আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ড. আনু মুহাম্মদ ও সরকারের ভূমিকা

প্রেম ছিল, আশা ছিল

ড. আনু মুহাম্মদ পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শোনার পর খুবই মন খারাপ হয়েছিল। ধিক্কার জানাবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একজন শিক্ষকের ওপর এই বর্বরোচিত হামলার ধিক্কার বা নিন্দা জানাবার ভাষা আসলে আমার জানা নেই। দেশে এবং দেশের বাইরে যেটুকু লেখাপড়া করেছি সেখানে শিক্ষক লাঞ্চিত হলে কি বলে তার নিন্দা জানাতে হবে তা আমাদের শেখানো হয়নি। কারণ শিক্ষকরা কখনো লাঞ্চনার শিকার হতে পারেন না, এটাই চিরায়ত সত্য।

ড. আনু মুহাম্মদ এর ওপর হামলার পর ভেবেছিলাম কিছুই লিখব না কাউকে কিছু বলব না। বলে লাভ কি? জয়নাল হাজারী যদি জামিনে মুক্তি মুক্তি পায় তাহলে আনু মুহাম্মদ কে পেটাতে কোন দোষ কোথায়? বাঘকে খাঁচার বাইরে ছেড়ে দিলে তো মানুষকেই খাঁচাতে ভরতে হবে। মনে আছে ১৯৯২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মলয় ভৌমিক কে পিটিয়েছিল তৎকালিন বিএনপি সরকারের পুলিশ বাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পাসে শিক্ষক-ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মৌন মিছিলে অভুক্ত হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পুলিশ। তার অপরাধ ছিল তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে র‌্যালী বের করেছিলেন।

আজও সেই ঘটনার কোন বিচার হয়নি । আর শিক্ষকের বিচার করবেই বা কে? শিক্ষকের তো আর কোন বিশেষ কোন শক্তি নেই যে তার বিচার না করলে সরকারের গদি উল্টে যেতে পারে। বরং ছোট কাল থেকেই ব্যাকরণে পড়ে আসছি-“The teachers are poor" দেশের ও দেশের মানুষের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই নির্মম লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ড. আনু মুহাম্মদ তাঁদেরই একজন। সমাজের প্রায় সর্বস্তরের মানুষই কোন না কোন ভাবে পুলিশি নির্যাতন নিপিড়নের শিকার হয়েছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা পুলিশ কে ব্যবহার করেছে আন্দোলন সংগ্রাম দমনের মোক্ষম অস্ত্র হিসাবে।

আজীবন এই মেরুদন্ডহীন পুলিশ সরকারের দাসত্ব করে এসেছে সরকারের । এযেন সরকারের নিজস্ব এক লাঠিয়াল বাহিনী। বিস্তর উদাহরণ ও প্রমান আছে তাদের ক্ষমতা অপব্যাবহারের। ইতিহাস হয়ে আছে সেই সব জঘন্য অধ্যায়গুলো। ।

তার সর্বশেষ স্খলন হলো অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের মত বিশিষ্টি জনকে লাটিপেটা করা। হেলমেট পরা দাঙ্গা পুলিশ পিটিয়ে শুধু তাঁর ঠ্যাং ভাঙ্গেনি, বরং পিটিয়ে হাড্ডি গুড়া করেছে "দেশপ্রেমের"। জনগনকে পেটানোর ব্যাপারে আমাদের পুলিশ বরাবরই অতি উৎসাহী। আর পেটানার পর তাদের কোন দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হওয়ায় সেই উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। কোহিনূর বা আকবরের মত পুলিশ কর্মকর্তাদেও বিচারের পরিবর্তে পুরসকৃত করা হয়।

চিটাগাং ষ্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের বেঢ়ড়ক লাঠিপেটা করেছিল এই পুলিশ। এসি আকবরের লাথি আর কিল-ঘুসির আঘাতে এক বয়স্ক সাংবাদিকের ধরাসায়ী হওয়ার দৃশ্য মনে হলে আজও বিষ্মিত হই। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময় নির্মম পুলিশী হামলার শিকার হয়েছেন, মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহম্মেদ, দিলীপ বড়–য়া সহ অসংখ্য নেতা কর্মী। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর ও রেহাই পাননি তাদের হাত থেকে। রাতের অন্ধকারে শামসুন্নাহার হলে পুলিশের হামলা, মহিলাদের জাপটে ধরে টেনে হিচড়ে পুলিশের গাড়িতে উঠানোর দৃশ্য আমরা আজও ভুলিনি।

