আশির দশকের মাঝামাঝি সময়টাতে ঢাকার ছেলেমেয়েদের খুবই প্রিয় একটি জায়গা ছিল নিউ এ্যালিফেন্ট রোডের একটি অডিও রেকর্ডিং সেন্টার রেইনবো। মূলত এ রেইনবোই বলতে গেলে ঢাকার তথা বাংলাদেশে পাশ্চাত্য তথা ইংলিশ মিউজিককে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তুলে ঢাকার ছেলেমেয়েদের মাঝে।
মূলত ঢাকার সব এলাকা থেকেই স্কুল আর কলেজের (আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের) ছেলেদের (আর অল্পকিছু মেয়েদের) আগমন ঘটতো রেইনবোতে (পরবর্তীতে তার পাশে রিদম আর সুর বিচিত্রা নামের আরো দুইটি অডিও রেকর্ডিং সেন্টার গড়ে উঠে)। তখন্ আসলে ঢাকার ছেলেদের বিনোদন বলতে ছিল পাড়ায় মাঠে ফুটবল অথবা ক্রিকেট খেলা কিংবা আড্ডা মারা কিংবা কিছু সৌভাগ্যবান যারা ছিল তারা হয়ত চুটিয়ে প্রেম করত । তখন ছিলনা টিভিতে ভর্তি ভর্তি চ্যানেল, ছিলনা মোবাইলের ছড়াছড়ি, আর ইন্টারনেট তো দূরের কথা।
আর তখন আস্তে আস্তে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়ে ঢাকার ছেলেরা/তরুণেরা। আর তখন সবাই ছুটে যেত রেইনবোতে। কারণ এছাড়া আর কোথায় ভালো ইংলিশ মিউজিক পাওয়া যেত না। নিউমার্কেটের ক্যাসেটের দোকানগুলোতে তখনও খুবই জনপ্রিয় শিল্পী (যেমন মাইকেল জ্যাকসন, ম্যাডোনা) ছাড়া তেমন কিছু পাওয়া যেত না। কিন্তু তখন ঢাকার ছেলেরা হেভী মেটাল আর হার্ডরকের প্রতি খুব আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
Dio, Black Sabbath, Rainbow, Deep Purple, Scorpions, Iron Maiden, Def Leppard এই রক আর মেটাল ব্যান্ডগুলো প্রচ্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠে ঢাকাতে। আবার অনেকে ছিল যারা পপ গান খুব পছন্দ করত। তাদের কাছে Wham, Duran Duran, Police, The Cars সহ আরো কিছু ব্যান্ড খুব জনপ্রিয় ছিল। এছাড়া Pink Floyd, Dire Straits, The Who, Doors এরও অনেক ভক্ত ছিল। আর রেইনবোতে সবসময়ই এ ব্যান্ডগুলোর নতনু এ্যালবামগুলো পাওয়া যেত।
অবশ্য রেইনবো যেটা করত তা ছিল এক অর্থে পাইরেসী। তারা বাইরে থেকে এ্যালবাম (এলপি আকারে) নিয়ে আসত। তারপর তারা সেগুলো কাস্টমারদেরকে অডিও ক্যাসেটে রেকর্ড করে দিত। কিন্তু বাংলাদেশে সেরকম কোন পাইরেসী সংক্রান্ত আইন কখনো প্রযোজ্য ছিল না। আর ফলস্রুতিতে খুবই স্বল্প টাকা ব্যয় করে ছেলেমেয়েরা তাদের পছ্ন্দ করা গানগুলো রেকর্ড করে নিতে পারত।
তখন ঢাকার সব ছেলে মেয়েরাই ছিল রেইনেবা মুখী। এমনকি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যেসব জনপ্রিয় রকব্যান্ডগুলো গড়ে উঠে (যেমন্ ওয়ারফেইজ, রকস্ট্রাটা, ইন ঢাকা) তাদের অনেক ব্যান্ড মেম্বারই তখন রেইনবোতে বসে আড্ডা মারত।
আর সবকিছু মিলিয়ে তখন ঢাকার তরুনরা যে সময়টুকু পার করেছে সেটিকে রেইনবো জেনারেশন বলা যেতে পারে।
আমিও বড় হয়েছি সেই রেইনবো জেনারেশনে। এখনো মনে পড়ে স্কুল ছুটির পরে কখনো কখনো চলে যেতাম রেইনবোতে।
কখনো গান অর্ডার করতে আবার কখনো গানের ক্যাসেট তুলে নিতে। রেইনবো জেনারেশনের সেই দিনগুলোর কথা বোধহয় কখনোই ভুলতে পারব না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।