিষ্ট্যাবলী। সর্বশেষ যে শঙ্কাজনক সংযোজন তা হল একাডেমিক আমলাতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের উদ্ভব।

এটাও এক বাস্তবতা যে, উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষার প্রশ্নে এ গুরুতর বিষয়গুলো নিয়ে অবগতি ও আলোচনা এখনও খণ্ডিত এবং পরিসরের দিক থেকে সীমিত। তাই এ প্রশ্নে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিবর্গের মনোযোগ, চিন্তা ও সংগ্রাম এখনও যথেষ্ট কেন্দ্রীভূত নয়। আমরা এ আলোচনায় উক্ত অপর্যাপ্ত কাজটাকেই কিছুটা এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব। জীবন্ত প্রসঙ্গ হিসাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন আন্দোলনকারীর বহিষ্কারের ঘটনার বিশ্লেষণ থেকে আমরা এ আলোচনা শুরু করব এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঘোষিত ও অঘোষিতভাবে যে সব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে একে একে তার স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা করব। আমরা এ আলোচনায় বোঝার চেষ্টা করব কোন ঐতিহাসিক মুহূর্তে এসব কিছু রূপায়িত হচ্ছে।

এখান থেকে আমরা অগ্রসর হব গণতান্ত্রিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার কর্মসূচি, শিক্ষা আন্দোলন এবং স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার একবারে গোড়ার প্রসঙ্গে। একজন আন্দোলনকারীর বহিষ্কার আপনারা অনেকেই অবগত আছেন, স¤প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চ.বি.)-র একজন প্রগতিশীল সংস্কৃতি কর্মী জাহিদুর রহমান রোকন ছাত্রী লাঞ্ছনা বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের খেসারত হিসাবে প্রশাসন কর্তৃক ন্যাক্কারজনক ভাবে এক বছরের জন্য বহি®কৃত হয়েছেন। লাঞ্ছনা বিরোধী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন করে চলছেন। উক্ত ঘটনার মধ্যদিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক কুৎসিত চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। পরবর্তী আলোচনা তোলার খাতিরে ঘটনার কিছু দিক এখানে তুলে ধরা অপ্রাসঙ্গিক হবে না।

তবে সুযোগের অভাবে এখানে কেবল সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলোই উল্লেখ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। গত ৩০ মে ২০০৯ ছাত্রলীগ কর্মী রাজু এক ছাত্রীকে নিপীড়ন করায় তার বিচারের দাবীতে পরদিন চ.বি. ছাত্র-ছাত্রীরা ফুঁসে ওঠে। পহেলা জুন তিনটি হলের ছাত্রীরাসহ ছাত্র-ছাত্রীরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেলে বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রক্টর জসীম উদ্দিন, সহকারী প্রক্টর চন্দন কুমার পোদ্দার এবং প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্য না হলেও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. কামরুল হুদা এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক তৌহিদ হোসেন চৌধুরীসহ প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা বাধা দেন। আন্দোলন চলাকালে বাধাদানকারী শিক্ষকদের সাথে কয়েকবার রোকনের যুক্তিতর্ক হয়। আন্দোলনের মুখে প্রশাসন ছাত্রী লাঞ্ছনাকারী রাজুকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিলেও ছাত্র-ছাত্রীরা আশ্বস্ত হতে পারেনি।

তারা অফিসিয়াল নথি দাবী করে এবং আল্টিমেটাম দেয়। আল্টমেটাম শেষে ছাত্র-ছাত্রীরা উপাচার্য কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালায়। এসময় ছাত্র ও ছাত্রীদের মাঝে মানব শিকল দিয়ে ফুট খানেক দূরত্ব রক্ষা করছিল ছাত্ররা। সেই পথ দিয়ে প্রশাসনের সহযোগী শিক্ষকরা স্থান ত্যাগ করছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে ধাক্কা আসে।