মাত্র কয়েকদিন আগে ব্যবসায়ী আজাদের উপর নির্যাতনের অধ্যায় শেষ হলো তার জামিনের মাঝ দিয়ে। সাগরের তিনটি ব্লগ ইজারা বাতিলের দাবিতে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের পেট্রোবাংলার অফিস ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশের লাঠিচার্জ আরেকটা লজ্জার অবতারণা হলো মাত্র। ড. আনু মুহাম্মদ আহত হবার পর সরকারের অনেক মন্ত্রী এবং শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন। তাঁরা দুঃখ প্রকাশের করেছেন এবং এই ঘটনাকে অনভ্রিপ্রেত বলেছেন। একটি গনতান্ত্রিক সরকারের জন্য ঘটনাটি যেমন বিব্রতকর এবং তেমনি নাগরিক হিসাবে আমাদের জন্যও অত্যন্ত লজ্জার।

স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দেশের সব নাগরিকের আছে। সরকার কোন ভাবেই নাগরিকদের মত প্রকাশের অধিকার হরণ করতে পারে না। মৌলিক অধিকারের এই নিশ্চয়তাগুলোই রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে। ঐ সমাবেশে আনু মুহাম্মদ এর সাথে সাবেক বিচারপতি থেকে শুরু করে সমাজের অনেক বিশিষ্ট নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। দুঃখ শুধু এইখানে যে, এই সরকারকে মানুষ অনেক আশা নিয়ে ভোট দিয়েছে ।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যে এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত তার কোন অগ্রগতি চোখে পড়েনি। তাঁর ভাষ্য মতে, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। সমস্ত দায় দায়িত্ব চাপিয়েছেন পুলিশ বাহিনীর ওপর। তবে কি এটা অতি উৎসাহী পুলিশ বাহিনীর বাড়াবাড়ির ফল ? ব্যবসায়ী আজাদের ঘটনার পর পুলিশ মহাপরিদর্শক বিবৃতি দিলেও এই ঘটনার পর তিনি নিশ্চুপ রয়েছেন কেন? তবে কি তিনি পুলিশের এই জঘন্য কর্মকান্ডকে সমর্থন করছেন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনাকে কোন আমলেই নিচ্ছেন না? পুলিশ মহাপরিদর্শক বারবার পুলিশের সেবার মান বাড়ানোর কথা বলেন, পুলিশকে জনগনের বন্ধু হিসাবে কাজ করার কথা বলেন, অথচ বাস্তবে হচ্ছে তার ঠিক উল্টোটা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত একজন শিক্ষককে পিটিয়ে ঠ্যাং ভাঙ্গা কি পুলিশের সেবার মান, এই কি বন্ধুত্বের নমুণা? ঘটনার কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও এই ঘটনার সাথে জড়িত কোন পুলিশের কোন ধরনের শাস্তি হয়েছে বলে শোনা যায়নি। সরকারের উচিত নিজেদের স্বার্থেই ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দোষী পুলিশদের শাস্তি নিশ্চিত করা। দিনাজপুরে সারের দাবীতে কৃষকের ওপর গুলি চালানো, কানসাট বা ফুলবাড়ীর ঘটনার জন্য খেসারত দিতে হয়েছে তৎকালীন সরকারকেই, কোন বিশেষ বাহিনীকে নয়। সরকারের মনে রাখা দরকার একটি ছোট ঘটনাও অনেক বড় অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। শিক্ষক হেনস্তার ফল কত ভয়াবহ হতে পারে তা টের পেয়েছে গত তত্বাবধায়ক সরকার।

আশা করি সেই ঘটনাটি বর্তমান সরকারের জন্য শিক্ষনীয় হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।