আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলেজিয়েটের দিনগুলি... ছুডবেলার সেই প্রিয় স্কুল...(ইহাও একটি স্মৃতি তুমি বেদনা মূলক পোষ্ট )

ছাগু তোষণ নীতি নির্ভর মডারেশন প্রক্রিয়াকে ধিক্কার জানাই. ব্লগের এক কোনায় জেনোসাইড বাংলাদেশের লোগো ঝুলিয়ে ছাগু তোষণ নীতির নামে ভন্ডামি বন্ধ করুন... নইলে এই মডারেশন নীতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকার নাটক বন্ধ করুন.. ব্লগ পর্যবেক্ষনে, আপাতত শুধু কমেন্টাই..
শেষ যেইবার চট্টগ্রাম গেলাম (তাও প্রায় দুই বছর হয়ে গেলো ) তখন স্কুল কলেজ দুই জায়গাতেই যাওয়া হয়েছিলো... অনেকদিন পর হার্ড ডিস্কের ছবিগুলো গোছাতে গিয়ে স্কুলের অনেকগুলো ছবি চোখে পড়লো... আবার নস্টালজিকতা আর আরেকটি স্মৃতি তুমি বেদনা টাইপ পোষ্ট চট্গ্রাম কলেজিয়েট স্কুল... প্রথম পা দিয়েছিলাম ১৯৯৩ এর শেষে, আম্মার হাত ধরে ভর্তি ফরম কিনতে গিয়েছিলাম। ফরমের সাথে গেইট থেকে ভর্তি গাইড কিনে বিশাল স্কুল হেঁটে দেখতে দেখতে যে অদ্ভুত মুগ্ধতা আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো সেটা বোধকরি আজও কাটেনি... কি বিশাল স্কুল প্রাঙ্গণ, পুরানো যুগের সেই ইয়া মোটা মোটা দেয়ালের লাল দালান, বিশাল মাঠ, পুকুর, কোয়ার্টার, বাগান, হোস্টেল, মসজিদ -- কত কি... মসজিদের পেছনে ছিলো হাফিজ স্যারের বাসা, সন্ধ্যায় আব্বা উনার বাসায় নিয়ে গেলো ভর্তির কোচিং ক্লাসে ভর্তি করাতে সেই সময় হাফিজ স্যার মহা হিট, অ্যাডমিশন কোচিং করান এক মাসের কোর্সে তাতেও আবার ভাইভা দিতে হয়। আব্বা আর আব্বার এক কলিগ দুইজন দুজনের ছেলেকে নিয়ে গেলেন ভাইভা দেওয়াতে রাশভারী চোখে আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন অতীশ দীপংকর নিয়া কি কি জানো... আবার দুএকটা সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন আর তার পরেই লাইফের প্রথম ভাইভায় পাশ... আব্বার কলিগের পোলা অবশ্য পাশ করতে পারে নাই, তারে দিয়া কলেজিয়েটে পড়াশোনা হবে না এমন ডায়লগ দিয়া ভাগায় দেওয়া হইলো হাফিজ স্যারের সেই এক মাসের কোচিং এ হাউকাউ, ঝাড়ি বকা আর পেয়ারা গাছের ডালের বাড়ি ছাড়া আর তেমন কিছু হয়েছে বলে মনে পড়ে না। তবে বন্ধু পেয়েছিলাম দুতিন জন.. এমন বন্ধু যাদের সাথে এখনও যোগাযোগ হয়... আবার এমন বন্ধু যাকে হারিয়ে ফেলি, ফেসবুক, হাই ফাইভ কোথাও না পেয়ে অনেক মন খারাপ হয় এখনও... কিন্ডারগার্ডেন জীবনে টিচারের মার বলতে স্রেফ কানমলা কিংবা রুলার দিয়ে দু একটা বাড়ি -- এতটুকুই বুঝতাম... হাফিজ স্যারের বাসায় পড়তে গিয়ে একদিন