মানব শিকলে হাতে হাত ধরা রোকন তখন ধাক্কা সামলাতে চেষ্টা করছে। এমন সময় দ্রুত প্রস্থানরত তৌহিদ হোসেনের সাথে তার ধাক্কা লাগার উপক্রম হয়। তৌহিদ হোসেন একটু পর ঘুরে এসে মানব শিকলে তখনও দাঁড়িয়ে থাকা রোকনকে তাকে লাঞ্ছিত করার দায়ে অভিযুক্ত করেন। উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষককে বোঝানোর চেষ্টা করে যে রোকন লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেনি এটা আকস্মিক এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনামাত্র। উল্লেখ্য, দিনের প্রথমভাগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দয়াল নামে রাজুর এক সহযোগী সহকারী প্রক্টর চন্দন কুমার পোদ্দারকে জুতা ছুঁড়ে মারে।

আন্দোলনকারীদের সহযোগিতায় তাকে ধরে পুলিশে দেয়া হয়। একই দিন বিকেলে বাধাদানকারী শিক্ষক এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. কামরুল হুদা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে দয়ালসহ রোকনের বহিষ্কারাদেশ দাবী করে প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়। উক্ত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে রোকনের বিরুদ্ধে তিনজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার এবং শিক্ষকের দিকে ঢিল ছুঁড়ে মারার অভিযোগ করা হয়। পরদিন ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেয় যাতে উল্লেখ করা হয় যে, “... বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করায় উপরিউক্ত ছাত্রকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩০-৫-২০০৯ তারিখ অর্থাৎ ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর থেকে প্রক্রিয়া শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও নারী নির্যাতন আইনে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।

এই সব সিদ্ধান্ত জানা থাকা সত্ত্বেও কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হলের শান্তিপ্রিয় ছাত্রীদের প্ররোচনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে, প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশের নামে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে এবং দু’জন সম্মানিত শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। এই ধরনের পরিস্থিতি যারা সৃষ্টি করেছে বা উসকানী দিয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিপূর্ণভাবে অব্যাহত শিক্ষার পরিবেশের শত্র“। উসকানিদাতাদের এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। ... এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃঢ়তার সাথে পুনরায় এ মর্মে ঘোষণা করছে যে, উপরিউক্ত এলাকাসমূহে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, র‌্যালী ও মানববন্ধন ... পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে।

এ আদেশ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন অবস্থায় নমনীয়তা প্রদর্শন করবে না। ” (সূত্র: দৈনিক সমকাল, ২ জুন ২০০৯) ৪ জুন ২০০৯, প্রশাসন রোকন বরাবর এক বহিষ্কারাদেশ পত্র দেয় এবং তাতে উল্লেখ করে “দুইজন সিনিয়র শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে আপনার স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী আপনাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হলো। ” বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও লাঞ্ছনা বিরোধী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এ বহিষ্কারাদেশের প্রতিবাদ করে। এই বহিষ্কারাদেশের প্রতিবাদ ও প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় পত্রিকায় ছাত্র ও অভিভাবকদের লেখালেখি প্রকাশ পেতে থাকে। তার প্রেক্ষিতে সহকারি প্রক্টর চন্দন কুমার পোদ্দার এবং তৌহিদ হোসেন চৌধুরী পত্রিকায় পাল্টা লেখা পাঠান।

তাতে তারা নিজেদের কর্তৃপক্ষ দাবী করেন এবং যুক্তি দেখান যে, ঘটনার সময় মাত্র ১৩০ জনের মত ছাত্র-ছাত্রী আর সে সময় তার চার পাশে মাত্র চার-পাঁচজন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। সুতরাং বিপুল ধাক্কা দেয়ার মত কোন ঘটনা সেখানে ঘটেনি। তারা দাবী করেন যে, কর্তৃপক্ষের কাছে এ ঘটনার প্রমাণ হিসাবে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। বহিষ্কারের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে লাঞ্ছনা বিরোধী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে প্রশাসন তা করতে দেয়নি। স¤প্রতি তাদের সাঁটানো পোস্টার প্রক্টরের নির্দেশে ছেঁড়া হয়েছে যার ছবি রয়েছে।

