পবিএ মাহে রমজান সিয়াম সাধনার মাস। রমজান মাস সবরের মাস আর সবরের প্রতিফল হচ্ছে জান্নাত। এটা হলো সহানুভূতি,সহমর্মিতার মাস। আর এটা এমন একটা মাস যাতে মুমিনের রিজিক বর্ধিত করা হয়।
যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা তার পাপমুক্তি ও দোজখ থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং এতে সে ওই রোজাদারের সমান পুণ্যের ভাগী হবে অথচ রোজাদারের পুণ্য তাতে একটু ও কমবে না।
তখন সাহাবিরা আরজ করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের সবার তো রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই? তখন রাসূলুল্লাহ সঃ বললেনঃ যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে একটি মাত্র খেজুরদানা বা এক ঢোক পানি অথবা একটু দুধ মিশ্রিত পানি দ্বারা ইফতার করাবে, সে-ও এ সওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পানি পান করাবে তাকে আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন আল্লাহর হাউজ এ কাউচার থেকে এমন পানি পান করাবেন যে, জান্নাতে প্রবেশের আগ পযর্ন্ত তার পানির পিপাসা লাগবে না। এটা এমন একটা মাস, যার প্রথমাংশ রহমত, মধ্যমাংশ বরকত, শেষের দিন গুলো মাগফেরাতের । যে ব্যক্তি এ মাসে তার ক্রীতদাসের কার্যভার লাঘব করে দেবে, আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করবেন এবং দোজখ থেকে মুক্তিদান করবেন।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের পূব অংশে রওদা নামক ন্থানে ব্যাক্তিগত ভাবে আল্লাহর ওয়াস্তে খেমা বানিয়ে মানুষকে ইফতারী করাচ্ছে এক সৌদি নাগরিক।
নাম তার সাদ ইব্রাহীম আল আগিল। এই খেমাতে গিয়ে দেখলাম সাদ নিজের হাতেই বন্টন করছে ইফতারী। ২০০ লোকের ইফতারীর ব্যবস্থা করেছেন। এখানে ইফতারী করতে আসেন বাংলাদেশী,ইন্ডিয়ান,পাকিস্তানী,সিরিয়ান,ইয়েমান ও অন্যান্য দেশের নাগরিকেরা। প্রতোক ব্যাক্তির জন্য একটা জুস,একটা আপেল,একটা কলা,একটা মালটা,এক বোতল পানি,৪টা খেজুর,একটা ছোট লেবেন,২টা ছমবুছা ও এক পেকেট খেফছা (ছিকেন বিরানী) প্রত্যোক ব্যাক্তিকে দেওয়া হয়।
জন প্রতি ১০ রিয়াল করে বাজেট (বাংলা ১৮০ টাকা)। সাদ ইব্রহীম আগিল যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমাদের দেশের ধনী ব্যাক্তিরা কি পারে না এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে?
