আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাইকেল জ্যাকসন এবং জঙ্গি মিজান



মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুটা অকাল মৃত্যু। ৫০ কোন বয়সই না, অন্তত: মরে যাবার জন্য। তবুও এই মৃত্যু অনেকটাই অবশ্যম্ভাবী ছিল। মাইকেল জ্যাকসনের বাবা রীতিমতো একজন অসুস্থ মানুষ। মাইকেল জ্যাকসনের নাক ছিল মোটা।

শৈশবে ওর বাবা এই মোটা নাক নিয়ে নিত্য খোঁটা দিতেন। পপ তারকা হবার পর মাইকেলের হাতে যখন টাকাকড়ি এলো , তখন মাইকেল জ্যাকসন প্ল্যাস্টিক সার্জারি করে নিজের নাক কেটে ছোট করেছিলেন। গোটা জীবনে অনেকবার নাকে আকার পরিবর্তন করেছেন মাইকেল। একটি টিভি সাক্ষাৎকারে মাইকেল জ্যাকসন নিজেই স্বীকার করেছিল , শৈশবে তার বাবা তার উপর কী রকম অত্যাচার করেছে। বাবা নিষেধ করতেন জানালা খোলা রেখে ঘুমাতে।

মাইকেল জানালা খোলা রেখেই ঘুমাতো দেখে তার বাবা মুখোশ পড়ে খোলা জানালা দিয়ে ঢুকে ঘুমন্ত মাইকেলকে ভয় দেখিয়েছিল। এই ভয় মাইকেলের মনে চিরস্থায়ী হয়েছিল। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, মাইকেল জ্যাকসনও ছিলেন একজন আপাদমস্তক অসুস্থ মানুষ এবং এই অসুস্থতার সূত্রপাত শৈশবেই। প্রচুর খ্যাতি, অফুরন্ত ধন সম্পদ, ভক্তদের অকৃত্রিম ভালোবাসা কোনকিছুই মাইকেলের এই অসুখ সারাতে পারেনি। শোনা যায়, একটা সময়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত খবরেও জানা যাচ্ছে যে , তিনি হিন্দু ধর্মের প্রতিও বিশেষভাবে ঝুঁকে ছিলেন। একটি দৈনিক পত্রিকায় খবর দেখলাম, তিনি শেষ সময়ে রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছিলেন এবং ভারতীয় ইয়োগার চর্চাও তিনি শুরু করেছিলেন। ড্রাগ, নিজের সন্তানকে বারান্দা থেকে ঝুলানো- আরও নানান রকমের অস্তিরতা এবং পাগলামির মুখেরোচক সংবাদের সমৃদ্ধ তার গোটা জীবন। মরার পর পোস্টমর্টেম করে তার পাকস্থলী গোটা চারেক উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ চাড়া অন্য কোন খাদ্যবস্ত পাওয়া যায়নি। হালে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়া জঙ্গি মিজানের ব্যাপারে একটি পোস্টে আমি লিখেছিলাম, এই মিজানের শৈশব এবং তার পারিবারিক পরিবেশটা স্টাডি করা দরকার।

এই জঙ্গি মিজানকে জবাববন্দি দেবার জন্য আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে এসে জঙ্গি মিজান মত ঘুরায়, সে জবানবন্দি দেবে না , কেননা যার কাছে সে জবাববন্দি দেবে সেই জজ একজন মহিলা। একজন মহিলা কখনো হাকিম হতে পারেনা, ধর্মে নাকি এমনটাই বলা আছে। এর চেয়ে ভয়াবহ কান্ড ঘটেছিল , বাংলা ভাইয়ের এক সহচরের ক্ষেত্রে, বোমায় তার ডান হাত উড়ে গিয়েছিল। পানির পিপাসায় সে হাসপাতালে ছটফট করছিল, তাকে পানিও দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু বাম হাত দিয়ে সে পানি পান করবে না, কেননা এটা সুন্নতের বরখেলাপ। শেষ অবধি ঐ সুন্নতের অনুসারি বিনা পানিতে, প্রবল পিপাসা নিয়ে মারা গিয়েছিল। আমি জঙ্গি মিজানের শৈশব সম্পর্কে আগ্রহী ছিলাম। মিজান সংক্রান্ত কোন খবরাখবর পেলে খুটিয়ে সেটা পড়তাম, যদি কিছু পাওয়া যায়! মিডিয়া, আদালত, র‌্যাব _ এরা সবাই মিজানের ভবিষ্যত নিয়ে আগ্রহী, অতীত নিয়ে না। কোথায় কোথায় বোমা ফাটানোর পরিকল্পনা মিজানের আছে, বাংলাদেশের কোন এলাকাকে সোয়াত বানানোর পরিকল্পনা করেছে মিজানরা , তাই নিয়ে তারা ব্যস্ত।

