আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আয়ুব খানের ঘোড়া : কে তাহারে চিনতে পারে

দক্ষিণাধুনিক লিখোক- মীর্জা সুলতানুদ্দিন আখুঞ্জি
আমার মামু গওহর আলী মসতো বড়ো কবিয়াল। জাকড়া চুল। বাউলা ডেরেস। একদিন গঞ্জ থিক্যা ফিরা মামুরে আর খুইজা পাওয়া গেল না। মূলাদি আর আমতলীর বায়নাওয়ালারা চইলা গেল।

তাগো মুক ভার। কেডা আর তাগো আসর জমাইবো। এই চিন্তায় তাগো মাতা আউলা। মামীর কিন্তু কুনো চিন্তা নাই। খুপ কুশি।

আগে গান পসনদো করতো না। কৈতো গানই হ্যার সতীন। আর এহুন রান্না করে আর নিজি নিজি গুনগুনাই গান গায়- নিশিতে যাইও পুল বনে। চউক্ষে কাজল। বুজলাম, বেপার সুবিদার না।

কৈলাম, মামু কৈ? মামী হাইস্যা কুডি কুডি। কয়, দ্যাহো খাডের তলায়। খাডের তলায়ই মামুরে পাওয়া গেল। মাতার হেই লোম্বা চুল আর নাই। টাক।

নয়া চুল গজাইতেছে। কদম পুলির লাহান। আর বোজা যায়- কিছুডা আলকাতরার দাগ চান্দিতে এহনো আচে। -কী হৈচে মামু? - আয়ুব খানের আমরি চুল কাইডা দিচ্ছে। কৈছে নয়া জামানায় এইসব চলবে না।

মামু মাতায় গামছা বাইনদা গঞ্জে গেল। ফিরা আইল দুইদিন পর। মাতায় কিস্তি টুপি। লগে দুইডা ছাগোল। ব্যা ব্যা কৈরা ডাকতেআছে।

-ছাগোল দিয়া কি হরবা মামু? - ঘোড়া দৌড়ানিতে নামামু। - ঘোড়া দৌড়ে ছাগোল? বুজবার পারতাছি না। -সুইজা কাম নাই। এইডা তুমার বাপের ছাগোল না- আয়ুব খানের ছাগোল। মুন্সী সাব দিছেন।

হেইদিন হৈতে মামুর লগে লগে ছাগোল দুইডা। ছাগোল দুইডার লগে লগে মামু। হারাদিন গেরামের ব্যাবাক কাডোল পাতা খাইয়া শ্যাষ। হ্যারপর অন্য গেরামের পাতাও শ্যাষ। আয়ুব খানের ছাগোলের তাগোদই আলেদা।

পরের কাডোল পাতা খাইয়া পাঞ্জাবী ঘোড়ার মতো নাদুস নুদুস হৈয়া উডল। হডাৎ কৈরা দেকলে হ্যাগো ছাগোল না- হাছা ঘোড়ার লাহানই লাগে। আর দ্যাশ গেরামের ছাগোল গুলান খাইদ্য না পাইয়া শুটকো ইনদুর হৈয়া গেল। অবোস্তা আরও জুটিল হৈল- যহন মামু ছাগোলের লগেই গুমান শুরু করলো। মামী রাগে গজ গজ কৈরতে লাগল।

আগে আছিল গানের পাগোল। এহুন হৈছে ছাগোলের পাগোল। মামু কয়, একদুম চুপ। এডি ছাগোল নয়রে। এডি আয়ুব খানের ঘোড়া।

সমসসা হৈলে মহাবেপদ। কাউয়ার চরে সাতদিন দৈরা প্যানডেল বানান হৈল। লেহা হৈল শালু কাপুড়ে- ঐতিহাসিক ঘোড়ার দউড়। আর আইল মাইক। দিন রাইতে বাজতে লাগল- লাল দুপাট্টা মল মল মল…।

যেইদিন ঘোড়ার দউড় হেইদিন সহালে দুইজুন কসাই আইসা ছাগোল দুইডারে জবাই কইরা ফেললো। অন্য কুনো কতা নাই। কয়জন বাবুর্চি আইসা রাননা বাননা শুরু করল বড়ো ডেকচিতে। মামু আতকা কৈলো- এইডা কি করলেন? মোর ঘোড়ার দউড় হৈবে ক্যামনে? লুকগুলান কতা কয় না। গুইরা গুইরা নাচে।

আর রাননা করে। আর গান গায়- লাল দুপাট্টা মল মল মল…। মামী শরমে ঘরে গিয়া খিল দিল। খাডের নীচে ডুকলো। মুন্সী সাবের লঞ্চ কাউয়ার চরে আইসা বিড়ল।