উল্লেখ্য, তৌহিদ হোসেন চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এবং স¤প্রতি তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরূত্বপূর্ণ ‘ছাত্র উপদেষ্টা’-র পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়: ১. বহিষ্কারাদেশ পত্রে বলা হয়েছে অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে শাস্তি দেয়া হয়েছে। অথচ এ পর্যন্ত রোকনকে কোন জবানবন্দি বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বা তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগই দেয়া হয় নি। ঘটনার পরদিন রোকন বিডি নিউজের সংবাদে তার বহিষ্কারাদেশের একটি সংবাদ পেয়ে প্রশাসনকে একটি অবগতিমূলক পত্র দেয়। তাতে তিনি পরিষ্কার উল্লেখ করেনÑ “আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা ছাত্ররা ব্যারিকেড প্রদান করি।

এক পর্যায়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. তৌহিদ হোসেন চৌধুরীর সাথে কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমাদের পেছন থেকে উত্তেজিত ছাত্ররা ধাক্কা দিলে, আমরা কয়েকজন স্যারের সামনে এগিয়ে আসি, যাতে আমার সাথে তৌহিদ স্যারের ধাক্কা লাগার উপক্রম হয়, যা স্যারের মনে হয়েছে আমি তাঁকে লাঞ্ছিত করতে উদ্যত হয়েছি। যা আমাকে বিস্মিত করেছে। ” সুতরাং প্রশাসনের কাছে এমন সুস্পষ্ট লিখিত ভাষ্য থাকার পরেও কিভাবে স্বীকারেক্তির ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলো তা সত্যিই এক বিষ্ময়ের ব্যাপার! ২. শিক্ষক সমিতি অভিযোগ করেছে তিন জন শিক্ষককে লাঞ্ছনা এবং ঢিল ছুঁড়ে মারার অথচ শাস্তি দেয়া হয়েছে দু’জন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার জন্য। শিক্ষক সমিতি কোন্ তিন জন শিক্ষকের হয়ে অভিযোগ করলেন, তথ্য-প্রমাণের বিচারের সময় একজন কি হাওয়া হয়ে গেলেন, ঢিল ছুঁড়ে মারার অভিযোগটির সত্যতা কি কর্তৃপক্ষ পায়নি? এটা কি সমিতির পুরো অভিযোগের সত্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ করে না! ৩. নিজেদের কর্তৃপক্ষ দাবী করে দু’জন অভিযোগকারী শিক্ষক প্রমাণের চেষ্টা করছেন ঘটনার সময় ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৩০-এর কম এবং রোকনের চারপাশে তখন মাত্র কয়েকজন ছাত্র ছিল। (সূত্র: চ.বি’র ঐতিহাসিক অর্জন” সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, দৈনিক পূর্বকোণ ২৮.৬.০৯) অথচ ২ জুন ২০০৯ এর দৈনিক যায়যায় দিন-এ ছাত্র সংখ্যা ৮০০ এবং ইত্তেফাকে সহস্রাধিক উল্লেখ করা হয়েছে।

তারা যে ভিডিও ফুটেজের কথা বলছে বাস্তবে উক্ত ঘটনার সময়ের কোন ফুটেজ প্রশাসনের নেই। আর প্রশাসনের কাছে যদি এমন অকাট্ট প্রমাণ থাকে তবে বহিষ্কারাদেশে তা কেন শাস্তির ভিত্তি হিসাবে উল্লেখ করা হলো না, ভিত্তি করা হলো একটা খেলো স্বীকারোক্তির দাবীকে। ৪. লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আন্দোলনে বাধাদানকারী, তারাই অভিযোগকারী, তারাই বিচারক ও শাস্তি প্রদানকারী এবং তারা কর্তৃপক্ষ দাবী করে শাস্তির ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন। এবং সর্বোপরি তারা প্রায় সকলেই আওয়ামী রাজনৈতিক আদর্শের ধারক। ৫. বিচারের প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ ছিল তা-ও একটা প্রশ্নের বিষয়।

