সাবেত আলি জানলার ধারে বইস্যা থাকে। জানলার গ্রিলের ধুলার গন্ধ নাকে তার। ফোস ফোস কইর্যা নিঃশ্বাস নেয় সে। গ্রিলের ভিতর দিয়া দৃষ্টি বহুদূর নিয়া চোখের পাশের গ্রিলগুলারে আড়াল করে সে। বাইরে সন্ধ্যা নামতেসে।
লাল আকাশ দেখবার স্বাধ জাগে সাবেত আলির। আকাশ দেখা দুষ্কর হয়া পড়ে। বিল্ডিংয়ে সব ভইরা গ্যাসে। আকাশরেও ঢাইক্যা দিসে দালানগুলা। চোখ দিয়া হালকা পাতলা যে আকাশ দেখা যায় তাই দিয়া স্বাধ মিটায় সাবেত আলি।
বাইরে থেইকা গাড়ির হর্নের আওয়াজ আইস্যা প্রকৃতির নীরবতারে গলা টিপা ধরতে চায়। কানের মধ্যে হর্নের আওয়াজ আর মাইনষের চিল্লাচিল্লি মাথার রগে আইস্যা বিঁধে। নাকের মধ্যে ধুলা আলা বাতাস ঢুকতেসে সাবেতের। চিপা আকাশের দিকে তাকায়া জীবনের হাজার কথা মনে পইড়্যা যায়। মনে পইড়্যা যায় জন্মের পর থেইক্ক্যা ছুইটা যাওয়ার কথা।
মনের মধ্যে ফ্ল্যাশ ব্যাক হইতে থাকে তার। জীবনে কম চড়াই উৎরাই পার হইতে হয় নাই তাকে। পদে পদে সমস্যায় মনের বিভিন্ন খণ্ড রক্তাক্ত হইসে বার বার। জীবনদা হের কাসে বানানো নাটক মনে হয়। কতগুলা পাত্র-পাত্রী পাগলের মত খাইট্যা মরতেসে নাটকের লেইগ্যা।
অথচ বুসতেসে না হ্যারা পরিচালকের সুতার টানে নড়তেসে। সাবেত আলিও হ্যাদের সাথে ছুটসে অনেক দিন ধইর্যা। কীসের লেইগ্যা ছুটসে এতদিনেও ধরতে পারে নাই। কোন কবি কইসিলো না যে কীসের পিছে ক্যান ছুটতেসে কেউই জানে খালি একে অন্যেরে অনুসরন করে। মনে পইড়্যা যায় মনের দুঃখের কথা।
নাটকে টিকা থাকার লেইগ্যা কম পরিশ্রম করে নাই সে। তারপরে দেখসে হিরোই জিতসে, ভিলেনে হারসে আর সাবেত আলিরা খাইট্যা মরসে বার বার।
ক্যামনে ক্যামনে জানি নাটকের ফাঁদে পইড়্যা যায় সাবেত আলিরা। পুষ্পশয্যা না হইলেও হেই কণ্টকশয্যা নিজেরা শয় আর আরও সাবেত আলিরে কণ্টক শয্যায় নিয়ে আসে। হেরপর দেখে কণ্টক কারে কয়? হেরপরও নাটক চালাইতে থাকে এরা।
পছন্দের পাট পায় না কোন সাবেত আলিই। হেরপরেও ফাঁদে পইড়্যা পাট করতে হয়। এই নাটকের কাহিনী সবাই জানলেও ক্যান জানি না জাইন্যা থাকার ভাণ করে। সব সাবেত আলিই জানে কাঁটার বিছানা থেইক্যা মাটির বিছানায় যাইতে হইব তারপরও কাঁটার বিছানায় শুইয়া লাফাইতে থাকে। লাফাইতে লাফাইতে ঘণ্টা বাইজা যায়।
এক সাবেত আলি মাটির ঘরে ডুব দ্যায় আরেক সাবেত আলি আইস্যা হের পাট করে। সব সাবেত আলিই হাজার পেলান পোগরাম কইর্যা শেষ পর্যন্ত এক রাস্তাতেই দৌড় দেয় আর যায়া পড়ে মাটির গর্তে। মাঝখান থেইক্যা সব ফালাফালিগুলা মনের রক্তাক্ত টুকরাগুলার সাথে রাস্তার ওপর পইড়্যা থাকে, কেউই তুইল্যা নেয় না। সব বৃথা হয়া যায় হেরপরও পরিচালকে নাটক থামায় না। শেষ পর্যন্ত ধুলাআলা জানলার গ্রিলের মধ্য দিয়া বাইরে আকাশ খুঁজতে যায়া শ্বাসের লগে গ্রিলের ধুলায় গুলাও টাইন্যা নেয় সাবেত আলি।
চোখ-মুখ-নাক থেইক্যা পানি পইড়্যা গ্রিলের ধুলা কাদা বানায় সে। নাটকও শেষ হয় না, ছুটিও পায় না সাবেত আলি। কিন্তু নাটক শ্যাষে চির ছুটিতে যাইতে হইব তার। নাটকে পাট কিন্তু হে নিতে চায় নাই। হের ইচ্ছার মূল্য দেয় নাই কেউ।
এখনও সাবেত আলি গ্রিলের কাছে দাঁড়ায়া পাট কইর্যা যাইতেসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।