সকল অন্ধকারের হোক অবসান
তেমুজিন। দশ বারো বছর বয়স। বাবার সঙ্গে মার্কিত আদিবাসী পল্লীতে গেছে সে। নিজের বউ বাছাই করতে। কিশোর বয়সেই তেমুজিন নিজের স্ত্রী হিসেবে পছন্দ করে সমবয়সী বর্তে নামের এক চটপটে মেয়েকে।
উল্টোভাবে বললে বর্তেই তেমুজিনকে আগে পছন্দ করে। যখন সাবালক হবে তখন বউকে তুলে নিয়ে যাবে, এমনটাই কথা থাকলো। কিন্তু বিধি বাম।
নিজেদের ডেরায় ফেরার পথে শত্রুর চাতুরীতে মারা যায় তেমুজিনের বাবা সুগেই। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় বাবার সহযোগী।
সুগেই-এর অবর্তমানে সে নিজেকে দলের প্রধান ঘোষণা করে এবং কিশোর তেমুজিনকে বন্দী করে। কিন্তু নেহায়েৎ বালক বলে তাকে কতলও করতে পারছে না। তাই ঠিক হয় যতদিন না তেমুজিন বড় হয় ততদিন সে বন্দী থাকবে, বড় হলে তাকে কতল করা হবে।
কিন্তু তেমুজিনের কপালে যে ছিলো রাজটীকা, সে খবর কি কেউ রাখতো? একমাত্র বৃদ্ধ এক শামান ছাড়া? বৃদ্ধ শামান তেমুজিনকে বলেছিলো: যেদিন তুমি বড় হবে সেদিন আমাকে ক্ষমা করো। তেমুজিন তাকে ক্ষমা করেছিলো।
কারণ সে বড় হয়েছিলো এবং ইতিহাস রচনা করেছিলো। তার নাম হয়েছিলো চেঙ্গিস খান। মঙ্গলদের প্রধান শাসক, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের অধিপতি।
চেঙ্গিস খান স্বপ্ন দেখতেন, স্তেপে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ানো মঙ্গোলদের তিনি এক করবেন। হানাহানির পথ থেকে ফিরিয়ে এক বৃক্ষের ছায়াতলে আনবেন।
হাজার হাজার ভবঘুরে, যারা তৃণভূমিতে পরিভ্রমণ করতো আর দলাদলি করতো, তাদেরকে এক করার বাসনা ছিলো চেঙ্গিস খানের। কিন্তু সেই স্বপ্ন একদিনে পূরণ হয় নি। নিজেকে পুড়তে হয়েছে বহুবার। মচকাতে হয়েছে অজস্রবার। কিন্তু ভেঙে পড়েন নি।
তৎকালীন মঙ্গোল সমাজে এক দল আরেক আদিবাসী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতো। স্ত্রী-কণ্যাদের উঠিয়ে নিয়ে যেতো। তেমুজিনের স্ত্রী বর্তেকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। স্ত্রীকে ছাড়িয়ে আনতে তিনি সাহার্য নেন জম্মু খাঁর। সেখান থেকেই শুরু।
জম্মু খাঁ আর চেঙ্গিস ঐ দলে আক্রমণ করে স্ত্রীকে মুক্ত করে। এবং যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ বিলিয়ে দেন যোদ্ধাদের মাঝে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যুবক তেমুজিন। বন্ধু জম্মু খাঁ-এর কাছ থেকে চলে আসার সময় বেশ কিছু ভৃত্য ও যোদ্ধা তেমুজিনের সঙ্গে চলে আসে। বন্ধুত্বে ফাটল ধরে।
মুখোমুখি হয় জম্মু আর তেমুজিন। কেউ কারো চেয়ে কম নয়। একদিন জম্মু পরাজিত হয়। নাম ছড়িয়ে পড়ে তেমুজিনের অর্থাৎ চেঙ্গিস খানের।
এভাবেই লড়তে লড়তে এক পর্যায়ে সে হারিয়ে দেয় প্রায় সকল দলকে।
কোনো কোনো দল এমনিতে নতি স্বীকার করে ভিড়ে যায় তার দলে। মাঝখানে অবশ্য চেঙ্গিসকে দাস হিসেবে বন্দী থাকতে হয় তাঙ্গুত রাজ্যে। চেঙ্গিস পরবর্তী সময়ে এই রাজ্যের নাম নিশানাই মুছে দেন মানচিত্র থেকে।
দ্বাবিংশ শতাব্দীর পরাক্রমশালী বীর চেঙ্গিস খানকে নিয়ে এমন টানটান কাহিনীর বুনোটে ছবিটি বানিয়েছেন পরিচালন সের্গেই বদোরোভ। এটি একটি যৌথ প্রযোজনার ছবি (জার্মানী, কাজাকস্তান, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়া)।
২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটির আরো দুটি এপিসোড হবে। অর্থাৎ এটি একটি ট্রিলোজি। চীনসহ ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে চেঙ্গিস খান একজন খল নায়ক হলেও মঙ্গলদের জাতীয় পরিচয়দানকারী হিসেবে মঙ্গোলদের কাছে তিনি জাতির পিতা হিসেবেই গৃহীত। যারা ছবিটি দেখেন নি, তারা এখনই দেখতে পারেন কারণ কাহিনীর সঙ্গে ছবির মেকিং-ও অসাধারণ করেছেন রাশান পরিচালক সের্গেই বদোরোভ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।