আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেনারেল মশহুদ ও দুই কমিশনারকে গ্রেপ্তার করে কমিটির সামনে হাজির করার আর্জি

ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছে ধর্ম নিরাপদ না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ীদের কাছে দেশ নিরাপদ না। নাস্তিকেরা মৌলবাদীদের থেকে উন্নত মানুষ না।
স্পিকার বরাবর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চিঠি কাজী সোহাগ: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান লে. জে. (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী ও কমিশনের বর্তমান দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে হাজির করার জন্য স্পিকারের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত রোববার পাঠানো সরকারি প্রতিষ্ঠানবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তিনজনকে আইন লঙ্ঘনসহ সুনির্দিষ্ট চার অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে পুলিশের সহায়তায় সংসদের সার্জেন্ট এ্যাট আর্মসের মাধ্যমে কমিটির বৈঠকে হাজির করতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে বলা হয়েছে, এর আগে তারা কমিটির বৈঠকে হাজির না হয়ে আইন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পথে বেহুদা হস্তক্ষেপের সৃষ্টি করেছেন। এটা বিশেষ ক্ষমতা আইনে গর্হিত বা প্রেজুডিশিয়াল কর্ম হিসেবে দণ্ডনীয়। সংসদীয় কমিটির চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সিনেট বা কংগ্রেসনাল কমিটি, ভারতের লোকসভার নজির টেনে বলা হয়েছে, সংসদ অবমাননার জন্য জেলে পাঠানোর উদাহরণ সংসদের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিফলক। এতে দুদক কোন সাংবিধানিক বা বিচারিক প্রতিষ্ঠান নয় বলে উল্লেখ করে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, তলবের পরও তারা বৈঠকে হাজির না হলে সংসদ বা এর কোন কমিটি প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী সংস্থা বা বিভাগের তত্ত্বাবধান করতে পারবে না। এতে সংসদীয় গণতন্ত্রের মৌল নীতি ও প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীদের কর্তব্যের মৌল সূত্র লঙ্ঘিত হবে।

হাসান মশহুদ চৌধুরী ছাড়াও অন্য যে দু’জনকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে হাজির করতে বলা হয়েছে তারা হলেন, দুদকের দুই কমিশনার হাবিবুর রহমান ও আবুল হাসান মনযুর মান্নান। কমিশনের সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেন নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় তাকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা করা হয়েছে। স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদকে কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের স্বাক্ষরিত পাঠানো চিঠিতে ওই তিন কর্মকর্তার অপরাধ ও এর আইনানুগ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সংসদের মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব ও কর্মক্ষমতা প্রতিরক্ষণের প্রয়োজনে তাদের কমিটির বৈঠকে হাজির করানো অপরিহার্য। ঢাকার পুলিশ কমিশনারের সহায়তায় স্বশরীরে উপস্থিত করার জন্য সংসদের সার্জেন্ট এ্যাট আর্মসকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া আইন, লক্ষ্য ও কর্মানুগ হবে বলে কমিটির সদস্যরা মনে করেন।

তলবের পর এভাবে অনুপস্থিত থাকলে সংসদ বা এর কোন কমিটি তার ওপর প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী সংস্থা বা বিভাগের ওপর সংবিধান অনুগামী তত্ত্বাবধান বলবৎ করতে সক্ষম হবে না। এতে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার জন মালিকানার সাংবিধানিক প্রত্যয় ও সংসদীয় গণতন্ত্রের মৌল নীতি এবং বর্তিত নাগরিক ও প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীদের কর্তব্যের মৌল সূত্র লঙ্ঘিত হবে। ১২ই এপ্রিল কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য দুদক কর্মকর্তাদের চিঠি দিলে তারা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মুখোমুখি হতে অপারগতা জানান। আনুষ্ঠানিক চিঠিতে তারা বলেন, দুদক আইন ২০০৪-এর বিধি-বিধান মতে বৈঠকে উপস্থিত হতে কমিশনের সদস্যরা অপারগতা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছিলেন ওই বৈঠকের জন্য কমিটির কাছে কোন কার্যপত্রও পাঠায়নি দুদক।

পরে কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর দুর্নীতি দমন কমিশন ও এর সাবেক চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরীসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন ও সংসদ অবমাননার অভিযোগ আনেন। তিনজনের চার অপরাধ দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান দুই সদস্য সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে চার ধরনের অপরাধ করেছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, আইন লঙ্ঘন, সংসদীয় কমিটিসহ সংসদের কাজে ব্যত্যয় ও বাধা তৈরি, সংসদীয় কমিটির সদস্যসহ সকল এমপি’র অধিকার ক্ষুণœ এবং সংসদীয় কমিটিসহ সংসদকে অবমাননা করা। চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিটির কাছে জবাবদিহির বিষয়ে আইনমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রী এরই মধ্যে সুস্পষ্ট মতামত দিয়েছেন। এছাড়া, দেশের প্রখ্যাত আইনজীবীরা বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় তাদের আলোচনায় সমর্থন করেছেন।

তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, মওদুদ আহমদ, নাজমুল হুদা, আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, শাহদীন মালিক, এম জহির প্রমুখ। এছাড়া, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারও সংসদীয় কমিটির কাছে তাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বলে মত দিয়েছেন। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, শুধু দুদকের নিযুক্ত দুই আইনজীবী এডভোকেট আনিসুল হক ও খোরশেদ আলম ভিন্ন মত দিয়েছেন। দুদকের দায়ের করা মামলার বিষয় ছাড়া আদালতের বাইরে তাদের এরকম মত দেয়ার কোন পরিধি বা অবকাশ নেই বলে কমিটি মনে করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেও তলব, গ্রেপ্তারের উদাহরণ চিঠিতে কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, সংসদীয় রীতি ও নীতির ঐতিহ্য বা প্রয়োগ অনুযায়ী সংসদ বা সংসদের পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংসদীয় কমিটি যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তার সামনে উপস্থিত ও ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য করতে পারে এবং প্রয়োজনে করে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সিনেট বা কংগ্রেসনাল কমিটির সামনে ওই দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ও বিল ক্লিনটনের উপস্থিত হওয়ার ব্যাখ্যা দেয়া, ভারতের লোকসভায় ইন্দিরা গান্ধীকে গ্রেপ্তার করা এবং সংসদ অবমাননার জন্য জেলে পাঠানোর উদাহরণ সংসদীয় পদ্ধতি অনুযায়ী সংসদের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিফলক ও পূর্ব দৃষ্টান্ত। এছাড়া, এ দেশে আশির দশকের শেষ ভাগে তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যানের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর উদ্যোগ এবং তখনকার পিডিবি’র চেয়ারম্যানের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার বিবেচনায় তা প্রত্যাহার করা হয়। দুদক সংসদীয় বা বিচারিক প্রতিষ্ঠান নয়, সংসদ নিয়ন্ত্রিত দুদক কর্মকর্তাদের আইনি ব্যাখ্যার বিপরীতে সংসদীয় কমিটি লিখিতভাবে স্পিকারকে নয়টি আইনি ব্যাখ্যা জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের তিনটি অঙ্গ সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ। তবে দুদক সংসদীয় বা বিচারিক প্রতিষ্ঠান নয় বলে সেটি প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী বিভাগের আওতায় আইনের মাধ্যমে সংসদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান।

এই প্রতিষ্ঠানের ব্যয় দায়মুক্ত বা চার্জড ব্যয় নয়। সংবিধানের ৮৯ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এর প্রতি শিরোনামের ব্যয় সংসদে অনুমোদন করাতে হয়। ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সংসদ এর সকল প্রস্তাবিত কার্যক্রম অনুমোদন করে থাকে। এই অনুমোদন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছে কিনা তা পরীক্ষা করার পূর্ণ সাংবিধানিক অধিকার সংসদ এবং সংসদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির আছে। ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, দুদক আইনের ১৬ (৪) ধারা অনুযায়ী কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলী, প্রেসিডেন্ট বা সংবিধানের ৪৮ (৩) ও ৫৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নির্ধারণীয় এবং অনুরূপভাবে নির্ধারিত হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক অনুমোদনীয় আদেশ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত।

এই প্রক্রিয়ায় দুদকের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতার দাবি অযৌক্তিক ও প্রত্যাখ্যানীয়। আট নম্বর আইনি ব্যাখ্যায় বলা হয়, দণ্ডবিধির ২১ ধারা অনুযায়ী দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জনসেবক। দণ্ডবিধির ১০ অনুচ্ছেদে দেয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী আইনানুগ কর্তৃপক্ষের আইন অনুগামী নির্দেশ সকল জনসেবকগণ মানতে বাধ্য। এই ক্ষেত্রে আইনানুগ কর্তৃপক্ষ হলো সংসদ বা সংসদীয় কমিটি। এই সংসদীয় কমিটির নির্দেশ মানতে দুদকের চেয়ারম্যান, কমিশনার ও সচিব মানতে বাধ্য।

এ প্রসঙ্গে দণ্ডবিধির ১৭৭, ১৭৮, ২১১ ও ২২০ ধারা অনুধাবনীয় ও অনুসরণীয়। নয় নম্বর আইনে বলা হয়েছে, দুদক আইনের ১০ (৩০) ধারা অনুযায়ী দুদকের কমিশনাররা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যে কারণে ও পদ্ধতিকে অপসারণীয় সেই কারণের জন্য ও পদ্ধতি অনুযায়ী অপসারিতব্য। এই বিধান দুদকের চেয়ারম্যান বা কমিশনারদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের মর্যাদা বা এখতিয়ার দেয়নি। কোন বিবেচনায় তারা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নন। দুদক কর্মকর্তাদের আইনি ব্যাখ্যা চিঠিতে দুদকের কর্মকর্তারা কমিটির বৈঠকের অনুপস্থিত হওয়ার কারণ হিসেবে তিনটি আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এগুলো হচ্ছে দুদক আইনের ৩(২) ধারা অনুযায়ী তারা একটি স্বাধীন, স্বশাসিত ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। দুদক আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী দুদকের কমিশনারবৃন্দ ওই আইনের আওতায় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ৩য় তফসিলে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটির আওতাভুক্ত সংগঠন হিসেবে দুদক অনুল্লেখিত। http://www.manabzamin.net/lead-01.htm
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.