আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে বৃষ্টিস্নান...

একট হাসি, অলস দুপুর, এক ফোঁটায় জলের পুকুর।

অবশেষে এই বর্ষায় আমার ভেজা হলো। হচ্ছিলোই না কেন যেন কিছুদিন ধরে। আজও হতো না। মেঘ করে যখন কালো হয়ে উঠলো, তখন আমি ফাও খানের সাথে ওটি'র ফাংশন নিয়ে ক্যাচাচ্ছি।

ক্লাস মোটামুটি ফাঁকা করে সব বারান্দায়। নিচের উঠোনে বাচ্চাগুলোর বৃষ্টি উৎসবের উদ্দাম আনন্দের কলকাকলি কোন ভাবে কানে চাপা দিয়ে আমি মনেযোগ দিলাম ইন পেশেন্ট ওয়ার্ডের ভেন্টিলেশনের দিকে। সেমিনারের পার্টনার মিশতু আছে আসেপাশেই। প্রিলি শেষ করে ওর সাথে বসতে হবে, বাংলাদেশের এনার্জি ক্রাইসিস নিয়ে গবেষণা করতে। মনটা খারাপ হয়েই যাচ্ছিলো।

দূর্দান্ত প্রিলিটার খুশি মাঠেই মারা পড়ছিলো প্রায়। স্যার আমার ওয়ার্ক স্টেশন থেকে বের হয়ে নিম্মির দিকে আগাতেই দেখি মিশতু বারান্দায়। বের হয়ে দেখি যা ভেবেছিলাম ঘটনা তার থেকেও খারাপ। ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি টের পেলাম মাথার ভেতরে তার গুলো শর্ট সার্কিট শুরু হয়ে গেছে।

মুনিয়া পাশে এসে দাঁড়ালো, চল। শুধাই, মানে?? - ভিজবি না?? ওর কনফিডেন্স আমার সেল্ফ কন্ট্রোলকে টক্কর দেয়। - নারে, সেমিনার করতে হবে, আর শনিবার প্রিলি, এখন রিস্ক নিবো না? মুনিয়ার বিস্ময় আমারেও বিস্মিত করে। সিমি এসে দাঁড়ায় আরেক পাশে, কি রে তুই ভিজবি না? আমার চেহারার কনফিউশন ওকেও কনফিউজড করে দেয়। নুসরাত আর তেষা আসার পরে বুঝলাম, নাহ, এ যাত্রা আর হলো না।

অন্য কোন দিন নিজের সেল্ফ কন্ট্রোল পরীক্ষা করা যাবে। মিশতুকে গিয়ে বললাম, ভিজবে? মানা করতেই মোবাইলটা ধরায় দিয়ে ছুটে নিচে নেমে গেলাম। সেই প্লিন্থ, সেই উঠোন, সেই আমরা আর বৃষ্টি। ডিপার্টমেন্টে বৃষ্টি হয়েছে আর আমি ভিজিনি এমন হয়নি। এমনকি, জুনিয়রদের যেদিন নবীন বরণ করি, সেদিনও বৃষ্টি হয়েছিলো এবং যে এক বান্দা ভিজেছিলো সে আমি।

আজ দেখলাম কই থেকে একটা ফুটবল যোগাড় করে খেলছে ওরা। রাশেদ ভাই আর ডিউক ভাই দাঁড়ানো প্লিন্থে। ঈর্ষান্বিত চোখে জুনিয়রদের হুল্লোড় দেখছে। আরো খেপাতেই বললাম, আর্কিটেক্ট হলে ভেজা যায় না, ভিজতে হলে স্টুডেন্ট হতে হয়। ক্যাফে থেকে আদবানা আর মম এসে যোগ দিলো সাথে, আদবানা তো দূর থেকেই চেঁচাচ্ছে,নাহিন কই? আমি হেসে হাত নাড়তেই ছুটে এলো- আমি জানতাম।

একসাথে পেছনের উঠানে রওনা দেই। ০৫ এর করা সিটিংটায় বসে শুরু হয় আমাদের বৃষ্টি ভেজা আড্ডাফাই। খানিক পরেই চায়ের তেষ্টা পেতেই সব টীচার'স ক্যান্টিনের পাশে। বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা কে দুই কাপ বানায় খেতে খেতে নানান সে আমাদের আবিষ্কার বৃষ্টি নিয়ে- যেমন নুসরাত এতই শুকনা যে বৃষ্টি পর্যন্ত ওকে ভেজাতে পারেনি। এই খান থেকে আমরা বৃষ্টির দুই ফোঁটার দূরত্ব কেমনে মাপা যায় সেই গবেষণা শুরু করতে নিলাম, বের হলো ড্রাইভিং রেইনের জন্য তেষার চা ছলকে উঠে ওর মুখ ভিজিয়ে দিচ্ছে।

এরকম হরেক গবেষণামূলক আড্ডা আর চা য়ের ফাঁকে কি করে যেন পায়ে পায়ে আরো গোটা ছয়জন হাজির হলো আমাদের বৃষ্টি ভেজা কাকেদের সাথে। ৫টা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে আমরা উদযাপন করলাম আমাদের শেষ বর্ষের প্রথম বর্ষণ, প্রথম বৃষ্টিস্নান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।