নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
গন্তব্য মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং। উপলক্ষ্য নতুন পুরোনো কিছু কলিগ মিলে ভ্রমন। স্বদেশের শেষ প্রান্ত সিলেটের তামাবিল। কমবেশী প্রতিদিনই লোক চলাচল, আমদানি রপ্তানি হলেও অফিস বলতে সেরকম কিছু এখানে নেই। ২/৩ টা চা দোকান, বিডিআরের টহলচৌকি, ১টি চালাঘর ও পুরনো আরেকটু বড় একটি পাকাঘর।
দলে অভিজ্ঞ কেউ একজন দেখিয়ে দিল- রাস্তার ডানপাশে চালাঘর ইমিগ্রেশন পুলিশের, বামে তুলনামুলক বড়টি কাস্টমস্। কাস্টমসের বারান্দায় ও ভেতরে ছড়ানো ছিটানো কিছু প্লাস্টিক চেয়ার আছে। ক্লান্ত যাত্রীদের বিশ্রামের এটাই একমাত্র ভরসা। যে টয়লেটখানা আছে তার চেয়ে প্রসাব পায়খানা প্রিপেইড করে আসা বা চেপে রাখাই শ্রেয়:! (কারন ভারতের অংশে ঐটা আরামে সারতে পারবেন)। নোংরা, ময়লা, অগোছালো, পরিত্যক্ত পর্যায়ের পরিস্থিতি।
ততোধিক কাহিল অবস্থা কর্মরত ভদ্রলোকদের। গা ছাড়া ভাব, পারলে লুঙ্গি পড়ে পান চিবোতে চিবোতে অফিস করেন। মুখে রাজ্যের বিরক্তি। ভাবখানা এমন বর্ডার পার হতে দিয়ে বিরাট দয়া করছেন আগত যাত্রীকুলদের!
যাহোক, প্রথমে সারতে হবে ইমিগ্রেশন। রাস্তার ডান পাশ।
চালাঘরে আর কিছু থাক বা না থাক বিরাট কাস্টফলকে কোন এস আই মহোদয় (!) এখানে কর্মরত আছেন তার নাম ঠিকই অংকিত আছে। এ না হলে সরকারী অফিস। কদিন পরে কোন কোন পিয়ন, সুইপার কাজ করলেন তার ইতিহাসও সরকারী অফিসে লিখা শুরু হবে। কাঠের ফলকে লিখকদের পোয়াবারো। এ ঘরটি অনেক আন্ত:জেলা ননএসি বাসের কাউন্টারের চেয়েও নিকৃস্ট মানের।
এস আই বা তদনিম্ন ২/৩ জন পুলিশ কাজ কর। গলা সেঁধিয়ে পাসপোর্ট মেলে ধরতেই একটা কার্ড (এমবার্কেশন কার্ড) ধরিয়ে দিল। লিখব কিভাবে। চেয়ার বাদ দিলাম ১টা টেবিল তো থাকবে। সো, দৌড়াও রাস্তার ওপারে কাস্টমসের ঘরে।
নাহয়, চা দোকানে। জমা দিলাম। আবার অপেক্ষা। ও চক্ষু চড়কগাছ! গরুর গাড়ির পিঠে মোটরসাইকেল। অর্থাৎ ইমিগ্রেশন পুলিশের শোয়ার ঘরে (একই ঘরে পর্দা টানিয়ে অফিস কাম রেসিডেন্স) একটা ল্যাপটপ।
অন্ধের রাস্তা পার হবার মত টাইপ করে কেউ একজন বালাম বইয়ের তথ্য কম্পিউটারে উঠায়। তারপর এমবার্কেশন কার্ডের নীচের দেড় ইঞ্চি ছিঁড়ে ধরিয়ে দিল। ভ্রমন শেষে এ টুকরা কাগজটা আবার জমাদিতে হবে এখানে ফেরৎ আসার সময়!
ইমিগ্রেশনের হ্যাপা শেষ। দৌড় রাস্তার ওপাশে। কাস্টমসের ফরম ফিলাপ।
আলগা পেইন হিসেবে সোয়াইন ফ্লু ফরম ফিলাপ!! চেহারা সুরত দেখে ব্যাগ চেক করার প্রয়োজন বোধ করলনা। শোকরান।
অকুস্থলেই বিডিআরের টহলফাঁড়ি। বিডিআরের সাথে তেমনকোন লেনদেন নাই। তাই ওটা উহ্য থাকল!
হিন্দিভাষী বিএসএফের কাটখোট্টা পাসপোর্ট দেখতে চাওয়ার মধ্যদিয়ে ভারতের বা ভারতবর্ষের অভিজ্ঞতা শুরু।
কয়েককদম হাঁটঁলেই পরিপাটি দোতলা বিল্ডিং। যাত্রীদের ওয়েটিং রুম (ফরম ফিলাপের সুবিধার্থে চেয়ার টেবিল সহ), পুরুষ-মহিলা ফ্রেশ রুম, ইমিগ্রেশন রুম, কাস্টমস চেকিং কাউন্টার (উইথ স্কেনিং মেশিন), সুপারিনটেনডেন্টের রুম, নীচে জেনারেটর ও অন্যান্য। এমবার্কেশন কার্ড ফিলাপ, পাসপোর্ট সহ জমাদান, মিনিট পাচেক পর পাসপোর্ট ফেরৎ, কাস্টমসকে পাসপোর্ট দেখানো ও ব্যাগ স্কেনিং এবং শেষ। পরিপাটি পোশাকে, মিতভাষী, প্রফেশনাল ভারত। খামাকা খালাতো ভাই মার্কা কথা বা বিরক্তিভরা কঠিন চেহারা কোনটাই না।
তথাকথিত ডিজিটাল অত্যাচার নাই। ল্যাপটপের উৎপাত মুক্ত। মোটা খাতায় তথ্য সংরক্ষন। সাধুবাদ।
এককথায় এপারে শ্লথ, অকর্মন্য, ধান্ধাবাজ, মলিন, উদ্ভট বাংলাদেশ ও ওপারে গতিশীল, পরিচ্ছন্ন, যাত্রীবান্ধব ভারত।
অন্তত: Immigration & Customs at তামাবিল/ডাউকি প্রক্ষাপটে।
আল্লাহ্ আমাদের উন্নতি করুক!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।