আমাদে প্রশাসন, মিডিয়া এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে আমার নিজস্ব একটা ধারণা আছে। কয়েকদিন আগে এক সচিব _- ইউএনডিপির এক প্রজেক্ট পরিদর্শন শেষে, সেই ইউএনডিপিরই একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে একই জীপে ঢাকা ফিরছিলেন। সেই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা একজন মহিলা, এবং তিনি স্কার্ট পরনে ছিলেন। সচিব মহোদয় গাড়ির ভেতরেই সেই ভিনদেশী ভদ্রমহিলার উপর হামলে বা মতান্তর ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। ঐ মহিলা বিদেশীনি এবং বড় কর্মকর্তা বলেই তিনি ব্যাপারটা নিয়ে জায়গামতো এবং কায়দামতো বিচার দিয়েছিলেন।

সরকার ঐ সচিব মহোদয়কে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিন্তু ঐ সচিব একটি জোড়া বিদেশ সফরে আমেরিকা এবং মালয়েশিয়ায় আছেন, ফিরলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই হচ্ছে আমাদের প্রশাসন- আর মিডিয়া??? আমাদের দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি বাথরুমে আছাড় খেয়েছেন এবং অধিকাংশ জাতীয় পত্রিকা রিপোর্ট করেছেন এইভাবে - সাহারা খাতুন বাথরুমে পড়ে কুঁচকিতে ব্যথা পেয়েছেন। কোন মহিলা সম্পর্কে যে এইভাবে রিপোর্ট করা যায় - সংবাদপত্র না পড়লে আমি এটা কখনোই বিশ্বাস করতাম না। মিডিয়া এবং প্রশাসন বুদ্ধিবৃত্তিক স্তর নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ধারণাটি যে একেবারেই খাঁটি এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যাই হোক, আজকের পত্রিকাতেই পড়লাম, জঙ্গি মিজান ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে প্রায় পনের দিন হাজতবাস করেছিল।

এরপর সে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। মিজানের অতীত নিয়ে এই এক টুকরো তথ্যই আমাকে বেশ অবাক করলো। ম্যট্রিক পরীক্ষার্থী একজন কিশোর যদি দিন পনেরো হাজতবাস করে, তাহলে সে যে একজন বড় মাপের সন্ত্রাসী হবে- এটি বলার জন্য জোতিষী প্রফেসর হাওলাদার হতে হয় না। আরেক ভয়াবহ সংবাদের কথা বলেই আজকের লেখাটি শেষ করবো। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে একজন মহিলা মাদক ব্যবসায়ের কারণে গ্রেপ্তার হয়ে রাজশাহী কারাগারে আছেন।

তার সাথে রয়েছে , তার দশ বছর বয়সী পুত্র সন্তান ফেরদৌস। মায়ের সাথে সেও কারাবন্দী। এই ফেরদৌসের যদি মাইকেল জ্যাকসনের মতো প্রতিভা থাকে , তাহলে তার গোটা জীবন ছাড়খার হবে শৈশবের এই কারাবাসের কারণে। জঙ্গি মিজানও প্রতিভাবান। সে ঘরে বসেই সামান্য কিছু জিনিস দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে গ্রেনেড , মাইন ইত্যাদি বানাতে পারতো।

এও ছিল এক অফুরন্ত সম্ভাবনার মানুষ, এই সমাজ এবং সমাজের নির্বোধেরা তাকে জঙ্গি বানিয়েছে। ফেরদৌস আরও ভয়াবহ কিছু একটা হবে, এজন্যই তাকে , তার মায়ের অপরাধে কারাগারে রাখা হয়েছে। এই প্রশাসন এবং সমাজের কাছ থেকে আমরা আশা করতে পারি, কালে কালে এই ফেরদৌসও একদিন বড় কিছু হবে , এতো বড়ো যে সে নিজের যোগ্যতায় এবং র্কীতিতে একদিন কারাবরণ করবে, কে জানে হয়তো সাথে তার শিশুপুত্রও থাকবে। গোটা বাংলাদেশ একটি পূর্ণাঙ্গ নরকে পরিণত হওয়ার আগেই , আসুন আসুন আমরা আমাদের শিশুদের দিকে একটু নজর দেই। তারা কেমন আছেন , কীভাবে আছে - একটু ভাবি।

দেশের সমস্ত কারাগার থেকে শিশুকিশোরদের মুক্ত করি। অন্তত: শিশুদের জন্য- আমরা বড়রা একটু সচেতন হই ...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।