আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিগপ্প: আয়নায় পোষ্টার ।

http://www.choturmatrik.com/blogger/আরণ্যক
গলির মোড়ে দাড়িয়েছিলো তারেক । মাঝে মাঝে এমন হয় তার । কোথায় যাওয়ার কথা কিন্তু সে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় । তার সমস্ত দার্শনিক চিন্তা গুলো মাঝরাস্তার মাঝে এসে দাড়ায় । গৌতম বুদ্ধও বুঝি এমন অল্প সময়ে গভীর ধ্যানে চলে যেতে পারতেন না ।

গভীরে চলে গেলোও তার চিন্তার বিষয়টা তেমন ব্যতিক্রমী কিছু ছিলো না । সে ভাবছিলো তার যন্ত্রনা গুলোর উৎস কি কি আর "রুল অফ থাম্বস"। টুং টুং করতে করতে একটা রিকশা গায়ের উপর এসে পড়াতে চমক ভাংলো তার । লাফ দিয়ে দুকদম পিছিয়ে যায় তারেক । রিকশাওয়ালা প্যাডেল চাপতে চাপতে খিস্তি দেয় "রাস্তা মইদ্যে খাড়ায় তামশা ......"।

সদ্যনিস্ক্রান্ত রিক্সার দিকে মনোযোগী চোখে তাকায় তারেক । বিদঘুটে কিছু ছবির মানে বোঝা যায় না । তার মনে পড়ে সে রাস্তার কেনো বের হয়েছে । তার চুল কাটতে যাওয়ার কথা । লম্বা পা ফেলে সে গলির মোড়ের সেলুনের উদ্দেশ্য ।

সবসময় যে ছেলেটা দিয়ে চুল কাটায় সেই ছেলেটা হাসিমুখে এগিয়ে আসে । "আসেন তারেক ভাই -- কেমন আছেন -- চুল কাটবেন না শেভ " "চুলটা একটু ছোট করে দিবে--আর শেভ" ছেলেটা অভ্যস্ত হাতে ধোয়া চাদর বাধে গলায় । কাচির খট খট আওয়াজে তারেকের চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে আসে । চুলকাটা শেষে গালে শেভিং ক্রিম লাগতেই তারেক বলে উঠে -"নতুন ব্লেড লাগাও" নাপিত হাসে -"আপনে সব সময় এই কথা বলেন তারেক ভাই" ঠিক এই সময় তারেক চোখ পড়ে আয়নার কোনে। ঠিক আয়নার উপরে না - আয়না ফুটে উঠা পোষ্টারটার উপরে ।

শরীর বেয়ে হিলহিলে দুটো সাপ চলে যায়। সব কিছু আবার মনে পড়ে তার -- মার্কেটের পাশের গলিটা দিয়ে ও হাটছিলো । দূরে দেখে রংগিন চশমা পড়া কয়েকটা লোক কি নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসছে । কাছে যেতেই টের পেলো এটা ঠিক সুবিধার মানুষ না । কয়েকটা তরুনীর দিকে ওদের নজর ।

অশ্লীল ছিৎ ছিৎ শব্দ । হঠাৎ দংগলের একজন মেয়েগুলোর রাস্তা আটকে দাড়ালো । অনেকটা সিনেমার দৃশ্যের মতো । এই অবস্থা নায়ক এসে নায়িকাকে উদ্ধার করে -- তাদের প্রেম হয় -- সন্তান -- ঝগড়া -- ইতংবিতং । তারেক অবশ্য এতো কিছু চিন্তা করেনি ।

সে এখনো ঠিক জানে না এটা তার অতিরিক্ত মুভি দেখার ফল নাকি নীল ওড়ানাওলীর চোখের রাগ , তিক্ততা -- অসহায়ত্ব । সে দুপা এগিয়ে বলে উঠে -- "এই কি হচ্ছে?" এরপর মোটামুটি সবটাই ধোয়াশা । কে আগে শুরু করেছে মনে নেই তার । সে মারপিটে অভ্যস্ত লোক না । তাই তার তেমন কিছু মনে নেই ।

ঐ লোকগুলি বিপরীত । এমন কেস অহরহ তাদের হাতে আসে । হিসেব করে মারে তারা । বেমক্কা ঘুসিতে নাকের ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে । কিছুক্ষন পরে তার হুশ ফিরে -- কেউ ওকে তুলে ধরে ।

সাদা শার্ট রক্ত আর রক্তে ভর্তি । ঠিক তখনই দেয়ালের উপর পোষ্টারটা দেখতে পায় সে। নায়কের উরু ধরে রাখা নায়িকা। আবার সেই পোষ্টার আজ এতদিন পর সেলুনে চোখে পড়ে। চিড়বিড়ে একটা তিক্ত অনুভুতি হয় ওর ।

খামচে ধরে আয়নার ভিতরে পোষ্টারটা ছিড়তে চায় । থুতনির কাছটা চিরে যায় ব্লেডের আঘাতে । সাদা চাদরটা রক্তে লাল হয় । দুচোখ পানিতে ভরে উঠে তারেকের । নাপিত ছেলেটা বলে উঠে -"অনেক বেশী ব্যাথা পাইসেন তারেক ভাই ?" উৎসর্গ : Click This Link
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.