আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ : যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ফযীলত মুবারক ও ছোহবত মুবারক এবং মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ

অহন থিক্কা সব শয়তানরে দৌরের উপর রাখুম।

সব প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “সত্য এসেছে, মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা দূরীভূত হওয়ার যোগ্য।

” এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যুগে যুগে যেসব মহান ওলীআল্লাহ উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারক উনার বাস্তবরূপে প্রতিফলিত হয়েছে, উনাদের মাঝে আবুল বরকত হযরত শায়েখ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা মুবারক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একদিকে প্রবল প্রতাপশালী আকবরী রাজশক্তির “দ্বীনে ইলাহী” কুফরী ফিতনা, অপরদিকে নামধারী তথাকথিত মশহুর উলামা তথা উলামায়ে ‘সূ’ গোষ্ঠীর কু-তৎপরতা, সবকিছুই তিনি নির্মূল করেছিলেন। বাতিল ও বিদয়াতকে মিটিয়ে দিয়েছিলেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জাগরণ ঘটিয়েছিলেন, সুন্নতের পুনঃপ্রচলন করেছিলেন। তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে লক্বব মুবারক দিয়েছিলেন, ‘মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

’ (পবিত্র মাকতুবাত শরীফ) সুবহানাল্লাহ!
হযরত শায়েখ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ১০৩৪ হিজরীর ২৮ ছফর শরীফ ৬৩ বছর বয়স মুবারকে বিছাল শরীফ লাভ করেন। সে হিসেবে আগামী ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি বা বুধবার উনার সম্মানিত বিছাল শরীফ উনার দিন।
মূলত হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র আলোচনা আমাদেরকে একজন সুমহান মুজাদ্দিদ উনার আগমনকাল, উনার কাজের প্রেক্ষাপট ও নীতি বা কৌশল সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দান করে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক তিনি যুগে যুগে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে প্রেরণ করে দুনিয়াকে ফিতনা মুক্ত করেন। কিন্তু মানুষ কালক্রমে বারবার দুনিয়াতে ফিতনা-ফাসাদের অবতারণা করে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “পৃথিবীকে কুসংস্কার মুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফিতনা তৈরী কর না। ”
উল্লেখ্য, ফিতনা তৈরি করা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে খুবই অপছন্দের বিষয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “ফিতনা-ফাসাদ করা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে হত্যার চেয়েও বেশি অপরাধ। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ)
“পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না।

” (পবিত্র সূরা কাসাস শরীফ)
হালে এক নতুন ফিতনা ভয়ঙ্কররূপে দেখা দিয়েছে। এটি চলমান রাজনীতির নামে সহিংসতা। এর সাথে সরকারি দল ও বিরোধী দল উভয়েই যুগপৎভাবে জড়িত।
এছাড়া চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে দেশব্যাপী সন্ত্রাসী জামাত-শিবির কর্তৃক নির্মম নাশকতা ও সহিংসতা দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং জনজীবনকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ থাকায় উৎপাদন কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে।

এ ছাড়াও আমদানি, রফতানি ও সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। একদিনের হরতাল-অবরোধে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পখাতে ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। চলতি বোরো মৌসুমের জন্য আমদানিকৃত প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন সার বন্দরে আটকা পড়ে আছে। ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা।

গত এক মাসে পরিবহন খাতের ৩৫ লাখ শ্রমিকের আয় বন্ধ থাকায় জীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। গত ৫০ দিনের হরতাল-অবরোধে প্রাণ গেছে ৩১ পরিবহন শ্রমিকের। পোশাক খাতের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে ৩৫ লাখ ডলারের বেশি। আকাশপথে পণ্য পরিবহনের কারণে সমুদ্রপথের তুলনায় খরচ বেড়েছে ২৩ গুণ। হিমায়িত মৎস্য খাতে রফতানি আয় কমেছে এক-তৃতীয়াংশ।

চামড়া শিল্পে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
চা শিল্পের ৭০-৮০ হাজার কেজি চা অবিক্রিত হয়ে পড়ে রয়েছে। আবাসন খাতে ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়েও ১৮ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট অবিক্রিত হয়ে রয়েছে। ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটে দিনাতিপাত করছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৭শ কোটি টাকা।

পোশাক খাতের ৪০ লাখ শ্রমিক বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড ও পরিবহন সমিতিগুলোর হিসাব অনুযায়ী গত ১০ মাসে প্রায় ৫ হাজার বাস ভাঙচুর ও প্রায় ৫০০ বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৩০০টি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, মিনিট্রাক ও পিকআপ পোড়ানো হয়েছে। পরিবহন খাতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। উপড়ে ফেলা হয়েছে শত শত মিটার রেল লাইন।

চলতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক ও সীমান্ত সহিংসতা, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা ও গণপিটুনিতে চলতি বছরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪৬৬ জন। এরমধ্যে শুধু রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছে ৪৯২ জন। চলতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর ৮১৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তাতে আহত হয়েছেন ২২ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ৯৪ জন আগুনে পুড়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছে ২১ জন।


পরিস্থিতির ভয়াবহতায় যেন আকাশ-বাতাসসহ দুঃসহ হয়ে পড়ছে চারপাশের পরিবেশ। থেকে থেকে যেন ধ্বনিত হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সে পবিত্র আয়াত শরীফ। “যারা বলে হে আমাদের প্রতিপালক! এ জনপদ যার অধিবাসী জালিম, তা হতে আমাদেরকে অন্যত্র নিয়ে যান; আপনার নিকট থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক করুন এবং আপনার নিকট থেকে কাউকে আমাদের সাহায্যার্থে প্রেরণ করুন। ” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৫)
হতাশাগ্রস্ত মুসলমানের এ দোয়া যে মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন তা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেই প্রমাণ রয়েছে। আবূ দাঊদ শরীফ উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই এই উম্মতের মাঝে প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন।

যিনি দ্বীনের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী সব বেশরা বিদয়াতকে নির্মূল করবেন। অর্থাৎ শাশ্বত ইসলাম উনাকে তুলে ধরবেন।
এতদ্বপ্রেক্ষিতে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে হয় যে, ১৪৩৫ হিজরী সাল হিসেবে এ সময় হচ্ছে বর্তমান হিজরী শতকের প্রারম্ভ তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত মুজাদ্দিদ উনার তাজদীদের সময়কাল।
কাজেই শুধু সামষ্টিকভাবে নয় ব্যক্তিগতভাবেও প্রত্যেক মুসলমানের উচিত- বর্তমান যামানায় স¦ স¦ দায়িত্ব হিসেবে যামানার মুজাদ্দিদ উনার ছোহবত তলব করা। যার স¦পক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার মধ্যে আরো অনেক দলীল মওজুদ রয়েছে।

যা মূলত ফরয-ওয়াজিব উনাদের মধ্যে পড়ে। যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে “যে ব্যক্তি যামানার ইমাম (মুজাদ্দিদুয যামান) উনাকে চিনল না, সে যেন জাহিলিয়াতের মধ্যে ইন্তিকাল করল। ” (কানযুল উম্মাল)
প্রসঙ্গত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে সামগ্রিক নির্দেশনায় আমরা নির্দ্বিধায় ও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি যে, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের নির্দেশিত মহান মুজাদ্দিদ তথা মুজাদ্দিদে আ’যম। উনার নির্দেশিত পথে চললেই বর্তমান সঙ্কট সহজেই উত্তরণ সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে এই মহান মুজাদ্দিদ উনার নেক ছোহবত ও সন্তুষ্টি মুবারক নছীব করুন।

(আমীন)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।