আমার ব্লগে কেউ আসে না :(
ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। চিপা অন্ধকার গলিটার মুখে দাড়িয়ে কয়েকটা কালো কুকুরের দল বৃষ্টোৎসবে গড়গড় করছিল। র্যাশ অনেকক্ষণ ধরেই তার গালের খোচাখোচা দাড়িগুলা বিভৎসভাবে চুলকাচ্ছিল, এখন কুকুরগুলোর দিকে তাকিয়ে গালি দিয়ে বলল, "শ্লার'র কুত্তারা বৃষ্টির মইদ্যে ****** লাগাইছে। "
আমি বিশেষ কিছু বললাম না। র্যাশের কথাবার্তা বদলানোর অনেক চেষ্টা করছি, লাভ হচ্ছেনা।
কয়লা ধুলে ময়লা যায়না একটা কথা আছে না- সেইরকম অনেকটা। সিস্টেম গোড়া থেকেই বদলানোর জন্য আমি ও'র নামটাই চেন্জ করে দিয়েছি- রুস্তম থেকে র্যাশ- নামে নাকি মানুষের গেটাপ লুকআপ সবই চেন্জ হয়ে যায়- শুধু হয়নি এই রুস্তমের বেলায়। নতুন নামটা তার পছন্দ হয়নাই। প্রথম প্রথম এই নামে ডাকলে ভান ধরত শোনে নাই, পরে যেদিন গলাটা ধইরা জায়গা মত পোচ দিলাম একটা ঐদিন থেকে ঠিক হয়ে গেছে। র্যাশের র শোনার আগেই বলে জ্বি ওস্তাদ।
মানুষ বড়ই বিচিত্র- যে ভয় একবার রক্তে ঢুকে যায় সেটা'র ভীতি সহজে কেটে ওঠে না।
রুস্তমের অশল্লীল গালিতে যে আমি বিরক্ত হয়েছি, সেটা ওকে বোঝানো দরকার। আমি বরই আলসে প্রকৃতির মানুষ- এক জিনিস দু'বার করতে ইচ্ছে হয়না। এখন যদি আমি রুস্তমরে একটা কষে গাল লাগাই, সে বরং খুশিই হবে। গালাগালি-৪০৪ নামের কোনো বিএসসি কোর্স থাকলে রুস্তম সেটাতে কম করে হলেও এ-গ্রেড পেত কোন সন্দেহ নেই।
কাজেই গালিতে কাজ হবে না। কি করা যায়? নতুন বোতলটা ঠাস করে খোলা যায়- যাতে ছিপিটা ওর জায়গামত গিয়ে লাগে। এটা করা যেতে পারে- লিস্টে রেখে দিলাম। তবে এই মুহুর্তে আরো ইফেকটিভ কিছু করার ইচ্ছে করছে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।
বৃষ্টি ধরে আসছে। টেবিলের ওপর মোবাইলটার দিকে তাকালাম- এখনো নিথর ওটা। সময়টা জানা দরকার- হাথঘড়ির দিকে তাকিয়ে মেজাজটা তিরিক্ষ হলো- মানুষের সময়জ্ঞানের ওপর। আর পাচ মিনিটে মধ্যে যদি না আসে, নাই। সময় মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করেনা, করলে দুনিয়ার চেহারাটা বদলে যেত।
বোতলটা স্বভাবিকভাবেই খুলে গ্লাসে ঢালতে লাগলাম। বোতল খোলার শব্দে র্যাশ সচকিত হলো, লোভীর মত তাকালো গ্লাসের দিকে।
ওস্তাদ আইজকা জমবো বেশি। বৃষ্টি পড়তাছে, রাইত ঠান্ডা থাকবো, আইজকার রাইত কোপানির লাইগা তুলনা নাই - বলে হলুদ দাতগুলা বের করে হাসতে লাগলো। ইতরটার বাড় বাড়ছে অনেক, সে অনেক সময়ই চেষ্টা করেছে এইসবে আমার আগ্রহ জাগিয়ে তোলার- যেমন ওর ভাষায় "কোপানি"।
যদিও ও জানে আমার কোপানি শুধু নির্দিষ্ট তালিকা'র মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আরেক পেগের পরেই অবশ্য ক্লায়েন্ট এসে গেল। চেয়ারের ওপর থেকে পা টা সড়িয়ে নিলাম যাতে ওরা বসতে পারে। বিরক্ত হবার ভঙ্গীতে বললাম, দুইজন যে আসবে সেটাতো বলেননাই।
যে দুজন এসেছে তাদের মধ্যে একজন রীতিমত সৌম্য চেহারার- আমি কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছিলাম না।
আজকের যুগের ভণ্ডামীর স্রোতে পরে অবশ্য সবাই মুখোশধারী। যে লোকটা সুট বুট পরে ভদ্র হয়ে এসেছে, সে হয়ত বাসা থেকে বেড়োনোর সময় তার আদুরে বাচ্চা গলা ধরে তাড়াতাড়ি আসার জন্য বলে দিয়েছে। আর এখন হয়তো এই বাবা'র প্রস্তাব হবে আরেক বাবার বাড়ি ফেরা চিরদিনের জন্য ঘুচিয়ে দেবার।
ভদ্রলোকটার চেলা- সেরকমই মনে হয় চেহারা সুরতে- চেয়ারটা টেনে "ভদ্রলোকের" বসার জায়গা করে দিল। ভদ্রলোক গলা খাকরে শুরু করতে যাচ্ছিল, আমি আসলে...।
আমি থামিয়ে দিলাম। বোতলটা পাশে সড়িয়ে বললাম, কত?