আমরা লক্ষ্য করেছি, ছাত্রলীগের মারাত্মক হানাহানির ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির বিষয় ঝুলে রয়েছে। এমনকি ক্রিমিনাল রাজুর শাস্তির জন্য ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে যেতে হয়েছে। অথচ রোকনের বিষয়ে বাছবিচার ছাড়াই শাস্তি দিয়ে দেয়া হলো। এসব কিছু একটা বিষয়কে পরিষ্কার করে তুলে যে, রোকনের প্রতি কেবল অবিচার করা হয়েছে তা-ই নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু, কেন প্রশাসন এতটা মরিয়া হয়ে উঠেছিল? এর উত্তর পাওয়া যাবে চ.বি. ২ জুনের বিজ্ঞাপনে প্রতিফলিত প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে।

এই বিজ্ঞপ্তির ভাষা ও বয়ান সংগ্রামী শক্তির বিরুদ্ধে দেয়া আইয়ুব খান এবং এরশাদের প্রেসনোটের কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। যারা অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হলো, প্রতিবাদ সংগঠিত করল তারা কি-না প্রশাসনের দৃষ্টিতে হলো “উসকানিদাতা” ও “উচ্ছৃঙ্খল”, তারা নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে প্রশাসনের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এদের প্রশাসন “শত্র“” হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং শাস্তি প্রদানের উদ্যোগ নিচ্ছে। আর একথা বলার অপেক্ষা রাখে না রোকন এ আন্দোলনের সামনের সারির একজন। সুতরাং, সে-তো প্রশাসনের চোখে গুরুতর শত্র“ই বটে।

এ ঘটনাকে কেউ যদি স্নেহধন্য বালকদের জব্দ করার শাস্তি হিসাবে কিংবা ছাত্রদের আন্দোলন ভীতি সৃষ্টির প্রয়াস হিসাবেও বিবেচনা করেন হয়ত ভুল হবে না। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শীর্ষ পদাধিকারী শিক্ষকদের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার পতনের গভীরতা ও পচনের ব্যাপকতাকে তুলে ধরে। একাডেমিক আমলাতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের প্রকাশ রোকনের বহিষ্কারাদেশকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যে চরিত্র প্রকাশিত হয়েছে তা অপূর্ণাঙ্গ থেকে যাবে যদি প্রশাসনের আরও কিছু দৃষ্টিভঙ্গি ও পদক্ষেপ বিবেচনা করা না হয়। সকলেই জানেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপর যথা নিয়মে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রদবদল ঘটেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চ.বি.)-এ সরকারি ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিগত সরকার সমর্থিত উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল।

বলা যায়, ছাত্রলীগের এই আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতায় উপাচার্য, প্রক্টরসহ বর্তমানে এক নতুন প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হল, ক্ষমতা পেয়ে প্রশাসনের স্নেহধন্য ছাত্রলীগের বেয়াড়া বালকেরা অপর প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন ছাত্র শিবিরের সাথে এবং নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও নৈরাজ্য চ বিষয়টা এতটা গড়ায় যে, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নৈরাজ্যে অতিষ্ট হয়ে ছাত্রলীগের অভিমানী সভানেত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে আজ্ঞাবাহী চ.বি. প্রশাসন কঠোর হস্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের “শৃঙ্খলা” নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়। (সূত্র: সিনেটের ২১ তম বার্ষিক সভায় উপাচার্যের ভাষণ, ২৮ জুন ২০০৯) তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। দেখা যায়, জরুরী অবস্থাকালীন প্রণীত চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট তথাকথিত “ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্যপালনীয় আচরণ বিধি” কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে শুরু করে।

