কতো কী করার আছে বাকি..................
'আমরা যাব না ।
যে জীবন জীর্ণ হয়, ক্ষীণ হয়
জরা- মৃত্যু- ক্ষুধার অধীন;
বিস্মৃতির শব্দঘন কোলাহলে
আমরা যাব না । '
১২ ই জানুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৫:৪৫
ব্লগে তনুজার প্রথম কবিতা। আবেগের জোয়ার থাকেই তার কবিতায়-লেখনিতে। স্বচ্ছও থাকতে চান তার পাঠকের কাছে।
১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:০২-জানালেন তার শারিরিক অবস্থানের কথা।
'হ্যালিফ্যাক্স নামটার মধ্যেই কেমন একটা বন্দর ভাব আছে; সমুদ্রের পাড়, লাইট হাউস, পূর্বদ্বারের পতাকা হাতে যেন দাঁড়িয়ে আছে বিপুলা কানাডার শুরুতে । তো এখানে আসতে হয়েছে কাজের তাগিদে। পাঠক, কানাডা শুনে অমনি ভেবে নেবেন না বিশাল কামাচ্ছি। সত্যি, কোনক্রমে পেটেভাতে একটা পিএইচডির বন্দোবস্ত।
'
এ যেন দূর দেশ ঘুরে আসা মুসাফিরের গল্প বলে যাওয়া। লেখনি যখন কথ্য হয়ে ওঠে তখন বুঝতে হবে লেখক আসলেই লিখেন-পাঠকের জন্যেই লিখেন। তনুজার ভেতরেই লেখনিটা আছে। তার নামটা বাদ দিয়ে অতলান্তিক পাড়ের পর্বগুলো পড়ে দেখুন, আপনাকে ভাবতেই হবে এটা কোন জনপ্রিয় সাহিত্যিকের লিখা। অতলান্তিক তিন পড়েতো মনেই হয়েছে আমি লিখাটা আগেও পড়েছি।
অনেকটাই মুজতবা আলির ধাঁচ। সাথে আবার সুকুমার রায়-সুকুমার রায়কে ফুটিয়ে তুলতে হলে যে হিউমার লাগে তাই আছে তার লিখাটায়-সমস্ত জুড়েই চাপিয়ে রাখা হাসির দমক। এই লিখার একটু অংশ তুলে দেই-
''হর্ষকামে'র প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল এরা অতিশয় নির্বোধ। স্থান- কাল- পাত্রের বিবেচনা বলতে কিচ্ছুটি নেই। জীবনের জটিল নাট্যমঞ্চে এরা ডায়লগ ভুলে হাসে, কোরাসের মধ্যে তাল কেটে হাসে ও হাসায়।
মাঝরাস্তায় চটি খুইয়ে সেই একই ব্যাপার, এমনকি লাস্টবাস মিস করে সিএনজি দর করতে গিয়েও পুলকিত। '
তনুজা নিজেও তাই-কারণ তিনি কবিতা আর লিখা ভালোবাসেন, ভালোবাসন দেশ আর তার লেখক-কে। হর্ষকামের ভাবেই-নির্লজ্জের মতো। এ তার ঘোষণা থেকেই জানা যায়- 'হৃদয় এ বাউল বটে, জাতে নাস্তিক সনাতন বঙ্গজন খোলসে বৈশ্বিক। ' নিজেকে নাস্তিক এবং বাঙালি বলছেন-বলছেন বাম পন্থার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কথা।
আড়ালতো তিনি রাখেন নি। এটাই কি একজন ব্লগারের নৈতিকতা নয়। তার কমেন্ট যারা পেয়েছেন তারাই জানেন। ব্লগে তিনি আড্ডা দিয়ে যাচ্ছেন-অনেক রাত পর্যন্ত। এই সংস্কৃতিটা কয়জন তৈরি করতে পেরেছেন।
নোঙ্গর ছেঁড়ার একটি পোস্টে তিনি ঘোষণা দিচ্ছেন- 'কারন, অধিকার আদায়ের সংগ্রাম কখনো মরে না। ' এ তার বোধ-ব্লগে তার এই পরিচয় সবার জানা। দীর্ঘদিন আন ব্যান হাসিব তার মুখচ্ছবি হয়ে ঝুলে ছিল। একে মর্যাদা দেয়ার মতো সংস্কৃতি কর্তৃপক্ষের নেই। তাতে নিজেকে, কবিতাকে ভুলে যাওয়র মানুষ তনুজা নন।