এক ছেলে পাশের ছেলের থেকে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ার পরে দেখলাম মাইর কাহাকে বলে... বাসার পাশের পেয়ারা গাছ থেকে ডাল ভেঙ্গে এনে বেচারারে যে মাইর টা দিলো, বাপ মা পরদিন থেকে আর পাঠানোর দূ:সাহস করেনি তো এভাবেই কেমনে কেমনে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফেললাম, হাফিজ স্যারের বাসায় রিভিউ ছিলো সন্ধ্যায়, আমার কাছে কি কি লিখেছি শুনে নিয়ে মাথা মুথা নেড়ে বললো ভর্তি হবার চান্স তেমন একটা নাকি নাই রেজাল্ট দিলো... উনার সকল আশংকায় পানি পুনি ঢেলে রেজাল্টে ডে-শিফটে টিকে গেলাম, বি-সেকশন... ইস্পাহানিতেও হয়েছিলো তয় ভাইভার দিনে আব্বার বসে কয় কলেজিয়েটের নাকি স্ট্যাটাসই আলাদা, আর তা শুনে আব্বা ধেই ধেই করে লাফাতে লাফাতে ইস্পাহানি বাদ দিয়ে কলেজিয়েটেই ঢোকালো.... শুরু হলো প্রচন্ড মজার পাঁচটা বছর... স্কুল জীবনে হাজারটা মজার স্মৃতি, চারণ করতে বসলে শেষ হবে কিনা জানি না... প্রথম দিনের ক্লাসের ঘটনাটা বলি... আমার ছোটো ভাই তখন ক্লাস টু তে পড়ে... হাফিজ স্যারের কোচিং এর সুবাদে শেষ এক মাস ওরও কলেজিয়েট টু বাসা জার্নি কম হয় নি... সে আবার আম্মার নেওটা, মা ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না... তো ইয়া বড় ক্লাস রুমে আম্মা আমাকে প্রথম দিনের সিটিং অ্যারেন্জম্যান্ট দেখতে ঢুকলো, পিচ্চিরে বাইরে এক আন্টির জিম্মায় দেওয়া... আমাকে বসিয়ে বাইরে গিয়ে দেখে পিচ্চি হাওয়া... এই ক্লাসরুম, ঐ ক্লাসরুম খুঁজে দেখা হলো কোথাও নেই... আমার তো ক্লাসের বারোটা বাজছে, পুরা মাঠ ঘাট দৌড়ে বেরাচ্ছি কোথাও ছোট ভাইটা নেই... পরিচিত আন্টিরা খুঁজছে, পিয়ন, ল্যাবের মামারা সবাই খুঁজছে... আম্মার দৌড়াতে দৌড়াতে শাড়ি ছিঁড়ে গেছে, কোনো হুঁস নেই... আব্বাকে খবর দেওয়া হলো, মাইকিং করার চিন্তাভাবনা শুরু, আব্বা গেছে পুলিশের কাছে ---- সব মিলিয়ে ভয়াবহ পরিবেশ। এর মাঝে আব্বা গাড়ি দিয়ে আমাকে পাঠালো বাসা থেকে ছবি আনতে, তিনতলার মাঝে আড়াই তলা পৌছেই সিঁড়িতে দেখি ছোট ছোট দুটি পা... ইস পিচ্চি দেখি বাসার দরজার সামনে.... জানি না আল্লাহর কোন রহমতে আইসফ্যাক্টরী থেকে মাদারবাড়ী হয়ে এই এতো এতো ট্রাকের ভীড় ঠেলে হাঁটতে হাঁটতে এতটুকুন ছেলে কিভাবে পাঠানটুলী এসে পৌঁছলো !!!!! তবে গাড়ি থেকে যখন ওকে নামালাম স্কুলের সামনে, মা-ছেলের রি-ইউনিয়ন দেখে চোখে পানি ফেলে নাই এমন মানুষ ওখানে কমই ছিলো মাঝখান থেকে আমি হিট হয়ে গেলাম, সবাই চিনে ফেললো ঐ যে ছেলেটা যার ভাই হারিয়ে গিয়েছিলো... বিশ্বাস করবেন না চটপটির