চাটুজ্যেদের রোয়াকে বসে আম খাবার যে এতো মজা সেটা আগে কখনো টের পাইনি। টের পাবার জো ছিলনা বলাটাই উচিত হবে। ক্যাবলাদের সন্দেশমুখী আম গাছের যে কয়টা আম সে ম্যানেজ করতে পারতো, তার সবই তো যেত টেনিদার ভোগে !
ছোট ছোট, রসে ভরা আমে কামড় বসাতে বসাতে, আমরা সে কথাই বলাবলি করছিলাম। আমরা মানে, আমি -প্যালারাম বাড়ুজ্যে, ক্যাবলা আর ঢাকাইয়া হাবুল সেন।
ভাবছো টেনিদা কই গেলো?!
আরে! সে নেই বলেই তো এই ভোগ সম্ভব হলো।
তোমরা যারা এখনকার ক্যামিক্যাল মাখানো আম খেয়ে পেটরোগা ভোগা হয়ে পড়ছো, তারা ভাবতেই পারবেনা কি অমৃতই না চাখছি আমরা বসে বসে।
আহা।
অথচ দুদিন আগেও এমনটা ঘটার সম্ভাবনা ছিলনা!
সেদিন পড়ন্ত বেলায়, ষন্ডা উড়িয়া দাড়োয়ানটায় চোখ এড়িয়ে ক্যাবলাটা সবে মাত্র কোঁচরে চারটে আধপাকা আম নিয়ে রকের আড্ডায় পৌঁছেছে। টেনিদার শকুন চোখ অনেক দূর থেকেই রাডার তাগ্ করে বসে ছিল। ক্যাবলা এসে কোঁচড় ছাড়ার আগেই হামলে পড়লো সে।
"মাত্র চারটে! ছ্যাঁ, ছ্যাঁ, ছ্যাঁ!! তোরা বামুনের ভোগটাও দিতে শিখলিনা এখনো। বলি নরকে যাবার রাস্তায় আর কে বাঁচাতে আসবে শুনি?"
রক্তচক্ষু টেনিদার ভাবখানা এমন, যেন ক্যাবলাকে হ্যাঁচকা টানে নরক থেকে এই মাত্র টেনে তুলে আনলো!
ক্যাবলার মুখখানা আমসির মতো হয়ে গেলো। নিশ্চই ভেবেছিলো জনপ্রতি একটা।
গাধা একটা!
টেনিদার সামনে দিয়ে কেউ কখনো কিছুতে ভাগ বসাতে পেরেছে?!
আমি অবশ্য টেনিদাকে তিনটি দিয়ে একটি সাঁটাতে পারলেই বর্তে যেতুম।
ক্যাবলা আর হাবুলের জুল জুল করে তাকিয়ে থাকা মুখ দেখে টেনিদাকে সে প্রস্তাব দেয়ার বিশেষ আগ্রহ পেলাম না।
পকেটে দু দানা চিনেবাদাম ছিলো। সুযোগ বুঝে সেটাই মুখে চালান করে দিলেম। টেনিদা এখন ছোটখাটো ভোগের দিকে দৃষ্টি দিবে না।
বামুণ ভোজণে মনে হয় বাক্যালাপ নিষিদ্ধ!
টেনিদা চেটেপুটে সেঁটে প্রত্যেকটা আটি আবার দাঁত দিয়ে কেঁটে দেখলো ! পাছে কোন শাঁস বাদ পড়ে যায় যদি!
পাকা আমে গন্ধে কোত্থেকে যান একটা পাঁঠা এসে জুটেছিল; অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে সে যখন আঁটিটা চাটতে গেল; দিব্যি দিয়ে বলছি; বিশ্বাস করবে না, ছাগলটার চোখ কেমন যেন ছল ছল করে উঠলো!
ম্যাঁ, ম্যাঁ করতে করতে কেমন যেন অভিমান ভরেই দুদ্দাড় করে মিত্তির দের পুকুরের দিকে দৌড় দিল!
ও হরি! মনের দুঃখে জলে ঝাঁপ দিতে গেল নাকি অবলা প্রাণীটা?!
মনের ভেতর বেশ একটা ভাব এসে গেল। ইচ্ছে হলো 'অবলা প্রাণী নিপীড়ণ প্রতিরোধ সমিতি'তে যোগ দেই।
তবে ভাবটা বেশীক্ষণ রাখতে পারলাম না। আমার আনমনা চেহারা দেখে টেনিনা কানটা ধরে টান দিয়ে দিয়েছে-
"আরে মলো যা! এইটার দেখি আমের গন্ধেই পেট নেমে গেছে! সাধে কি বলি ছাইপাশ খাবার লোভ করতে যাসনে; শুঁকতে যাসনে। "
খুব রাগ হলো! পেট নামলে কি এখানে এতোক্ষণ বসে থাকতে পারতাম?!
বল্লেই হলো?! আর টেনিদা শোঁকার চান্সটাই বা কখন দিলো শুনি?!
মনে মনে একটা জিঘাংসার শপথ নিয়ে ফেল্লুম।
রোসো! এই কানটানা আর আম সাটানোর প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়ছি না বাপু। মৌসুমের আমের প্রথম ভোগটাই গেল তোমার পেটে! এত অবিচার ধর্মে সইবে না!
(চলবে)
ব্লগার মানুষের একটি পোস্টেডিলা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক এ গিয়ে মনে পড়লো 'নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ে'র ' টেনিদার গল্পগুলি কি পরিমাণ প্রিয় ছিল ও আছে।
স্মৃতিকাতরতায় লোভ সামলাতে না পেরে একটা গল্প লেখার অমার্জনীয় অপরাধ করেই ফেললাম। প্লট টা মাথায় আছে; উৎসাহ পেলে লিখে যাবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।