প্রবাসে এসে দেশের স্বংস্কৃতির অনেক কিছু ভূলে যেতে বসেছি। মাইকেল মদুসুদন দত্তের মতো। আমরা বাংলাদেশী বুট ও মুরি ছাড়া আমাদের ইফতারি স্বয়ং সম্পূর্ন হয় না। রমজান আসলে আমার দেশের বুট,মুরির কথা মনে পড়ে।
আজ ১৬টি বৎসর সেই বুট মুরি ছাড়া ইফতারি করে আসছি। জানি না আর কত দিন? সারা দিন কাজ করে বাসায় এসে ইফতারী তৈরী করার মন মানষিকতা থাকে না। বাধ্য হয়ে খেমাতে এসে ইফতারী করতে হয়। যারা বেকার তারা হয়তো বাসায় বুট মুরি তৈরী করে বা হোটেল থেকে সংগ্রহ করে। এখানে বাংলাদেশী হোটেল গুলোতে বাহরী রকমের ইফতারী তৈরী করে।
রিয়াদের বাথা এবং হাইয়াল উজারাতে বাংলাদেশী ইফতারী পাওয়া যাই । এই ২টি স্থানের বাহিরে যারা আছে তারা এরাবিয়ান খাদ্য দিয়েই ইফতারী করতে হয়।
দুঃখের বিষয় ইফতারীর পর যে দৃষ্যটা দেখলাম তাহা না লিখলে নয়। ইফতারী করে যাওয়ার কথা মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে কিন্ত না, কয়েক জন লোক হাতের মাঝে আপেল ,কলা ও লেবেন নিয়ে সোজা বাসায় চলে যাচ্ছে। মসজিদের ইমান সাহেব , খালেদ আমাকে এই দৃষ্যটা দেখালেন।
কিছুই বলার থাকল না। সারাদিন এই উপোষ থাকার কোন অথ হয়? না হয় না। "যে মিথ্য কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই"। (বোখারী) এই হাদিসটি দ্ধারা স্পষ্ট বুঝে আসে যদি মূর্খতা পরিহার না করা হয় তবে সিয়াম আল্লাহর কাছে গুরূত্বহীন হয়ে পড়ে। আর মর্খতা ত্যাগ করা যাবে শধু শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
এ মাসের গুরীত্ব আমরা অনুভব করব আর তাহা কাজে লাগাব না এটাতো হয়না। এ মাসের প্রতিটি মূহূতকে কাজে লাগানো যাই সে প্রচেষ্টা চালানো। এ মাসে আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। এমাসে জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হয়। এ মাসে জাহান্নামের দরজা গুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।
শয়তানকে শৃন্খলে আবদ্ধ করা হয়। এমাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর যা হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ট। তাই আমরা এই মাসকে সঠিক ভাবে পালন করব। প্রবাসে আমাদের অনেক কাজ। এই কাজের মাঝেই আমাদেরকে সময় বের করে নিতে হবে।
বেশী বেশী করে কোরআন তেলোয়াত করব। এই মাসে ওমরা পালন করব। হাদীস শরীফে এসেছে,নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:" রমজান মাসে ওমরাহ আদায় আমার সাথে হজ্জ আদায়ের সমতুল্য। এই মাসে আমরা বেশী করে দোয়া প্রার্থনা করব। আল্লাহ রাব্বুল সিয়ামের বিধান র্ননা করার পর বলেছেণ:আমার বান্দাগন যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে , আমিতো নিকটেই ।
প্রাথনা কারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তার প্রাথর্নায় সাড়া দেই। (সূরা আল-বাকারা) তাই সিয়াম পালনকারী আল্লাহর নিকট অধিক পরিমানে দোয়া প্রাথর্না করবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তিন জনের দোয়া কবুল করা হয়,সিয়াম পালনকারীর দোয়া,অত্যাচারিত ব্যাক্তির দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া। (আল-জামে)
এ মাসে আমরা বেশী বেশী করে তওবা করব। সবর্দা তওবা করা ওয়াজিব।
বিশেষ করে এই মাসেতো বটেই। এ মাসে তওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃন্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়। এ ছাড়া রমজান মাসের সকল ইবাদত বন্দেগি তওবার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এ কারনেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক । (তিরমিজি) তাই রমজান মাসটাকে তওবা ও ক্ষমা পাওয়ার মাস হিসেবে গ্রহন করে সে অনুযায়ী আমল করা উচিত। প্রবাসে আমাদের ইবাদত করার প্রচুর সময় রয়েছে। যাহা দেশে আমরা করতে পারি না। তাই আমার প্রবাসী ভাইদেরকে বলব।
আপনারা কাজের বাহিরে যে সময়টা পান তাহাকে সদ্ব ব্যাবহার করবেন। ইফতার করে নামাজ না পড়ে টি,ভির সামনে বসে যাবেন না। আসুন আমরা সবাই এই রমজান মাসের পবিএতা রক্ষা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করূন । (আমিন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।