ভদ্রলোক একটু আহত হলো মনে হল, তারপর থেমে বললো, পাচ।
আমি গ্লাস ঠেলে দিয়ে বোতলটা থেকে আরেক ঢোক ঢেলে জানলা দিয়ে বাইরা তাকালাম, আর ওরা আমার এই আচরনে পুরাই বেকুব হয়ে গেল মনে হল। র্যাশ গলা খাকড়ে বলল, ওস্তাদের সাত এডভান্স। কাম "ফিনিশের" পর আরো দুই দিবার লাগবো।
ভদ্রলোক আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে বললো, রেটটা বেশি হয়ে যাচ্ছে। আপনার মনে হয় আমার বস সম্পর্কে ধারণা নেই। ওনার হয়ে কাজ করবেন, বস আপনাকে খুশি করে দেবে। যেকোনো সময় প্যাচে পড়.....
আমি রুস্তমের দিকে ফিরে বললাম, র্যাশ, বলাকায় কার ছবতেছে খবর লইছস? র্যাশ দাত বেড়ে করে কয়েকটা নাম বলল, যা আমার পেটের ভেতরের সদ্য ঢালা তরলগুলো মুখদিয়া বের করে দেবার ইচ্ছা জাগালো।
লোকটা উঠে পড়তে পড়তে বলল, আপনি আগ্রহী হলে আমাকে আবার ফোন দিবেন দুইদিনের মধ্যেই, নাম্বার আপনার "সেক্রেটারীর" কাছে দিয়ে গেলাম।
সেক্রেটারীর খেতাব পেয়ে র্যাশ অবশ্য খুশি হল না মাইন্ড খেল সেটা ওর চেহারায় বোঝা গেল না। মক্কেল বিদায় হবার পর আমি বললাম, ডাবল মোগলাই নিয়া আয়।
বৃষ্টি এখন মুষলধারে অবিরাম। রা্স্তার খানাখন্দগুলো পানিতে ভরে গেছে।
রুস্তম শোবার এন্তেজাম করছিল।
ওর ঘরে গিয়ে আমি বললাম, রুস্তম!
রুস্তম একবার আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে বলল, বস?
আমি ওর রুমে ঢুকলাম। সিগারেটের ফিল্টারে ওর বিছানা হয়েগেছে। হাতের বিড়িটা জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে বললাম, কোপাইতে মনচায়?
রুস্তম আমার দিকে তাকিয়ে মুখ খুললো, কথা বেরুলো না।
আমি বললাম, মানুষের বাচ্চা, তোরে একশবার কইছি আমার সামনে মুখ খারাপ করবি না। মানুষের বাচ্চা কইলাম তোরে- এইটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ গালি।
কুত্তা বিলাই তোর মত মাইনষের থেইকা ভালো। সন্ধ্যার সময় যে কুত্তাগুলারে গাইল পারছিলি, ঐগুলা আইজকা তোর লগে শুইব। আদর কইরা নিয়া আসবি, গলা ধইরা শুইয়া থাকবি। একমাস শুবি। ডেইলি।
আর রাইতের বেলা কুত্তার মুখ দিয়া একটা সাউন্ড বাইর হইলে কোপ খাবি। কুত্তার বাচ্চার সাউন্ডে আমার ঘুমের নষ্ট হইলে তুই শেষ।
র্যাশের রুম থেকে বের হয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। মোবাইলের হেডফোনটা কানে দিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ভাবতে লাগলাম- রুস্তমরে টাইট টা মিডিয়াম হয়ে গেল কিনা।
[চাহিদা সাপেক্ষে চলবে ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।