আখেরী জমানায় ইমাম মেহেদী নামে একজন আসবেন এটা অনেক আগে থেকেই জানা। অনেক কিছু পড়েছিলামও তার সম্পর্কে। তো মেহেদীর সাথে প্রথম পরিচয়ে সেই অনেক বৈশিষ্ট মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম।
বেশকিছুদিন মিলিয়ে শিওর হলাম, না সে ওইজন না। প্রথম বৈশিষ্টেই সে ডিসকোয়ালিফাইড।
ইমাম মেহেদী নেতা হিসেবে আসবেন। সবাই তার পেছনে থাকবে। কিন্তু এই মেহেদী আমার পেছনে থাকে। তাই মেহেদীকে আমাদের শ্রেনীতেই ধরে নিলাম। মানুষ হিসেবে খুবই ভালো মেহেদী।
সমস্যা একটা তার বাজী ধরার একটা অসামান্য রোগ আছে। সবকিছুতে সে ধুম করে বাজী ধরে বসে। সামান্য বিষয় থেকে ভয়ংকর বিষয় পর্যন্ত বাজী।
দেখা গেলো, কেউ রিকশা ডাক দিয়েছে। সে হুট করে বলল, ডেকে কী লাভ এইটাতো যাবেনা।
বাজী ধরবি?
এবং যারা মেহেদী ইতিহাস জানেনা তারা ধরে ফেলে এবং রহস্যজনকভাবে হেরে যায়। মুহুর্তেই আরেকজরনের রিকশা না যাওয়া থেকে মেহেদীর বাসায় যাওয়ার রিকশা ভাড়া হয়ে যায়। অতি দয়ালু মেহেদী অবশ্য হেরে যাওয়া জনকে লিফট দিতে কার্পন্য করেনা। শত হলেও তার টাকা।
মেহেদী তার এলাকায়ও বাজীর জন্য বিখ্যাত।
তার কথার উপরে হারকিউলিস লেভেলের সাহসী ছাড়া কেউ কথা বলেনা। যে কোনো ম্যাচে, তা ক্রিকেট হোক আর ফুটবল ওইখানে বাজী জটিলতায় মেহেদীর পকেটে শ'পাঁচেক টাকা আসেই। তার এলাকায় তার সমবয়সী খুব কম মানুষ আছে যাদের টাকা মেহেদীর পকেটে আসে নাই।
আমি মেহেদীকে প্রায়ই বলি বিয়ে করে ফেলো। মাসে যে পরিমান টাকা তোমার বাজী ধরে আসে তাতে নিজের সংসার কেন, শশুরবাড়ীও চালাইতে পারবা।
আমি মেহেদীর বাজীর ক্ষমতায় অনেকটা বিশ্বাসী। তার কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মিলে যাওয়ায়, আবহাওয়ার সময় বিশেষ করে আবহাওয়া অফিসের চেয়ে তার শরনাপন্ন হতাম।
মেঘলা আকাশ দেখলে সকালে অফিসে যাওয়ার আগে মেহেদীকে ফোন দিতাম, কিও বৃষ্টি নিয়া কারো লগে বাজী আছে না কি?
সে স্বতস্ফূর্তভাবে জানাতো, আছে ভাই।
তুমি কোন পক্ষে বৃষ্টি হবে? না হবে না?
হবে ভাই।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ছাতার খোঁজ করি।
তুলনামূলক পুরাতন স্যন্ডেল পায়ে দেই, রিকশায় ওঠার আগে তিনবার শিওর হই পর্দা আছে?
তার বাজীর প্রতিভা ইষর্নীয়। তার বাজীর করুণ স্বীকার হয়েছিল আমার এক বন্ধু। সে কই থেকে যেন আমার বন্ধুকে ছবি এনে দিল। শাওন ভাই, আজকে এক জায়গা থেকে আপনার আব্বার ছবি পেলাম।
আমরা ছবি দেখলাম।
বন্ধুর বাবার সাথে ভয়ংকর মিল। আমার বন্ধুর চেহারা কালো হয়ে গেলো। আমরা সেটা দেখে বাধ সাধলাম। আরে না, এই শাওনের আব্বা না।
মেহেদী অনঢ়।
বাজী লাগবেন?
আমরা বন্ধুর দিকে তাকালাম। তার অবস্থা নাকাল। সে চুপ। সে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। পরে অবশ্য আমার বন্ধু সে যাত্রায় পার পেয়ে গেলো এই যুক্তিতে তার বাবা প্যান্টের সাথে বেল্ট পড়ে না।
ওই লোকের বেল্ট আছে।
মেহেদী বাজীতে হেরে গেছে, তাকে ভৎসনা করার বদলে উল্টো কৃতিত্ব দিলাম। তুমি মিয়া, মাল। বাজী ধরার জন্য কই ত্থেইকা এই জটিল জিনিস আনছো?
মেহেদী কিছুটা অহংকারী দৃষ্টি নিয়া তাকালো, খালি বেল্টের লাইগা আজকা শাওন ভাই বাঁইচ্যা গেলো, নাইলে আঙ্কেলেরও নাকানিচুবানি খাইতে হইতো নিজের এই বাংলা ক্লোন দেইখ্যা।
পুনশ্চ: আমার জীবন যাপনের সাথে অতোপ্রতোভাবে মিশে আছে কিছু ভাই ব্রাদারদের নাম।
যাদের সাথে আমার একটা দীর্ঘ জার্নি আছে। মেহেদী সেই ভাই ব্রাদারদের একজন। আজ তার কথা বেশ কয়েকবার মনে পড়ছিল। গত বছর এই রোযার মাসে সে কাতার প্রবাসী হয়েছে। তাই এই স্মৃতিচারণ।
মেহেদী মাসে দুয়েকবার ফোন দেয়। খোঁজখবর জানতে চাইলে বলে, সব দিক দিয়ে ভালো আছি। তবে একটা ছোট্ট সমস্যা এইখানে কেউ বাজী ধরতে চায় না। সব শালা কিপ্টা। তারা যদি একটু বাজী ধরতো মনে করেন ভাই এইখানে গাধার খাটনি না কইরাই দেশে ভালো অঙ্কের টাকা পাঠাইতে পারতাম।
আমি চুপ করে থাকি আর মনে মনে বলি, ভাইরে এইটা আমি জানি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।