আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী, মাদক, সফটওয়্যার আর ম্যাকাফি

রহস্যময় বর্ণিল এক মানুষ জন ম্যাকাফি। কিন্তু কে আসল ম্যাকাফি? কুখ্যাত মাফিয়া, মাদক আর নারী কেলেঙ্কারির মতো অভিযোগ মাথায় নিয়ে বেড়ানো ব্যক্তিটি, নাকি বিশ্বের বিখ্যাত অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাকাফির প্রতিষ্ঠাতা? সম্প্রতি বিবিসি অনলাইন জন ম্যাকাফিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যাতে উঠে এসেছে ম্যাকাফির জীবনের নানা অধ্যায়।
গোপন একটি প্রকল্প নিয়ে আবারও আলোচনায় ম্যাকাফি। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি গোপনে একটি যন্ত্র নির্মাণ করে যাচ্ছেন। ম্যাকাফির দাবি, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নজরদারি থেকে আড়াল করতে পারবেন তিনি।


মার্কিন গোয়েন্দারা সবার ব্যক্তিগত তথ্যে নজরদারি করছেন এমন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন সিআইয়ের সাবেক কর্মী অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন। এ তথ্য ফাঁস করার পর বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত তথ্যে নজরদারির বিষয়টি নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। গোয়েন্দারা যাতে ব্যক্তিগত তথ্যে নজরদারি করতে না পারে সে লক্ষে ১০০ মার্কিন ডলার দামের একটি প্রযুক্তিপণ্য তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন ম্যাকাফি। যন্ত্রটির নাম ‘ডি-সেন্ট্রাল’। যন্ত্রটি মুঠোফোন ও অন্যান্য পণ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

যন্ত্রটি নিজস্ব ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে, যাতে ব্যবহারকারী ছাড়া আর কারও পক্ষে নজরদারি সম্ভব হবে না বলেই দাবি করেন ম্যাকাফি।

ডি-সেন্ট্রাল তৈরির কথা জানানোর আগে থেকেই প্রযুক্তি বিশ্বে ‘কিংবদন্তী’ হিসেবে খ্যাতি জুটেছে তাঁর। কিন্তু ম্যাকাফির ‘গোপন’ জীবনের ঘটনার সঙ্গে মানুষের পরিচয় ঘটে ২০১২ সালে। এ সময় তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করে মানুষ। চুলে রং করা, বাঁধানো দাঁত আর ছদ্মবেশী এক মার্কিন নাগরিক হিসেবে তাঁকে পাওয়া যায়।

এর আগে তাঁর জীবনে ঘটে যায় এক ঝড় তোলা ঘটনা। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজ-এর বাসিন্দা থাকাকালীন ম্যাকাফির এক পড়শি খুন হলেন। পুলিশের চোখে ম্যাকাফি হয়ে ওঠেন সন্দেহভাজন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি পুলিশের চোখ এড়িয়ে, ছদ্মবেশে ঢুকে পড়েন প্রতিবেশী দেশ গুয়াতেমালায়। রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েও পাননি বরং কারাগারে যেতে হয়েছিল তাঁকে।

সেখান থেকে তিনি ফেরেন যুক্তরাষ্ট্রে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে অল্পবয়সী বান্ধবীদের সঙ্গে ম্যাকাফির খালি গায়ে তোলা ছবি আবারও নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিপদজনক’ ব্যক্তি হিসেবে সন্দেহের তালিকায় এখন ম্যাকাফি। বিবিসিকে অবশ্য ম্যাকাফি বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর সত্যতা নেই। ম্যাকাফির সাক্ষাত্কার নেওয়া এক সাংবাদিক সব সময় তাঁকে ‘খামখেয়ালি’ বলে সম্বোধন করেন।

ম্যাকাফি নিজের সম্পর্কে সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে বাজে লোকের তকমার কথা স্বীকারও করেন। তবে এর বাইরেও ম্যাকাফির নিজেকে পরিচয় দেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে।

ম্যাকাফি নিজের সম্পর্কে বলেন, আমি কৌতুহলী এবং সমস্যা সমাধান করতে ভালোবাসি। তবে আমি নিজের নামে তৈরি কোনো পণ্য ব্যবহার করি না। নিজেকে নিরাপদ রাখতে সব সময় নিরাপদ কম্পিউটিং করি।