মাতায় জিননাহ টুপি। চউক্ষে সুরমা টানা। লোম্ব শেরওয়ানী। কালো মুকাসিন পায়ে। মচোর মচোর শব্দ অয়।

চোস পাজামা। আতরেরর গইন্দে নাকের মইদ্যে ছ্যাত কৈরা ওডে। খানা পিনা সারলেন লঞ্চেই। লোম্ব ডেইক ছাইড়া কৈলেন, আইচ্চা বি খানা হ্যায়। দিল তক বি ঠান্ডি হো জায়গা।

মামু বিড় বিড় কৈরা এর মইদ্যে একবার কৈলেন, মোর ঘোড়া দউড়োনির কি অইবে? মুন্সী সাব দাঁত খিলাইতে খিলাইতে কৈলেন, এইডা তুমার চিন্তা না। গান বানাইচো? -না। -সে কি? তুমার এহুন কাম নয়া নয়া গান বানদা। আর নাপসোন্দ গানের কতা পাল্ডাও। আরও কত কি কৈলেন মুন্সী সাব।

মেলা হিস্টিরি। হ্যাষে কৈলেন, তাইলে একহান গান হোনাও তো দেহি। হুনি। গওহর মামু কি আর করেন। গান দরলেন- প্রাণ সখিগো অই শোন কদম্বডালে বংশী বাজায় কে? মুন্সী সাবের নয়া বিবি একবার কেবিন থিকা বাহিরে আইলেন।

কিচুক্ষণ চাইয়া রইলেন চরের দিক। আবার কেবিনের মইদ্যে ডুইকা গেলেন। তার বয়স ১৬-১৭ বচোর। মুন্সী সাব হাত দিয়া মামুরে থামাইয়া দেলেন। কৈলেন, তুমার এই প্রাণ সুখিডো কেডা? -রাদা।

-কদম্ব মানে কি? - কদম পুল। - বংশী? - বাশিঁ। - আর বাঁশিডা বাজায়- হেইডা কেডায়? - কিসনো। - কোন কিসনো? মাইয়াগো লগে দিললাগি করতো যেই কালা বেডা- হেই নিকি তুমার কিসনো? মামু কুনো কতা কৈল না। মুন্সী সাব ঠান্ডা গলায় হুকুম দেলেন, এই ছাগোলডারে বান অই খাজুরগাছের লগে।

আর অর কান দুইডা কাইডা ফ্যালা। হালায়, মালাউনগো গান গায়! মুন্সী সাব ঘোড়া দউড়ানির মাডের দিক হাডা দিলেন। হেইদিন কাউয়ার চরে লুকে লুকারণ্য। কুনো জাগা ফাকা নাই। ইস্টেজে মুন্সী সাব নাক ডাকতেআছেন।

খানাপিনা আচ্ছা হৈচে তো। আর বয়সডাও তো কম না। মাইকে বাজতেআছে- আর কিচুক্ষণের মইদ্যে শুরু হৈবে । অইতিআসিক ঘোড়ার দউড়। এডি যে কুনো ঘোড়া লয়গো।

এইডি পিল্ড মার্শাল আয়ুব খানের ঘোড়া। মুন্সী সাবের গুম বাঙতে বাঙতে রাইত নাইমা আইল। চর জুইড়া গুডগুডা আনদার। দুএকডা জুনাকি পিরিক পিরিক কৈরা জ্বলে। এর মইদ্যে কুন সুমায় ঘোড়ার দউড় শুরু হৈল বুজবার পারলাম না।

আবসা আলোতে দেকলাম, কয়ডা শুডকি ইনদুর দউড়াইতাছে জিমাইতে জিমাইতে। আর হ্যাগো পিচে একডা মানুষ মেলা কষটে দউড়ানোর বঙ্গি করতাচে। লুকডা ঠিকমতো খাড়াইতেই পারে না। দউড়াবে কি! পইড়া পইড়া যায়। আর দুইডা দইত্য হ্যার ঘাড় দইরা তক্ষুণি উডাইয়া দ্যায়।

হাইকা কয়, দৌড়া- ঘোড়া দৌড়া। ………………………………………………………………….. মেলাদিন পরে গঞ্জে গেছি। লঞ্জ গাডে দেহি ছুডো খাডো বিড়। বিড়ির মইদ্যে একডা লুক কিমরির বড়ি বেচতেআছে। মাতায় জিননা টুপি।

কানের জাগায় কান নাই। হেইহানে ছাগোলের দুইডা কান দড়ি দিয়া বানদা। কৈলাম, মামু, অ মামু! কেডা কার মামু? লুকডা বেঞ্জু বাজায় আর গান গায়- পিয়ারা দোসতো গো অই শোন খাজুর তলায় শিঙ্গা ফুকায় কে?
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।