আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরুষতান্ত্রিকতার ধ্বজভঙ্গ সমাজতত্ত্বঃ “নারীর ইজ্জতই তার প্রধান সম্বল”



... সিনেমার ল্যাদল্যাদা দৃশ্য, মেয়েটি আরেকটু পর রেপড হবে, চিৎকার করে ভিলেনকে বারণ করছে ইজ্জত কেড়ে না নিতে। সাথে এও দোহাই দিচ্ছে যে তার ইজ্জত চলে গ্যালে আর কি বাকি রইল । ভিলেন ছাড়ার পাত্র না। অতঃপর রুপালী পর্দায় বজ্রপাতের দৃশ্য, বানের জলে পাড় ভেঙ্গে পরার দৃশ্য ... সব শেষ ... সবই গেলো। পরবর্তি দৃশ্যে মেয়েটা ছেড়া শাড়িতে ঘরে ফিরে, মায়ের বুকচেরা কান্না, এইটা কি হইলো রে এ এ ... তোর আর কি বাকি রইল রে এ এ এ ... পরের পরিচিত দৃশ্য, মেয়েটির বন্ধ করা ঘর ভেঙ্গে ঢুকে সবাই আবিস্কার করবে, মেয়েটি ফ্যানের সাথে ঝুলছে ... সিনেমা হল কেপে উঠবে মায়ের তীব্র চিৎকারে ... আবার বজ্রপাতের দৃশ্য, বান ভাঙ্গার দৃশ্য ... এবার সত্যি সব শেষ ... সবই গেলো।

... খালি সিনেমার কথা বললাম, এভাবে উপন্যাসে, থিলারে, দৈনিক পত্রিকা এমনকি ধর্মগ্রন্থের নায়িকা (চোখ কপালে ঊঠলে পড়ুন ধর্মগ্রন্থের কোন নারী চরিত্র) পর্যন্ত সবারই একমাত্র সম্বল তার ইজ্জত। কোন আপদ সময়ে ধর্ষনের স্বীকার হলেই তার সব শেষ। ... এবার আসি বাস্তবে, অভিসার স্পট ধানমন্ডি লেক ... জুলিয়েট কোন কারণে তার রোমিওর উপর খুশি, ওয়াদা করে বসে যে, সে তার চরম এবং পরম ধন ইজ্জত'কে শুধু রোমিওর কাছেই সপে দিবে। রোমিওর কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা এখানে মূখ্য নয়, তাই আলোচ্যও নয়। সমাজে একটা মেয়ে বড় হয় এটা শুনতে শুনতে যে, তার ইজ্জতই তার জীবনের একমাত্র চরম এবং পরম ধন ।

এটা ছাড়া তার ইহজগতে আর কোন মুল্য নেই । কি মা কি বাবা ... কি ভাই কি স্বামী সবাই তাকে দেবীর আসনেই রাখবো, যদি তার ইজ্জত ঠিক থাকে । ... এই যে মেয়েটার দুইটা হাত আছে, পা আছে, মাথা আছে ... লাখো ছেলেকে পেছনে ফেলে বোর্ডে স্ট্যান্ড করে ... লাখো মানুষকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে চাকরি পায় ... তার একমাত্র সম্বল তার ইজ্জত । আর কিছু নয় ... একবার যদি কোন ক্রমে কোন অনাকাঙ্খিত সময়ে অনাকাঙ্খিত পুরুষের অনাকাঙ্খিত অঙ্গটি মেয়েটির জগৎকাঙ্খিত অংশে প্রবেশ করে বসে তাহলেই সব শেষ ... সব গেলো । তার প্রতিভা, তার সাধনা, তার স্বপ্ন, তার লড়াই, তার আজীবন সকল অর্জন ... এই অনাকাঙ্খিত সময়ের অনাকাঙ্খিত পুরুষের অনাকাঙ্খিত অঙ্গটির মেয়েটির জগৎকাঙ্খিত অংশে প্রবেশে ... একেবারে ধুলায় মিশিয়ে গেলো সব।

... অপর দিকে একটি ছেলে যদি দুর্ঘটনাক্রমে এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হয় (মানে সোজা কথায় হোগামারা খায়) তো তার ক্ষেত্র একটূ হাসাহাসি , বন্ধুদের টিকাটিপ্পনি, মা-বাবার " আহারে আমার সোনার পোলাটা" ... এই শেষ ... কয়েকদিন পরেই সবাই ভুলে যাই ... মাঝে মাঝে হাসির খোরাক হয়ে গল্পটির পুনঃচর্চা ... ব্যাস এই শেষ। ... সমাজ পত্তনের প্রথম পর্বে যখন সামাজিক তত্ত্ব দিয়ে এর কাঠামো দাঁড় করানো হচ্ছিল বোধ করি তখন থেকেই ... এর নির্বাহী পুরুষ কর্তারা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই তত্ত্বটি ঢুকিয়ে দেয় যে ... নারীর সতীত্বই তার প্রধান অবলম্বন, সম্বল। ... খুব সম্ভব, নির্মল কুমারী যোনির প্রতি অমোঘ আকর্ষন আর তার স্বাদ নেয়ার লোভ থেকেই এই তত্ত্বের উদ্ভব। আর নিজের দুর্বল যৌনক্ষমতায় নারী যেন পরমুখি না হয়, সেই ভয় তো আছেই। ... উপরে যে সিনেমাটির দৃশ্য আপনারা দেখলেন তার নির্মাতা কারা, ভোক্তা কারা, ভুক্তভোগি কারা ? এখানে দয়া করে কেবল সিনেমাটিকেই ভাববেন না ... এই যে উপন্যাস, থ্রিলার, গল্প, কবিতা নাটক, ধর্মগ্রন্থের কাহিনি, ইতিহাসের পাতা, প্রাত্যহিক নারীর সাবধানতা অবলম্বন ... সব কিছু সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সমাজতত্ত্বেরই ধারাবাহিকতা।

মোরাল ঐ একটাই ,""তুমি নারী ... সতীত্বই তোমার প্রধান এবং পরম সম্পদ ... ইহাকে স্বেচ্ছায় অনিচ্ছায় নষ্ট করিলেই তুমি শেষ ... তোমার সব শেষ ...""

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।