পর্নো সাইটে যাই না, ভাইরাস থাকতে পারে এমন লিংকে যাই না।

ম্যাকাফি বলেন, আমরা যখন রাস্তা খুঁজে নিয়ে চলতে শুরু করি, খোলস ছেড়ে বের হয় তখনই কেবল আমরা নির্ভয়ে সে পথে যেতে পারি এবং এতে সাফল্য আসে এবং সত্যিকারের সৌন্দর্য্যের খোঁজ পাওয়া যায়।

জন ম্যাকাফি সম্পর্কে তাঁর বেলিজের এক নারী সঙ্গী জানিয়েছে, অসাধারণ একজন মানুষ আর রোমাঞ্চপিয়াসী তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা বলেন, খামখেয়ালি এই মানুষটাকে আসলে বোঝা খুব শক্ত। বয়স্ক একজন মানুষ কমবয়সী অনেকগুলো মেয়ে নিয়ে আনন্দ করছেন আবার কাজের ক্ষেত্রে দারুণ মনোযোগী।

কে আসল জন ম্যাকাফি সেটাই বোঝা কঠিন।

প্রযুক্তির ইতিহাসে বর্ণিল, রহস্যময় একজন মানুষ জন ম্যাকাফি। একদিকে নতুন নতুন উদ্ভাবন আর অন্যদিকে মাদক তৈরিসহ বিশ্বের ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করা হয়।

জন ম্যাকাফির সঙ্গে বর্তমানে ম্যাকাফি অ্যান্টিভাইরাস প্রতিষ্ঠানটির কোনো সম্পর্ক নেই। ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে তিনি ম্যাকাফি বিক্রি করে দেন।

২০০৮ সাল থেকে তিনি বেলিজে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। রোমাঞ্চপ্রত্যাশী জন ম্যাকাফি ছোটবেলা থেকেই নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসতেন। নব্বই দশকের পর তাঁর আচরণে খামখেয়ালিপনা দেখা দেয়। বিক্রি করে দেন ম্যাকাফি। তারপর প্রযুক্তি জগত্ থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে যান বেলিজে। সেখানে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে এ অঞ্চলের বিখ্যাত মাদক চোরাচালানকারী আর সন্ত্রাসীদের সঙ্গে। এ সময় তিনি ভয়ংকর মাদক তৈরির চেষ্টা করছিলেন। কম্পিউটার জগত্ থেকে অনেকদিন ধরেই বিচ্ছিন্ন পড়েছিলেন ম্যাকাফি। ক্রমাগত বাড়ছিল তার খামখেয়ালি আচরণ।

ম্যাকাফির পুরোনো সহকর্মী এবং বন্ধুদের অনেকেই জানিয়েছেন, নারীদের মধ্যে যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে পারে এমন মাদকের প্রতি অনেক দিন ধরেই কৌতূহল ছিল ম্যাকাফির।

ম্যাকাফি বলেন, মাদকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অনেক পুরোনো। পরিবার থেকে লুকিয়ে তিনি মাদক নিতেন। মাদক গ্রহণের জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর চাকরি চলে গিয়েছিল। তবে এ ঘটনাটি ঘটেছিল আশির দশকে।

ওই সময় প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণে মাদক নেওয়া শুরু করেছিলেন। ১৯৮০ থেকে ৮৪ সাল—এ চারটি বছর মাদক তার জীবনের সবচেয়ে সর্বনাশ করেছে বলে উল্লেখ করেন ম্যাকাফি। ম্যাকাফি জানিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে এখনও মানুষ ভুল ধারণা করে। তাঁর গায়ে আশির দশকে আঁঁকা উলকি দেখে এখনও অনেক কিছু ভেবে বসে। তিনি ১৯৮৪ সালে মাদক ছেড়ে দিয়ে চিকিত্সকের কাছেও গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন।

ম্যাকাফি বলেন, সব সময় দুই ধরনের মানুষ আমরা দেখতে পাই। কেউ আমাকে প্রশংসা করে এবং কেউ নিন্দা। কারও চোখে আমি নায়ক আবার কারও চোখে ভিলেন।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.