গভীর কিছু শেখার আছে ....
ইয়ং জেনারেশনের অনেকেরই আগ্রহের জায়গা হিসেবে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে র্যাম্প মডেলিংকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই না বুঝে, কেউবা অল্প বুঝেই র্যাম্প মডেল হিসেবে বিভিন্ন ফ্যাশন শোতে অংশ নিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন। ফলে অধিকাংশের ক্ষেত্রেই যা দেখা যায় তা হলো তারা বিভিন্ন ফ্যাশন শোতে অংশগ্রহণকারী র্যাম্প মডেলদেরই মূলত অনুসরণ করে থাকেন। প্রসিদ্ধ অথবা যারা র্যাম্প মডেলিংয়ে বেশ নামডাক ইতিমধ্যে আয়ত্ত করে ফেলেছেন, তারাই নবাগত এসব র্যাম্প মডেলের আইডল হিসেবে অনুসরণীয় হয়ে থাকেন। কিন্তু এটি অবশ্যই বিবেচ্য, প্রত্যেক পারসনেরই ভিন্নতা রয়েছে এবং সেটি তার চলাফেরা কিংবা ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও ফুটে ওঠে।
আর এ জন্য র্যাম্প মডেলদের নিজেদের উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সাবধানী হয়ে ওঠাটা আবশ্যক।
একটা প্রচলিত ধারণা রয়েছে, র্যাম্প মডেলরা ফ্যাশন শোতে মূলত পুতুলস্বরূপ! তাদের ডিজাইনার যে ড্রেসটি পরিয়ে দেন, তারা সেটিই মূলত প্রদর্শন করে থাকেন। তাহলে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক, সবাই যদি ফ্যাশন শোতে পুতুল হয়ে থাকেন তবে এই পুতুলদের মধ্যে কেনইবা গুটিকয়েক পুতুল র্যাম্প মডেলিংয়ে নামডাক আয়ত্ত করেন। সোজা কথায়, কেনইবা তারা প্রথম সারির র্যাম্প মডেল হয়ে ওঠেন আর বাকিরা যে তিমিরে সেখানেই পড়ে থাকেন? তাহলে কী সেই মূলমন্ত্র, যার গুণে হওয়া যায় প্রথম সারির র্যাম্প মডেল!
এ ক্ষেত্রে তফাৎটা গড়ে ওঠে মূলত প্রত্যেকের স্বকীয়তায়। নারী বা পুরুষ যে-ই হোন না কেন, র্যাম্প মডেলিংয়ে উচ্চতা একটি বড় ফ্যাক্টর।
উচ্চতা কম থাকলে র্যা¤প মডেলিংয়ের খাতায় নাম না লেখানোই ভালো। তবে একটি বিষয় স্মরণীয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের র্যাম্প মডেলদের উচ্চতাকে আইডল হিসেবে না ধরে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে তা বিবেচনা করতে হবে। সে হিসেবে মেয়েদের ক্ষেত্রে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি আর ছেলেদের ক্ষেত্রে পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির অধিক উচ্চতাকে আইডল হিসেবে ধরা যেতে পারে। ফ্যাশন শোতে র্যাম্প মডেলিংয়ের সময় কারো চেহারা ফর্সা কি না তা বিবেচ্য নয়, বরং বিবেচ্য হলো চেহারার সঙ্গে তার হেয়ারস্টাইল ও ড্রেসটি মানানসই কি না। আমাদের দেশের ফ্যাশন শোর সঙ্গে অন্যান্য দেশের ফ্যাশন শো তুলনা করলে দেখা যাবে, এখানে র্যাম্প মডেলকে কোন ড্রেসে ভালো লাগছে, তা মুখ্য বিবেচনার বিষয় নয়।
মূল হিসেবে ড্রেসকেই যেন দেখা হয়। অথচ একজন র্যাম্পের সঙ্গে কোনো ফ্যাশন ডিজাইনারের ড্রেসটি যদি ম্যাচিং করে তবে কনজিউমারদের কাছে সেই ড্রেসটির চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
অথচ যে ড্রেসটি পরে মডেল তা প্রদর্শন করবেন, তাকে এই ড্রেসে আদৌ মানাবে কি না তা না দেখেই ফ্যাশন শোর জন্য হুটহাট করে মডেল জোগাড় করে ফ্যাশন শোর আগমুহূর্তে ড্রেসটি পরিয়ে নামিয়ে দেয়া হয় মডেলকে। অথচ এতে করে কনজিউমার সেই ড্রেসটির প্রতি আসলেই কতোটুকু ইন্টারেস্ট হলেন, তা কিন্তু ভেবে দেখা হয় খুবই কম। সুতরাং একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের ড্রেসকে জনপ্রিয় বা কনজিউমারপ্রিয় করে তোলার পেছনেও একজন র্যাম্প মডেলের ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়।