জরুরী অবস্থাকালে তবুও সংবাদ সম্মেলন ও ঘরোয়া রাজনীতি করা গেছে, কিন্তু, বর্তমানে চ.বি.-তে প্রশাসন সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করতে দেয় নি। প্রশাসন এমনকি ঝুপড়িগুলোতে গিয়ে ছাত্রদের শাসন করছে, তাদের আড্ডার জটলা ভেঙ্গে দিচ্ছে। প্রশাসন সিসিটিভিÑর সাহায্যে বিশ্ঙ্খৃলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। “বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের” চিহ্নিত করার জন্য প্রক্টোরিয়াল বডি একজন ক্যামেরাম্যানও নিয়োগ করেছে যার কাজ হলো আন্দোলনরত বা প্রতিবাদী ছাত্রদের ছবি/ভিডিও ধারন করা। প্রশাসন “শ্ঙৃখলা” রক্ষার নামে সন্তানদের বিষয়ে সতর্ক করে অভিভাকদের মধ্যে ১০,০০০ চিঠি বিলি করেছে।

এসব পদক্ষেপ মূলত রূপ পেয়েছিল জরুরী অবস্থাকালে এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে। আমরা লক্ষ্য করছি, জরুরী অবস্থার অবসান হলেও তার ভূত চ.বি. ক্যাম্পাসে আরো শক্তিশালী হয়ে ঘাড়ে চেপেছে। প্রশাসন যেন “সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ”-এর সাম্রাজ্যবাদী যুক্তি ধার করেছে। তারা বিশৃঙ্খলা দমন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে ছাত্রদের কণ্ঠ রোধ করতে চাইছে। এটা কে না জানে যে, এই সব বিশৃঙ্খলাকারী কেবল চিহ্নিতই নয়, বরং প্রশাসনিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের স্নেহধন্য, চেয়ার অলঙ্কৃত করার সুবিধা অর্জনে “বালকদের আত্মত্যাগে” তাদের প্রতি রীতিমত কৃতজ্ঞ ও দায়বদ্ধ।

সুতরাং, জরুরী সরকারকালীন প্রশাসনের মত বর্তমান প্রশাসনের শৃঙ্খলা রক্ষার নামে গৃহীত যাবতীয় পদক্ষেপের টার্গেট যে আসলে প্রতিবাদী ছাত্ররা- তা সহজেই বোঝা যায়। জরুরী অবস্থাকালে প্রণীত ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্যপালনীয় আচরণ বিধি একাডেমিক আমলাতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদকে পুর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করে দেয়। যার বলে: ১. প্রশাসন ও পুলিশ যে কোন সময় একজন ছাত্রের ব্যক্তিগত দ্রব্যাদি তল্লাসি করতে পারবে এবং ছাত্রদের কোন আপত্তি দন্ডনীয় অপরাধ বিবেচিত হবে। পরিচয় পত্র সার্বক্ষণিক বহন করতে হবে। প্রশাসনকে যে কোন সময় দেখাতে বাধ্য থাকবে।

যেন মার্কিন নিরাপত্তা রাষ্ট্রে প্যাট্রিয়ট আইন জারি করা হচ্ছেÑব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয় বলেও কিছু থাকবে না। ২. মাগরেবের আজানের সাথে সাথে ছাত্রীদের হলে প্রবেশ করতে হবে এবং এ নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। ৩. সপ্তাহে একদিন করে মাসে চার বার আনুমানিক রাত ৯:০০ টায় হল পরিদর্শন করা হবে। চারদিনের একদিনও যদি কোন ছাত্র নিজ কক্ষে অনুপস্থিত থাকে তবে সীট বাতিল করা হবে। ৪. নতুন ছাত্র ও অভিভাবকদের এই “আচরণ বিধি” মেনে চলার জন্য অঙ্গীকার করতে হবে।

নতুবা ভর্তি, পরীক্ষা, পরিচয় পত্র প্রদান প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। বিধি ভঙ্গ করলে শস্তি প্রদান করা হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলোর লক্ষ্য হলো সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর প্রশাসনিক কর্তৃত্বকে চরমে নিয়ে যাওয়া। ৫. একাডেমিক কার্যক্রম চলাকালে মিছিল, সমাবেশ, মাইক্রোফোন ব্যবহার ও স্লোগান দেয়া যাবে না। এর লঙ্ঘন দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।