মইন ভাই কিংবা ঝালমুড়িওলা এই চার পাঁচ বছর আগেও আমাকে ঐভাবেই মনে রেখেছে.... ক্লাস সিক্সের ক্লাস টিচার ছিলো আফসার স্যার... চমৎকার মানুষ খালি একটাই সমস্যা সেটা হলো হাতের তিন আন্গুলের মাঝে কলম ঢুকিয়ে ভয়াবহ শাস্তি ছিলো উনার ট্রেডমার্ক তবে খুব একটা যে ফেস করতে হয়নি এটাই সান্তনা। সেভেন এ পিটি ক্লাস নেওয়া ওয়াহিদ স্যার, এইট এ বৈদ্য স্যার, নাইন এ কাদের স্যার টেন এ আবার বৈদ্য স্যার... ক্লাস টিচারদের কথা খুব বেশী মনে পড়ে। কত স্যারদের কথা মনে পড়ে, সবার আলাদা আলাদা ট্রেডমার্ক ছিলো... আলাদা ডায়লগ , আলাদা মাইরের স্টাইল আলাদা ডাকনাম দুই মতিন স্যার, আজিজ স্যার, রুমি আপা, ধর্মের হুজুর স্যার, আহমেদুল্লাহ স্যার আর অবশ্যই দুই গ্রেট ম্যাথের জহির স্যার আর ইংরেজির বোরহান স্যার... এদের এক এক জনের গল্প, মারের স্টাইল, পড়ানোর সময়কার কত মজার কথা - এক একটা আলাদা পোষ্টই লাগবে... জহির স্যারের বিখ্যাত থাপ্পর সাথে ফ্রী টেনে চুল ছিঁড়ে ফেলা, কাদের স্যারে সেভেন ইন ওয়ান বেত, বৈদ্য স্যারের ডাস্টার মাইর -- এইসব নিয়েই হয়তো একটা স্বতন্ত্র পোষ্টে দিবো পরের পর্বে... অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে এই পর্ব, কি করবো কোনটা রেখে কোনটা যে বলি... আরবীর হুজুর স্যারের কথাই বলি... পাতা গুনে নাম্বার দিতেন, একবার পরিচ্ছন্নতা চাপ্টারের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বিষয়ক এক প্রশ্নে এক ছেলে লিখলো -- " আল্লাহ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন, উনি এতো পছন্দ করেন যে সবাইকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে বলেন, সবাই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করে। আল্লাহও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন, উনি এতো পছন্দ করেন .... " এই এক কথা ঘুরায় ফিরায় দুই পাতা ভর্তি করা... তাতেও ছয় না সাত দিয়েছেন দশে ভাগ্যিস আমাদের সময় আরবী সরিয়ে কৃষি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিলো, নাইলে উনার মাইরের হাত থেকে কোনো রেহাই ছিলো না... উনার অনেক মজার মজার ডায়লগ ছিলো, সব ই সামুর নীতিমালায় সেন্সরড তাই আর বেশী লিখলাম না কলেজিয়েটের খুব কাছে ছিলো মেলোডি হল এক টিকেটে কি জানি দুটা ছবি দেখানো হতো একবার হটাৎ ক্লাসে হুজুর এক ছেলেকে দাঁড়া করায় বলে ঐ বেটা কাইল স্কুল ফাঁকি দিয়া মেলডিতে কেন গেছিলি? ছেলের সরল উত্তর - স্যার আমি নাহয় গেছিলাম কিন্তু আপনি জানলেন কেমনে, আপনে ঐ হলে কি করেন হা হা হা হা কলেজিয়েট লাইফের