কখানো মে দিবস কখনো রবীন্দ্রনাথ হয়ে তার ছবি ব্লগের পরদায় ঘোরাফেরা করেছে। পাহাড়-সমতল-নারী-শিক্ষা সমস্ত বিষয়েই তার মনোযোগ আবং শুভাকাঙ্ক্ষার পরিচয় ব্লগ অন্তত পেয়েছে। ফলে তার যে কোন লিখাই অনেকের পাঠ্য হয়ে ওঠে-এবং তার ব্লগই স্বস্থ্য এক আড্ডার স্থান হয়ে আছে। সেখানে জড়িয়ে থাকা তার আবেগ-ভালোবাসাকে বিকৃত করা অবক্ষয়ী মানসিকতারই পরিচয়।
তার প্রতিবাদ কবিতায় আছে-
'জাননা বিদ্যার দেশে মূর্খেরা স্বয়ং বিপদ'
কোন বিদ্যার দেশের কথা বলছেন তিনি।
নিজের নাকি কানাডার জানি না। তবে তিনি নিজেই নিজের সমালোচক ছিলেন-সুকুমার রায় পছন্দ করেন যে। ওই কবিতাতেই লিখছেন-
'রেসের বাঁশির পর
উল্টোপথে চলেছে যে ঘোড়া
তিরস্কার কাঁধে নিয়ে ...
আমি তার নিরস্ত্র সওয়ার'
ব্লগে তাকে নিয়ে বিরুপ মনোভাবের পরিচয় পাওয়র পর বারবার মনে পড়েছে এই বাক্যগুলো। যারা তার সমালোচক হয়ে উঠেছেন তারাই পড়ুন বারবার করে তার কবিতাগুলো। জীবনবোধই আলোচ্য বিষয়-নোংরামির সংস্কৃতি কখনোই প্রতিষ্ঠা পায় না।
কাব্য কবিতায় তাদেরই তিনি বিদ্রুপ করছেন-
এখন একটা দারুণ অনুকূল
বাতাস আছে 'যেমন খুশি সাজ'
প্রাণবাঁচানো ফরজ আছে তাই
কুসুম কুসুম রাস্তা দিয়ে হাঁট
তনুজা তার ভেতরে একজন চিত্রকরও বটে। কবিতায় আর গদ্যে তিনি চিত্রই এঁকে যান। কবিতা নামক কবিতাটি পড়ে দেখুন, অসাধারণ চিত্রকল্প। আমি অভিভূত-
বললে 'কবিতা বলো'
বললাম 'ধানক্ষেত'
যতদূর যেতে পারো পুরোটা তোমার
সবুজ সবুজ ওম
ভাঙ্গা আল
ঘাসফড়িং এর নাচ
সুনসান....
বিমনা বাতাস
ভাবতে থাকি নিজের মনে চিত্র সাজাই। তার কবিতা-গদ্য পড়ে আমার মনে হয়-
আমি তো শব্দের কাছে দাঁড়িয়েছি বারবার
নতজানু
ভিখারির মত (তোমাকে উপেক্ষা করি)
সোমেশ্বরী আমার সবচেয়ে প্রিয় নদী, দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম।
স্বচ্ছ টলটলে জল। অথচ এর দুকূলে কতো মানবিক হিংসা-রক্ত-কদর্যতা, সোমেশ্বরীর অতীত গত কোন স্রোতে মিশে থাকা রক্ত-কিছুই সে যেন মনে রাখে না। বয়েই চলে। দুকূলে জল বিলিয়ে যায়। হাজং-মান্দিদের দেবতা বাস করে ওই সোমেশ্বরীতে-কবিতা গান উঠে আসে সোমেশ্বরীর কুলকুল ধ্বণী থেকে।
বয়ে যাওয়া জলধারা যেন তনুজার এই কবিতা-ই বলে যায়-
ঘোর অবেলায় অবুঝ চড়ুই- চঞ্চলতার
ভুল হলে হোক
কাঠ গোলাপের ছন্দদোলায়
রক্ত জুড়ে মত্ত আবেগ
বধির হবার
বিলাসিতায়
সত্যটুকু নীরব থাকুক
যাই বল না, যাই বল না
দুয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছি
(যাই বল না, ৩১ শে মে, ২০০৯ রাত ১২:৩৪)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।