হলে নির্ধারিত স্থানে অনুমতি নিয়ে সভা করতে হবে। অন্যথায় অপরাধ গণ্য করা হবে। প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া মিছিল, সভা, সমাবেশ করা যাবে না। সকল সংগঠন প্রক্টরের দপ্তরে নিবন্ধিত হতে হবে। কমিটির এবং এক সপ্তাহের মধ্যে নব গঠিত কমিটি সদস্যদের সকলের ছবি প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে।

ধর্মঘট করার অধিকার থাকবে কিন্তু পিকেটিং করা যাবে না। পোস্টার ও দেয়াল লিখন নিষিদ্ধ (যেন জরুরী বিধি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়, এমন ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা বিধেয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বাইরের কোন ইস্যু যেমন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আন্দোলন করা যাবে নাÑ করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করা হবে। এসব কিছুর লক্ষ্য হলো গণতান্ত্রিক শক্তির রাজনৈতিক চর্চাকে সীমিত ও নিয়ন্ত্রণ করা।

সংগঠনগুলোর হাত-পা এমনভাবে বেঁেধ রাখা যেন প্রশসনের স্বৈরতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস না দেখায়। ৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে এমন কোন মন্তব্য, বক্তব্য, বিবৃতি, অশোভন উক্তি, স্লোগান এবং ইস্তেহার বিতরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ যেন জরুরী বিধি অথবা ব্লাসফেমী আইন আর শিক্ষকরা হলেন ফখরুদ্দিন, মইন ইউ যাদের বিরুদ্ধে কিছুই বলা যাবে না। শিক্ষকদের বাসে ওঠা যাবে না। তাদের আবসিক এলাকায় ছাত্রদের প্রবেশ নিষিদ্ধÑ সেখানে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ সাইনবোর্ড টাঙ্গানো থাকবে।

না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর লক্ষ্য হলো একাডেমিক আমলাতন্ত্রের নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্ব ঊর্ধ্বে তুলে ধরা ও রক্ষা করা, ফ্যাসিবাদের বিকাশে যা অন্যতম মতাদর্শগত উপাদান হিসাবে ক্রিয়া করে। উল্লেখ্য, জরুরী অবস্থাকালে চ.বি.-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মধ্য থেকে বড় ধরনের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ মদদে সামরিক বাহিনী কর্তৃক এক রক্তপাতহীন ক্যু-এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন ফখরুদ্দিন সরকার। ফলে এই জরুরী সরকার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ছাত্রদের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চূর্ণ করার জন্য উক্ত “আচরণবিধি”সহ বিভিন্ন ফ্যাসিবাদী মেকানিজম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। কেবল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় একই ধরনের আচরণ বিধি প্রণীত হচ্ছে।

বর্তমানে বুয়েট, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস পুলিশ গঠন করেÑপ্রকৃত পক্ষে পুলিশি ব্যবস্থা কায়েম করা হচ্ছে। সুতরাং, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে একাডেমিক আমলাতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের উদ্ভব কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিষয় নয়Ñ একটি সাধারণ ঘটনা। যে সাধারণ ঐতিহাসিক বাস্তবতায় এই ফ্যাসিবাদী প্রশাসনের উদ্ভব ১৯৯০ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্রমশ অধিক মাত্রায় অগণতান্ত্রিক ও দলীয়কৃত হয়ে পড়তে থাকে। অতীতের গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোর যে টুকু অর্জন ছিল তা খোয়া যায়।

কিন্তু অতি স¤প্রতি ফ্যাসিকরণের যে রূপ দেখা যাচ্ছে Ñ তা প্রধানত রূপ লাভ করে জরুরী অবস্থাকালে। সুতরাং জরুরী অবস্থার চরিত্র সম্পর্কে কিছু কথা এখানে বলা প্রয়োজন। খুব সংক্ষেপে বললে, নতুন শতাব্দীর শুরু থেকে সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিকÑরাজনৈতিক সংকট ব্যাপকভাবে ঘনীভূত হওয়ায় দেশে দেশে তার অনুপ্রবেশ বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে দেখি। এসময়কালে সাম্রাজ্যবাদ এবং তার আঞ্চলিক ঘাঁটি ভারতীয় স¤প্রসারণবাদ বাংলাদেশে তাদের অনুপ্রবেশ বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। নিজ স্বার্থে তারা দেশ-জাতি-জনগণ বিরোধী অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক-সাংস্কৃতিক পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হয়।