এবার আসা যাক, র্যাম্প মডেলিংয়ের সময় একজন মডেলের কী স্বকীয়তা থাকে, যা তাকে রাতারাতি তারকা খ্যাতি এনে দেয়। ডিজাইনার একটি ড্রেস র্যাম্প মডেলকে পরিয়ে দেবেন আর সেই ড্রেসটি পরে স্টেজে এসে দেখাতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে এতে তেমন কোনো ক্রিয়েটিভ কিছু করার নেই একজন র্যাম্প মডেলের। উপরন্তু একজন র্যাম্প মডেল এভারেজ একটি ড্রেস পরে স্টেজে অবস্থান করেন খুব বেশি হলে ১ থেকে ৩ মিনিট। অথচ এ সময়ের মধ্যে তার স্বকীয়তাই তাকে করে ফেলে অন্য র্যাম্প মডেলদের থেকে ভিন্ন।
র্যাম্প মডেলিংয়ের হাতেখড়ির সময় তাদের বলা হয়, তারা যেন পোশাকটিকেই মূলত হাইলাইট করেন। সাধারণ আবেগের ফলে কৃত্রিম গাম্ভীর্যের মুখোশকে ধারণ করেই র্যাম্প মডেলরা স্টেজে যান। অথচ সাধারণ একটি বিষয় লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, একটি অনুষ্ঠানে যদি ১০ জন ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষ অবস্থান করেন, তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ও হাস্যোজ্জ্বল মানুষটিই কিন্তু সবার দৃষ্টি কাড়বেন। ফলে সাধারণ একটি অনুষ্ঠানে যদি স্বতঃস্ফূর্ত ও হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি সবার নজর কাড়তে পারেন, তবে কোনো ফ্যাশন শোতে অংশগ্রহণকারী ডজনখানেক র্যাম্প মডেলের মধ্যে সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ও হাস্যোজ্জ্বল র্যাম্প মডেলই যে সবার নজর কাড়বেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হলো এ স্বতঃস্ফূর্ততা ও হাস্যোজ্জ্বলতা কিন্তু মোটেই কৃত্রিম হওয়া চলবে না; বরং চেষ্টা করতে হবে যেন তা সত্যিকারের স্বতঃস্ফূর্ততাকেই প্রকাশ করে।
তবে এই হাসির ফলে মডেলের বাহুল্যতা যেন প্রকাশ না পায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
আবার ছেলে র্যাম্প মডেলরা হাস্যোজ্জ্বলতার বদলে কৃত্রিম গাম্ভীর্যের মাধ্যমে এক ধরনের ম্যানলি ভাব ধরে রাখতে পারেন। তবে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই চোখের দৃষ্টি হতে হবে সরাসরি। র্যাম্পে হাঁটার সময় খুবই স্বাভাবিক অথচ শরীর টানটান রাখতে হবে। চোখের দৃষ্টি কোনো দিকে প্রথম থেকেই নিবদ্ধ না করে স্টেজে প্রবেশের পর পজিশন নেয়ার সময় দর্শক আসনের যে কারো দিকে গভীরভাবে তাকালে র্যাম্প মডেলের আত্মবিশ্বাস প্রচ- বেশি বলে মনে হবে।
অনেক মেয়ে র্যাম্প মডেলই পজিশন নেয়ার পর কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়ান। এতে করে মডেলকে কুঁজোর মতো মনে হতে পারে। অথচ র্যাম্পে কোনোমতেই কুঁজো হওয়া চলবে না। এতে করে দর্শকদের মনে সেই মডেলের প্রতি বিরূপ ধারণা হবে।
ক্যাটওয়াকের সুবিধার জন্য অধিকাংশ র্যাম্প মডেলই তাদের হাতকে ফ্রি রাখেন।
কেউবা হাতে ব্যাগ, মোবাইল কিংবা অন্য কিছু নিয়েও ফ্যাশন শোতে ক্যাটওয়াক করতে পারেন। তবে পজিশন নিয়ে দাঁড়ানোর সময় (মেয়েদের ক্ষেত্রে) বুকের ওপর আড়াআড়ি হাত রেখে অথবা (ছেলেদের ক্ষেত্রে) প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাখতে পারেন।
চেহারার সঙ্গে চুলের মানানসই কাট, নিজের সঙ্গে মানানসই ড্রেস, একটু ইমপ্রেশন আর কনফিডেন্স- ব্যস, গড়ে তুলুন র্যাম্প মডেলিংয়ে নিজের সেরা অবস্থান।
দৈনিক যায়যায়দিনে প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।