আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাইকেল স্মরণে

"বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। "শিহরণে সত্তায় তুমি, হে আমার জন্মভূমি"

গল্প উপন্যাস নিদেনপক্ষে একটা প্যাকেজ নাটকের নায়িকা বা পার্শ্ব নায়িকা হলে মীরা এখন ঝুম বৃষ্টিতে পাতলা কাপড় পড়ে নাচতে পারতো কিংবা নেসকাফে কফি মগ হাতে দোলনায় দোল খেয়ে উপভোগ করতে পারতো এই বিপুল জলধারা। তার কোনটাই হবার নয়। মীরা বড়জোড় এই বাণিজ্যিক এলাকার অজগর বিল্ডিং এর পেট থেকে বের হয়ে বারান্দায দাঁড়িয়ে মানুষের ভারে ন্যূব্জ শহরের সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যাওয়া দেখতে পারে; আসন্ন সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময়ে কি কি অসুবিধায় পড়তে পারে সেই কথা ভেবে আগাম দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হতে পারে। মীরা এর কোনটাই করে না।

শুধু আলতো করে অফিসরুমের এসিটা বন্ধ করে দেয়। দশটা মিনিট নিজেকে চোখ বন্ধ করে বসে থাকার স্বাধীনতা দেয়। আহা সেই বরষা- সেটাই তো শেষ বরষা ভার্সিটর ক্যাম্পাসে। ৯৮ সালটা ছিল ঘোর শ্রাবণের বছর। দিনমান আকাশ শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।

ঢাকা শহর যারপরনাই ডুবে যাচ্ছে। বন্যা আসছি আসছি বলে হুংকার দিচ্ছে। এরমাঝে ক্লাস কম। বন্ধুরা হতে হতে একসাথে অনেকে। এক একজন ১৫-২০টাকার ঝালুমড়ি খেয়ে ফেলেছে বৃষ্টির দিকে বিষণ্ন হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে।

ওরা এতজন এত ডিপার্টমেন্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মীরা সেদিন টের পায়। অভি হঠাত চিতকার দেয় এই চল সব বৃষ্টিতে ভিজি। ছেলেরা প্রবল উতসাহে তখনই রওনা হয়ে যায় মহসিন হলের উদ্দেশ্যে একটা ফুটবল সংগ্রহের জন্য। মেয়েরা ইতস্তত করতে থাকে। রিনা বলে -”এত চিন্তার কি আছে? রোকেয়া হলে গিয়ে কাপড় পাল্টে ফেলিস সবাই।

” হায়রে বৃষ্টিস্নন! বল খেলতে গিয়ে রবিনের তো নখ উপড়ে রক্তারক্তি ব্যাপার। ভয়ংকর বৃষ্টিতে টানা দু’ঘণ্টার ভেজা সবার চামড়া কুঁচকে ফেলে আর চলে হি হি করে ঠান্ডায় কাঁপা। তিন কাপ চা খেয়েও কারো শীত লাগা কমে না। যারা হলে থাকে তারা আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে প্রবল উদ্দামতার পর। যাদের বাসায় ফিরতে হবে তারা পড়ে যায় মহা ঝামেলায়।

চোখ খুলে আবার মীরা বারান্দায় যায়। ওর ইচ্ছা করে উড়ুক্বু মাছের মতো সাততলা থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়তে। গয়ংগচ্ছের জীবন, যেন বা ক্যাসেটের ফিতে আটকে একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেখানে বর্ষা নেই, শীত নেই গ্রীষ্ম নেই - কিছু নেই; আছে শুধু আরো জোরে দৌড়াবার হাতছানি। মীরা সেদিন খুব মন খারাপ করে ঘরে ফেরে।

মনে শুধু একটাই সান্ত্বণা থাকে পরেরদিন শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, একটু হলেও বিশ্রাম মিলবে হয়তো। শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারোটায় মীরার ঘুম ভাঙ্গে একরাশ বিস্ময়, আপনজন হারানোর তাতক্ষণিক কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা ও কতকটা অবিশ্বাস নিয়ে। মীরা কোনভাবেই ২০০৯ সালের ২৬ জুন শুক্রবার সকালটাকে মেনে নিতে পারে না। মনে হয় এটা কোনধরনের মজা। কিভাবে সম্ভব মাইকেল জ্যাকসনের চলে যাওয়া? তাও মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে।

চ্যানেলগুলোতে ও হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অবাধ্য চোখের জল ঝরতেই থাকে অনুমতিবিহীন। বাহিরে আকাশভাঙ্গা বৃষ্টি আর বাতাস হতে থাকে। মীরা একদৌড়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়। বহুবছর পর বর্ষার নবধারাজল ওকে কোলে তুলে নেয়, জ্যাকসনের জন্যে ওর অকিঞ্চিতকর অশ্রু বর্ষার ছাঁটের সাথে মিশতে থাকে...হায় মাইকেল! মাইকেল নামের মানুষদের জীবন কি এমনই হয়? মাইকেল মধুসূদন, মাইকেল জ্যাকসন...এমন প্রয়াণ, দেখাশোনার বাঁধন আর রইলো না.. কেউ আর বলবে না ”ইট ডাজনট্ ম্যাটার...ব্ল্যাক অর হোয়াইট”।

কেউ বলবে না ”হিল্ দ্য ওয়ার্ল্ড”। মীরা আকাশে হাত তোলে, মাইকেলের আত্মার শান্তি কামনা করে, মাইকেল নামক এক চির বঞ্চিত শিশুর জন্য মীরা প্রার্থনায় ব্রতী হয়, মীরার সাথে মেঘমল্লারও হয়তো কেঁদে একই কথা বলে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।