কিন্তু, এই ব্যাপক অনুপ্রবেশ এদেশে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদকে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সংকটে নিক্ষেপ করে। বৈদেশিক ও দেশীয় শক্তিসমূহের স্বার্থ রক্ষা করতে হলে তাদের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক ও অন্যান্য কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন প্রয়োজন হলেও তা চ্যালেঞ্জের সম্মূখীন হয়। এই সংকটের মধ্যেই জোট ও মহাজোটের নেতৃত্বে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের দুই অংশের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত রূপ লাভ করে। শাসন ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। সুতরাং, রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থাকে ভগ্ন দশা থেকে রক্ষা করা, একে আরো শক্তিশালী ও দমনমূলক করে তোলার মাধ্যমে দেশী-বিদেশী ক্ষমতাসীন শক্তিগুলোর অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক ও অন্যান্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে সামগ্রিক সংকট থেকে মুক্তি লাভ করার জরুরী পদক্ষেপ হিসাবে সাম্রাজ্যবাদ-স¤প্রসারণবাদের প্রত্যক্ষ মদদে ১/১১-র ক্যুদেতা ঘটে।

তাদের পরিকল্পনা (কিছু রদবদলসহ) অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকারের উপর বর্তেছে ফখরুদ্দিন সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার দায়িত্ব। অর্থাৎ, শাসকশ্রেণী ও শক্তিগুলোর জন্য সংকট উত্তরণের জন্য জাতি ও জনগণ বিরোধী পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে আবার এর বিপক্ষে সব ধরণের গণ প্রতিরোধ রুখতে হবে। সুতরাং, এ অবস্থায় রাষ্ট্রের ফ্যাসিকরণ অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তাই নির্বাচিত সরকার হলেও এই ফ্যাসিকরণ বাড়িয়ে তোলা ছাড়া আওয়ামীলীগের গত্যন্তর নেই। আমাদের সমাজে শোষণ-নিপীড়ন এবং জাতি ও গণবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক শক্তি হল ছাত্র ও শ্রমিকশ্রেণী এবং সংগঠিত প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহ।

এ শক্তিগুলোর দিক থেকেই ফখরুদ্দিনের কণ্ঠরোধী জরুরী সরকার সবচেয়ে তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। এই প্রতিরোধের শক্তিগুলোকে দমনের ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফ্যাসিবাদী প্রশাসন উদ্ভব ঘটছে এমনই একটা ঐতিহাসিক বাস্তবতার মধ্যে। শুধু তা-ই নয়, নির্দিষ্টভাবে সাম্রাজ্যবাদ ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ তাদের স্বার্থে জাতি ও জনগণবিরোধী পথে যেভাবে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চাচ্ছেÑসেখানেও রয়েছে এই ফ্যাসিকরণের সুনির্দিষ্ট উপাদান। বলা যায়, বাংলাদেশের সমাজকে সাম্রাজ্যবাদ-ভারতীয় স¤প্রসারণবাদ এবং আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ তাদের স্বার্থে জাতি ও জনগণ বিরোধী যে আকারে পুনর্গঠিত করতে চাইছে, তার পরিকল্পনা বা কর্মসূচির অন্যতম হলো উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা বা কর্মসূচি। এই পরিকল্পনা যা বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে “উচ্চশিক্ষার বিশ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র” হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) প্রণয়ন করেছে।

এতে রক্ষা করা হয়েছে সাম্রাজ্যবাদ ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের স্বার্থ এবং জলাঞ্জলি দেয়া হয়েছে জাতি ও জনগণের স্বার্থ। এতে অনিবার্যভাবে রয়েছে ফ্যাসিবাদী ও গণতান্ত্রিক প্রশাসনের বীজ। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.