এই ব্লগে জামাত-শিবির শুয়োরের বাচ্চারা ভুলেও নাক ডুবানোর চেষ্টা করবি না
দেশের আড়াইশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দু'শ'টির ওষুধই মানসম্মত নয়- এ কথা খোদ ওষুধ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের।
ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব- এ অভিযোগ বহুদিনের। নিম্নমানের ওষুধ সেবনে সাম্প্রতি কিডনি অকেজো হয়ে বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। অথচ ঢাকার একমাত্র ওষুধ আদালতে মামলার সংখ্যা নগন্য।
মামলা কম থাকার জন্য ওষুধ আদালতের আইনজীবীরা ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরকেই দায়ী করেছেন।
তবে পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে কারণ দেখিয়েছেন লোকবলের অভাব।
বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সরকারি আইনজীবী ও আদালত সংশ্লি¬ষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ আদালতে কমপক্ষে কয়েক হাজার মামলা থাকা উচিত। কিন্তু সরকারের নজরদারি না থাকায় এ আদালতে মামলা নেই বললেই চলে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক বা সুপাররাই আদালতে মামলা করতে পারেন। বিশেষ ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা করতে পারে।
তবে তদন্তের জন্য ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তাই আইন সংস্কারের প্রস্তাবও তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকার ওষুধ (ড্রাগ) আদালতের মামলার তালিকা খাতা (কজলিস্ট), রেজিস্ট্রার দেখে জানা যায়, বিচারাধীন ৪০টিরও কম মামলার মধ্যে অর্ধেকই হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে। বাকি মামলার অধিকাংশের অভিযুক্তকেই বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না।
পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালে আদালতে সাতটি মামলা দায়ের করা হয়।
এছাড়া ভেজাল ও নিুমানের ওষুধ উৎপাদন করে বাজারজাত করায় ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিনটি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল এবং অর্ধশতাধিক কোম্পানির লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে।
তবে এর বাইরে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিু মানের ওষুধ তৈরি করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৪১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে।
ওষুধ আদালতের পেশকার রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ আদালতে ২০০৭ সালে ২২টি মামলার রায় হয়েছে। আর ২০০৮ সালে হয়েছে ১টি মামলার রায়।
এ আদালতের সাবেক ও বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটররা জানান, তারা কয়েক হাজার মামলা দায়েরের জন্য মতামত ও সুপারিশ ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরে পাঠালেও তাতে কোনও ফল হয়নি।
মামলার সংখ্যা নগন্য হওয়ায় পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়ী করে ওষুধ আদালতের রাষ্ট্রনিযুক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, "পরিদপ্তরের অধিকাংশ পরিদর্শক একদিকে সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করছেন, অন্যদিকে কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মাসোহারা নিচ্ছেন। "
জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ওষুধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার পক্ষে মত প্রকাশ করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর বলেন, "সুপারদের শিথিলতা, পক্ষপাতিত্ব, অসর্তকতা ও সর্বোপরি সরকারি প্রচারণার অভাবে গ্রাম ও মফস্বলের সাধারণ মানুষ বুঝে উঠতে পারছেন না ওষুধের ব্যাপারে তারা প্রতারিত হলে কোথায় কিভাবে অভিযোগ করবেন। থানা পুলিশ কোনও কোনও ক্ষেত্রে মামলা করতে পারলেও অভিযোগের তদন্ত এবং অভিযোগপত্র দাখিল করতে ওষুধ প্রশাসনের অনুমতির দরকার হয়। "
ওষুধ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা করবেন এমন একজন আইনজীবী মো. আব্দুল হানিফ বলেন, "ড্রাগ মামলায় খুব কম অভিযুক্তই অব্যাহতি বা খালাস পান।
কিন্তু আদালতে মামলাই কম। "
ওষুধ আদালতে কয়েকটি মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী দুলাল মিত্র বলেন, "ক্ষতিগ্রস্তকে সরাসরি মামলা করার সুযোগ দিয়ে আইন সংশোধন করা উচিত। তা না হলে ভেজাল ওষুধের অস্তিত্ব বাজারে থাকবেই। "
আদালত সংশ্লিষ্টদের এ সব অভিযোগের মুখে লোকবলের অভাবকে দায়ী করেছেন ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
তারা জানান, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৭টিতে ড্রাগ সুপার রয়েছে।
তাই ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাই পথে আসা আমাদনি নিষিদ্ধ ভেজাল ও নিুমানের ওষুধের অবাধ বেচাকেনা হলেও প্রশাসনকে বাধ্য হয়েই উদাসীন থাকতে হচ্ছে।
ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইসমাইল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "লোকবলের অভাবে আমরা এগোতে পারছি না। "
এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, "ড্রাগ আইন সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। ওষুধ উৎপাদনে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা যেতে পারে। আমরা এই বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি।
জাতীয় সংসদে আইন সংশোধনের বিষয়টি উত্থাপিত হতে পারে। "
ড্রাগ সুপার এবং পরিদর্শকদের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি পরিচালক।
১৯৮২ সালের ড্রাগ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশের আওতায় ১৯৯২ সালে ওষুধ আদালত চালু হয়। ওষুধের নিুমান, ভেজাল ও নিবন্ধনবিহীন ওষুধ, সরকারি হাসপাতালের ওষুধ খুচরা ও খোলাবাজারে বিক্রি এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওষুধের মূল্য বাড়ানোকে অপরাধ বিবেচনা করে এ আইনের কার্যকারিতা শুরু হয়।
আইনের ১৪ ধারায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ওষুধ সম্পর্কিত কোনও বিজ্ঞাপন প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
১৫ ধারায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত নয় এমন ওষুধ উৎপাদন, আমদানি বা বিক্রি করা যাবে না। ১৬ ধারায় ওষুধ তৈরি ও মান নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ করা 'গুড প্র্যাকটিস' অনুসরণের কথা বলা হয়েছে।
নিুমানের ওষুধ তৈরি, অননুমোদিত ওষুধ আমদানি, উচ্চ মূল্যে ওষুধ বিক্রি, সরকারি ওষুধ খোলা বাজারে বিক্রি করলে শাস্তির বিধানও আছে আইনে।
ওষুধ আদালতে রায় হওয়া বেশির ভাগ মামলাই দায়ের হয় অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য।
পেশকার রফিকুল বলেন, "বেশির মামলাগুলো হয়েছিল ড্রাগ অধ্যাদেশের বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত নীতি অনুসরণ না করার কারণে।
"
অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রকাশ ও লিফলেট বিতরণের দায়ে ২০০৩ সালের ১ ফেব্র"য়ারি বেইলি রোডের 'মেদ-ভুড়ি কী করি ও টাকে চুল গজানোর' এইচএম স্লিমিং পয়েন্টের মালিক রাগীব আহসানকে দুটি মামলায় মোট ছয় বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়।
ওষুধ আদালতের সাবেক বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ার জাহিদ ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ওষুধের নামে আমাদের চড়া মূল্যে বিষ খাওয়ানো হলেও লাগামহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আইনি কার্যক্রম শুধু পরিচালিত হচ্ছে তাবিজ কবজ মার্কা কোম্পানির বিরুদ্ধে। "
তথ্যসুত্রঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।