আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাদের রূপালী ইলিশ......

মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ!
আমাদের বাংলাদেশীদের রান্না-বান্না খাবার-দাবারের উপর এইরকম সাহিত্যিক বর্ণনা লেখা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব না। কিন্তু খেয়েও তো ঠিকই স্বাদ বুঝি। আর এই দূরদেশে এসে এদের ছাইপাশ খাবার দেখে আরো ভালভাবে বুঝি আমরা কত ভোজন রসিক। সবচেয়ে ভালো লাগে যখন এই পরদেশে নিজেদের ইলিশ দেখি। বিভিন্ন সাইজের বা ওজনের (এক কেজি, দেড় কেজি, দুই কেজি বা আরো বড়) ইলিশ আমরা বাংলাদেশীরা বেশ আগ্রহের সাথেই কিনি, যদিও দাম অনেক (এক কেজি প্রায় হাজার টাকার উপরে)।

আর আমরা খোঁজ-খবর রাখি কার কার বাসায় ইলিশ কেনা হলো, কবে কবে রান্না হবে, তখন নিজেরাই নিজেদের দাওয়াত দিয়ে সেসব বাসায় ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে চলে যাই ইলিশ খাবার জন্য। এই কোরিয়ায় এলাকার বা রাস্তার নাম-ধাম মনে রাখা বেশ দুঃসাধ্য, অনেক সময় জানিও না। এই যেমন আমি শুধু আমার বাসার নাম্বার জানি, রাস্তা বা এলাকার নাম জানি না। বাসাভাড়ার চুক্তিতে লেখা আছে অবশ্য। আমরা শুধু এইভাবে চিনি, এরপর বাঁয়ে যেতে হবে, তারপর সোজা, তারপর ডানে মোড়............।

[দূরের প্রধান ঠিকানাগুলো জানতে হয় অবশ্য ] কিন্তু তাতে কি? কোন বাংলাদেশীর বাসায় দাওয়াত থাকলে বাসার কাছাকাছি যদি একবার পৌঁছে যেতে পারেন, এরপর ঠিক কোন গলি দিয়ে ঢুকতে হবে বুঝতে না পারেন বা ডানে যাবেন নাকি বাঁয়ে যাবেন বুঝতে পারছেন না, কুচপরোয়া নেহি। চিনিগুঁড়া চালের পোলাও বা ইলিশ ভাজা বা গরু মাংসের গন্ধেই আপনি ঠিক চিনে ফেলবেন কোন বাসাটা আপনার গন্তব্য। যাই হোক, খুব মজা মজা করে তো খাই, কিন্তু কিছু ব্যাপার আমাকে ভাবায়ও বটে। এতো বড় বড় ইলিশ বাংলাদেশের বাজারে সচরাচর পাওয়াই যায় না। এইতো ভরা বরষায় বাড়ি যাবার প্ল্যান করেছি, কিন্তু জানি খোদ চাঁদপুরেও এতো বড় ইলিশ মেলে না।

সব পাইকারী বিক্রি হয়, লোকাল খুচরা ক্রেতাদের কোন পাত্তা নাই, বড় জোর জাটকা ইলিশ খাও, বা ভাগ্য ভাল হলে ৭০০/৮০০ গ্রামের ইলিশ.........ঐ পর্যন্তই। ঢাকাতে যদিও এক কেজি বা দেড় কেজির ইলিশ পাওয়া যায় কিছু, সেগুলো দাম যেমন আকাশছোঁয়া থাকে, স্বাদও তেমন থাকে না। শুটকি শুটকি লাগে। অথচ এই কোরিয়ায় যেসব ইলিশ আসছে সবগুলোর স্বাদই অতুলনীয়, মনে হয় সেই শৈশবের ইলিশের স্বাদ। আর সবগুলোই ডিমওয়ালা ইলিশ।

কি শীতকাল, কি বর্ষাকাল সবসময়ই ডিমওয়ালা ইলিশ খাচ্ছি। এটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়। নৈতিকভাবে আমি ডিমওয়ালা কোন মাছই খেতে চাই না। কারণ, এই ডিমগুলো ভবিষ্যতের মাছের প্রজন্মের জন্য খুবই দরকারী। যেভাবে মাছের আকাল পড়ছে বাংলাদেশে, এইসব ডিমভর্তি ইলিশগুলো দেখে আমি সত্যিই শিউরে উঠি।

কি করে জেলেদের বা ব্যবসায়ীদের সচেতন করা যাবে এইসব ব্যাপারে?? তারা কি বোঝে না এতে করে কত ক্ষতি হচ্ছে আমাদের দেশের?? আমি ব্যক্তিগতভাবে যখন থেকে জেনেছি মাছের ডিমের গুরুত্ব ঠিক তখন থেকে সবসময় এড়িয়ে যাই এসব মাছ কিনতে বা খেতে, পরিবারের বাকীদেরকেও তাই করতে বলি। আমার বাচ্চাদেরও মাছের ডিম খাওয়ার অভ্যাস করাইনি। এখন কখনো যদি কোন মাছে ডিম থেকেও যায়, তবুও তারা খেতে চায় না। এভাবে আমরা ক্রেতারা এই ধরণের ডিমওয়ালা মাছ কেনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারি। কিন্তু এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে যে মাছগুলো ইতিমধ্যে চলে এসেছে বা আসছে প্রতিনিয়ত সেগুলো তো আর নদীতে ফেরত দেবার উপায় নেই।

তাই জেলেদের বা ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে সচেতন হবার কোন বিকল্প নেই। সরকারেরও উচিত এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। তা না হলে অচিরেই আমরা 'মাছে-ভাতে বাঙ্গালী' এই পরিচয় হারাবো।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।