সবচেয়ে মজার একটা পার্ট বোধহয় ফাঁকি দিয়ে ক্লাস পালানো... আবার অনেক দু:সাহসী ছেলে কোনো এক ফাঁকে হেডস্যারের রুমের সামনে ঝুলানো হাতুড়ি ঘন্টার সামনে দিয়ে টিং টিং টিং ছুটির ঘন্টা বাজিয়েই দৌড়... আর একবার ঘন্টা বাজলে পোলাপাইনরে কি আর আটকায় রাখন যায় নানান কিসিমের ছেলেরা পড়তো এইখানে... কি এমপি মিনিষ্টারের ছেলে কি স্কুলের পিয়নের ছেলে... কেউ বিশাল গুড বয়, কেউ মুখচোরা আবার কেউ বিড়াট বদের হাড্ডি.... তবে ক্লাস টেন পাশ করতে করতে বোধহয় সবাই কমবেশী বদের হাড্ডি হয়ে যেতো, কি আর করা চারপাশে এতো বান্দর পোলাপাইন থাকলে যা হয় আরকি... ম্যাথের দিপু স্যার ছিলেন বিরাট কমেডি... নির্মমতার জন্য বিখ্যাত এক লোক... একবার হোম ওয়ার্ক পুরা করি নাই দেখে আমাগো একগাদা পোলাপাইনরে কানধরে দাঁড়া করালো... এর মাঝে একজন ছিলো নন্দ কিশোর... সেই বেচারা হোম ওয়ার্ক আনতেই ভুলে গেছে... তো ওর শাস্তি হলো ওর মতোই আরেক ভুলে যাওয়া পাবলিকের সাথে একজন আরেক জনের কান ধরবে... নন্দ হলো ঘাড় তেঁড়া পাবলিক, সে অন্যকে কান ধরতে দিবে না... আমি চুপচাপ নিজের কান ধরে সাইডে দাড়াঁয় আছি হটাৎ দিপু সার লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে নেমে নন্দের উপর চড়, থাপ্পর, কিল ঘুষি চালানো শুরু করে দিলেন... মারতে মারতে বেচারার অজ্ঞান হবে দশা যখন তখন থামলেন... খুব খারাপ লেগেছিলো ঐদিন... এই দিপু স্যার আর উনার বিখ্যাত সাইকেল দুটোরই পোলাপাইনের হাতে অপদস্ত হবার গল্পও কিন্তু কম নাই এতোক্ষন হয়তো টিচারদের অনেক বদনাম করলাম.... তবে সত্যি কথা কি উনারা আমাদের এতো আপন ভাবতেন সেটা বুঝেছি এই এতোদিন পরে... এইতো শেষ বার অনেক টিচারের সাথে দেখা হলো -- বোরহান স্যার, আফসার স্যার... কাউকে এই আট দশ বছর পরেও নাম মনে করায় দিতে হয়নি কিন্তু... পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে বুকে টেনে নিয়েছে সবাই, কেউ কেউ এখনো কান টেনে দিয়েছে.... ইস চোখে পানি এসে গেলো যে আবার... যান্ত্রিক এই জীবনটাতে সেই পূরানো দিনগুলোকে কত যে মিস করি স্কুলটা অনেক বদলে গেছে এখন... ল্যাবের চারপাশে দেয়াল ঘেরা (এটা অবশ্য আমাদের শেষের দিকগুলোতে হয়েছিলো), নতুন মেইন গেট, মইন ভাই এর চটপটির দোকান, বুড়ো হয়ে যাওয়া পুরানো সব স্যারেরা... কিন্তু সেই মাঠ, সেই লাল দেয়াল, সেই কোয়ার্টার, সেই পথগুলো --- ভুলতে চাইলেও কি ভুলতে পারবে কেউ কখনো... খুব প্রিয় সেই কলেজিয়েট স্কুলটাকে অনেক মিস করি যে পরের পর্বে দেখা হবে....
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।