...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
কাল রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যাবে। এখানে প্রতিটা বাড়িই দোতালা বা তিন তলা। হাই রাইজ কিছু আছে। কিন্তু বাকিটা ওই এক, দু বা তিনতলা।
দেশেও এখন বর্ষাকাল। হয়তো দিনের শেষে অফিস ফেরত মানুষ যখন ঘরে ফেরে তখন আকাশ কালো হয়ে আসে। তারপর ঘরে ফেরার পর লোড সেডিং। হয়তো অফিস থেকে ঘরে ফিরতে দশ মিনিটের পথ রাস্তার জ্যামে এক ঘন্টা লেগে যায়। ঢাকার পথঘাট অল্প বর্ষায় কাদা মাখামাখি অবস্থা।
আমি ভাবি, তবুও ভালো। পথের পাশে তো মামার চায়ের দোকান পাওয়া যায়। পথের ভিখারীটা তো বাংলায় ভিক্ষা চায়। অল্প কয়েদিনের জন্য হলেও অফিসের কাজে দেশের বাইরে এসে এটাই আমার অনুভূতি। আমি এখন আফ্রিকায়।
কালো মানুষের দেশে। জুলে ভার্নের নাইজারের বাঁকে। নাইজেরিয়া। যে দেশটাকে আগে কেবল চিনতাম ফুটবলের দেশ বলে। বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার খেলা কে না দেখেছে।
সেই নাইজেরিয়ার প্রাচীন রাজধানী লাগোস। সেখানে এসেছি অফিসের কাজে।
সবসময় ভাবতাম দেশের বাইরে যারা আছে তারা কতো ভালো আছে। দেশটা নাইজেরিয়া হলেও এখানে আমি অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। চারতারা হোটেল, গাড়ি, সুইমিং পুল, এসি রুম আর অনেকগুলো ডলার।
কিন্ত কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয় কি যেন নেই। যেটা নেই, সেটা হলো, বাংলাদেশ। নিজের দেশ ব্যাপারটা অনেক বড়। অনেক।
আমার সাথে অনেক দেশের মানুষ কাজ করে। একই হোটেলে আছি পাকিস্তানের নাদিম ভাই, উগান্ডার সেমপা, কিছুদূরে ভারতের আনিশ, আনসাল, ইন্ডিয়া ক্রিকেট টিমের মুরালী কার্তিকের বাবা কেকে। সবার মাঝেই একটা জিনিস দেখি, সবাই ভাবে কবে দেশে যাবো। আর সবারই দেখলাম ল্যাপটপের টাইম যার যার দেশের টাইম সেট করা। ঠিক আমার মতো।
সবাইই তার দেশকে এতো ভালোবাসে। তাই দীর্ঘ দিন এদেশে সেদেশে করে অনেক ডলার কামানোর পরও নাদিম ভাই ভাবে সে একদিন নেজের দেশে গিয়ে স্থির হবে। সত্যি কথা, নিজের দেশের বাইরে কিছু নেই। যারা দেশের বাইরে থাকেন, কিছুটা হলেও তাদের মনের কষ্টটা এখন বুঝি। সবই আছে।
কিন্তু নেই পরিচিত ভাষা, খাবার, প্রিয় মানুষ গুলো। তাই ডলারের উপর ঘুমিয়েও মানুষগুলো শান্তি পায় না।
এদেশে এসেছি বেশ কিছু দিন হলো। কালো মানুষের দেশ। তবে দেখলাম এ শহরের সবাই ইংরেজীটা খুব ভালো বুঝে।
এখানে আসলে অনেক ভাষা প্রচলিত। তাই সবাই ইংরেজীটাকেই কমন ভাষা হিসেবে ব্যাবহার করে। দেশটা পৃথিবীর বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের যোগানদানকারী দেশগুলোর অন্যতম। কিন্ত উন্নতি বলতে তেমন কিছু হয় নি। কারন তেল সম্পদের সবই নিয়ে যায় অন্যদেশ।
আর দুর্নিতী পরায়ন দুর্বল সরকার সেটাকে মদদ দেয়। ভয় হয় আমাদের দেশের গ্যাসেরও না এই অবস্থা হয়। দেশটা স্বাধীন হয়েছে অনেক আগে। কিন্ত গনতন্ত্রে পদার্পন করেছে মাত্র দশ বছর। তাও খুব দুর্বল গনতন্ত্র।
জনসংখ্যায় আমাদের কাছাকাছি, কিন্তু আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়।
এখানে এসে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরেছি খাবার নিয়ে। এরা সব খাবারে শুটকি দেয়। আর তেলটা ঠিক আমাদের দেশের তেলের মতো না। একটু গন্ধ।
প্রচুর তেল আর ঝাল দিয়ে যা রান্না করে বেশীর ভাগই খেতে পারি না। এক প্লেট সাদা ভাত আর একটু আলু ভর্তার জন্য তাই মন কাঁদে। এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। প্রচুর। এই যেমন কাল রাতে হলো।
দেশেও এখন বৃষ্টি হচ্ছে কি? আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি। কৃষ্ঞচূড়ার গাছ কাঁপিয়ে বৃষ্টি। রমনা, টি এস সি কাঁপিয়ে বৃষ্টি। অফিস শেষে বাসের ভীড়ে অতিষ্ট মানুষকে আরো অতিষ্ট করে আসা বৃষ্টি। নিজের দেশের চেয়ে ভালো আসলেও কি কিছু আছে।
এখানে কালো মানুষের মুখ, অফিসের কাজ, হোটেলের আরাম সব কিছু ছাপিয়ে তাই চোখে ভাসে ঢাকার পথ ঘাট। যেখানে রেখে এসেছি প্রিয় মানুষ গুলো। মা,বাবা,বোন, পরিচিত জন আর একটা প্রিয় মুখ।
আর, আমার বাংলাদেশ।
বি.দ্র. অনেকদিন কিছু লিখতে পারছি না।
নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ। তাই মাথায় কিছুই আসছে না। একটু গুছিয়ে নিয়েই আবার লেখা শুরু করবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।